লেখকঃ মোঃ শাহরিয়ার
শিক্ষা লাভের উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের বুঝতে হবে এটা কী, কত প্রকার হতে পারে এবং কেন।
মুলত শিক্ষা বলতে সবচেয়ে সহজ ভাষায় যা বুঝি– কোনো কিছু শেখা,শেখানো বা শিখতে পারা।
শিক্ষাকে আমি দুটো শ্রেণিতে ভাগ করব।প্রথমত,আচরণগত বা বাহ্যিক । দ্বিতীয়ত, একাডেমিক।
বাহ্যিক বা আচরণগত শিক্ষার বিষয় টার আগে চলুন প্রথমে আমরা একাডেমিক শিক্ষার বিষয়ে একটু জেনে নেই।
খুব সহজ ভাষায় আমরা যা বুঝি,আমাদের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক থেকে আহরিত বা অর্জিত জ্ঞানই একাডেমিক শিক্ষা। যা থেকে আমরা ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হবার জন্য শিক্ষার একটা স্তর পাড় করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।এবং এই ফলাফলের ভিত্তিতে চাকরির বাজারে প্রবেশ করি।চাকরির বাজার বললাম এজন্য যে,আপনি বাজারে গেলে টাকা খরচ করে কখনোই চাইবেন না পঁচা মাছটা কিনতে। অবশ্যই তাজা মাছটাই আপনি কিনবেন।তেমনি চাকরিক্ষেত্রেও আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী আপনি ভালো কিছু করতে চাইবেন বা আশা করেন।
এবার বাহ্যিক বা আচরণগত শিক্ষার ব্যাপারে একটু জানা যাক।যে শিক্ষা আমাদের কথা বলা,চলাফেরা, ওভারঅল আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করে সেটাই আচরণগত শিক্ষার বিষয়। বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলব,ছোটদের সাথে কেমন আচরণ করব,রাস্তায় চলতে ফিরতে কেমন আচরণ হবে সেসবই।মূলত একাডেমিক শিক্ষাটা জোর করে শেখানো বা গেলানো গেলেও আচরণগত শিক্ষাটা জোর করে শেখানো সম্ভবনা।আর হুট করে তো কখনোই সম্ভব না।
এবার চলুন শিক্ষা লাভের উপায় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
প্রথমেই একাডেমিক শিক্ষা লাভের উপায় সম্পর্কে জানব।
*শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হবে। আপনি তখন শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে উঠবেন। তাছাড়া যোগাযোগ দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে। ভালো পড়ুয়া বন্ধুর সঙ্গ পেলে পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগী হওয়া যায়।
*নিয়মিত ক্লাস এ অংশ নিন।ক্লাসে বিভিন্ন টপিকে আলোচনায় অংশ নিন।এতে ভাষার প্রতিবন্ধকতা যেমন দূর হবে তেমন মনোভীতি দূর হবে,দেখবেন আপনার মন থেকে পাথর নেমে গেছে।তাছাড়া শিক্ষকরা ক্লাসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।মাঝে মাঝে এমন কিছু তথ্য দেন যা বই পড়ে অর্জন সম্ভব না।পরীক্ষা ও ফলাফল এর ক্ষেত্রে নিয়মিত ক্লাস করার একটা ভালো প্রভাব ফেলে।যা আপনাকে পরবর্তীতে ভালো কিছু অর্জনে সহায়তা করবে।
*ক্লাসে কোনো টপিক না বুঝলে সেই টপিক টা খাতায় টুকে বা নোট করে রাখুন।শিক্ষকের পড়ানো শেষে তাকে সেই টপিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন।না বুঝলে বারবার বলুন, এতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না।কারণ আপনি শিখতে এসেছেন আর তারা শিখাতে এসেছে।ক্লাসে সময় না পেলে আলাদাভাবে শিক্ষকের সাথে সময় নিয়ে বুঝে নিতে পারেন।তবুও বুঝে নিবেন।
*ক্লাসে নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করুন। এসাইনমেন্ট বা কোনো কাজ থাকলে সময়মতো জমা দেয়ার চেষ্টা করুন।এতে আপনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।
*ক্যাম্পাসভিত্তিক কালচারাল ক্লাব,ডিবেট ক্লাব,স্পোর্টস ক্লাবের সাথে যুক্ত হতে পারেন।এতে আপনার এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস এ দক্ষতা থাকবে।যেকোনো ক্ষেত্রে তখন আপনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন।
★★এবার আসা যাক বাহ্যিক বা আচরণগত শিক্ষা নিয়ে।
একাডেমিক শিক্ষার বাইরেও একটা শিক্ষার জগৎ আছে।এ জগতটা আমাদের বাস্তবতা শেখায়।শেখায় কোন কাজটা ভালো কোন কাজটা মন্দ।শেখায় কোন কাজটা আপনি করবেন কি করবেন না।কার সাথে কেমন ব্যবহার করবেন তাও আপনার আচরণ এর উপর নির্ভর করে।আমরা চাই সবসময় ভালোটাই গ্রহণ করতে এবং ভালোটাই শেখাতে।
*পরিবার হলো আমাদের আচরণগত শিক্ষা দেয়ার প্রথম ধাপ বা প্রতিষ্ঠান (যেহেতু পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার)।পরিবার আমাদের ছোট থেকেই সবার সাথে ভালো ব্যবহার করার শিক্ষা দেয়।বড়দের সম্মান, শ্রদ্ধা আর ছোটদের স্নেহ করতে শিখায়। কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় সেসব শেখায়।
*ধর্মীয় দিক থেকেও আমরা আমাদের সেরা শিক্ষাগুলো অর্জন করতে পারি।যেমন-মিথ্যা না বলা। হোক সেটা হাসি বা আনিন্দের ছলে(আমরা অবশ্যই রাখাল বালক এর গল্পটা পড়েছি!যদি পড়ে থাকি তাহলে এ বিষয় এ আর অবগত করতে হবে না আশা করি।
তেমনই আরও কিছু গুণ অর্জন করতে পারি যেমন-পরনিন্দা না করা,গীবত না করা,দুস্থদের সহায়তা করা,কাজের লোকেদের সাথে ভালো ব্যবহার করা,শ্রমিকদের পারিশ্রমিক যথাসময়ে পরিশোধ করা,কাউকে কথা দিলে তা পালন করা, অন্যকে কষ্ট না দেয়া হোক তা মুখের কথা কিংবা হাত দ্বারা।তাছাড়া ক্ষমা ও জীবে দয়া করাও মহৎ গুণ। এসব গুণে গুণান্বিত হতে পারলে সকলের শ্রদ্ধাভাজন হওয়া যায়।
*সমাজে চলতে ফিরতে আমরা অনেক কিছু শিখি।আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয় সমাজের মানুষের সাথে চলাফেরা করতে করতে।কথা বলা,চলাফেরায় আলাদা একটা ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। যা মানুষের কাছে হয় গ্রহণযোগ্য করে না হয় তার উল্টো।
সার্বিকভাবে আমরা কোনো না কোনো উপায়ে শিক্ষা লাভ করি।এজন্যই বোধহয় বলা হয়,দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করো।আর মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে জ্ঞান অর্জন আবশ্যকীয়।