Thursday, November 21, 2024
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিআবিস্কারপ্রিন্টার আবিষ্কার এবং এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রিন্টার আবিষ্কার এবং এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মুদ্রণ শিল্পের আবিষ্কার না হলে এখনো আমরা অনেকেই অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার ব্যাপারে জানতে পারতাম না। এমনকি অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও আমাদের কাছে পৌঁছাতে হয়তো কয়েক শতাব্দী সময় লাগতো। অতএব আমাদের মুদ্রণশিল্পের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান রাখা প্রয়োজন।

◾মুদ্রণশিল্পের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:

১ম পর্যায়: উডব্লক প্রিন্টিং-

৬ষ্ঠ শতাব্দীর চীনে ট্যাং রাজবংশের শাসনামলে উদ্ভূত অনেকগুলো আবিষ্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো উডব্লক প্রিন্টিং। এই পদ্ধতিতে কাঠের ম্যাট্রিক্স-এর  উপর খোদাই করে তা কালিতে ডুবিয়ে কাগজের উপর ছাপ বসিয়ে মুদ্রণের করা হতো। উডব্লক প্রিন্টিং পদ্ধতিতে মুদ্রিত প্রথম বই হলো ‘Diamond Sutra’ (৮৬৮ খ্রি:)।

২য় পর্যায়: মুভেবল মুদ্রণ ব্যবস্থা-

এটি মুদ্রণশিল্পের অগ্রগতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং এসময়ও চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১০৪১-এ চীনা মুদ্রক বি শেঙ মাটির তৈরী চলন্ত মুদ্রণ ব্যবস্থার আবিষ্কার করেন। যদিও এর কিছু ত্রূটি ছিল যেকারণে সহজেই এটি ভেঙে যাবার সম্ভাবনা ছিল। পরবর্তীতে ১২৯৮ খ্রি: আরেক চীনা মুদ্রক ওয়াং ঝেন প্রিন্টিং এর ম্যান উন্নয়নের জন্য আরো শক্তিশালী কাঠের মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ১৫ শতকের দিকে ইউরোপে জোহান্স গুটেনবার্গ একটু ভিন্ন ধরণের চলমান মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন ঘটান। গুটেনবার্গের মুদ্রণ যন্ত্রে সর্বপ্রথম তেল- ভিত্তিক কালী ব্যবহার করা হয়, যা পূর্বে ব্যবহৃত পানি- ভিত্তিক কালির তুলনায় বেশি দীর্ঘস্থায়ী ছিল। এই মেশিনের টাইপিং এর অংশটুকু টিন, সীসা এবং এন্টিমনির সমন্বয়ে তৈরি বিধায় অন্য মেশিনের তুলনায় এর টাইপিং বেশি দৃঢ় হতো। ১৪৫৫ সালের ২৩ ফেব্রূয়ারি, দীর্ঘ ১ বছরের পরীক্ষা- নিরীক্ষা শেষে তিনি এই মেশিনের দ্বারা প্রথমবারের মতো বাইবেলের ১৮০ কপি প্রিন্ট করেন।

৩য় পর্যায়: রোটারি প্রিন্টিং প্রেস-

এই পর্যায়ে ১৮৪৩ সালে আমেরিকার রিচার্ড হোয়ে রোটারি প্রেসের আবিষ্কার করেন। প্রাথমিক অবস্থায় এই পদ্ধতিতে হাতে করে একটি একটি কাগজের শিট মেশিনে দিয়ে প্রিন্ট করতে হতো। পরবর্তীতে উইলিয়াম বুলক ১৮৬৩ সালে এমন একটি প্রেসের আবিষ্কার করেন যেটিতে একবারে একটি পেপার রোল মেশিনে দিয়ে দেয়া যেতো। এই ধরণের মুদ্রণযন্ত্রগুলো ঘন্টায় ৮০০০ পৃষ্ঠা মুদ্রণ করতে সক্ষম ছিলো যা তৎকালীন মুদ্রণ ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করেছিলো। উল্লেখ্য, ১৮৪৬ সালে রোটারি প্রেসের ব্যবহার শুরু হয় ফিলাডেলফিয়া পাবলিক লেজার মুদ্রণের মাধ্যমে।

৪র্থ পর্যায়: অফসেট প্রিন্টিং-

১৮৭৫ সালে রবার্ট বার্কলে ধাতব মাধ্যমে মুদ্রণের জন্য অফসেট প্রেসের প্রবর্তন করেন যা ১৯০৪ সালে ওয়াশিংটন রুবেল কাগজে প্রিন্টের জন্য ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতে প্রিন্টের জন্য পানি ও তেলের বিকর্ষণের বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয়।

অফসেট প্রিন্টিংয়ের সুবিধা হলো-

এর মাধ্যমে নিখুঁত এবং পরিষ্কার ছবি মুদ্রণ করা সম্ভব।

এই পদ্ধতিতে যেকোনো রকম কাগজ এমনকি অমসৃণ কাগজেও উন্নতমানের প্রিন্ট করা সম্ভব।

অফসেট প্রিন্টিংয়ের একমাত্র অসুবিধা হলো এর মেশিনটি অনেক বড়, যা রক্ষনাবেক্ষন যথাযথ সময় গুরুত্ব দিতে হয়। যেকারণে এই পদ্ধতি একটু ব্যয়বহুল কিন্তু বড় মাপের প্রিন্টিং কাজের জন্য যথার্থ।

৫ম পর্যায়: লাইনোটাইপ মেশিন-

১৮৮৫ সালে জার্মান বংশোদ্ভূত উদ্ভাবক ওটমার মেরজেন্টহেলার টাইপসেটিং মেশিন লিনোটাইপ তৈরি করেছিলেন। এটি অনেকটা টাইপরাইটারের মতো কাজ করতো। লাইনোটাইপ প্রিন্টিং স্বয়ংক্রিয় ছিলো বিধায় এটি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রিন্টিংয়ের গতি বাড়িয়েছিলো। ১৮৮৬ সালে এই মেশিনটি প্রথম ব্যবহার করা হয় নিউ ইয়র্কের সংবাদপত্র ‘নিউ ইয়র্ক ট্রিবিউন’ মুদ্রণের জন্য পরবর্তীতে ১৮৯৭ সালে ইতালির অন্যতম প্রধান দৈনিক ‘ট্রিবিউনা‘ মুদ্রণের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

৬ষ্ঠ পর্যায়: লেজার প্রিন্টিং-

১৯৭১ সালে জেরক্স কর্পোরেশন লেজার প্রিন্টিং পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিলো যার মাধ্যমে মুদ্রণের বিষয়বস্তু বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে সরাসরি কাগজে মুদ্রণ করা সম্ভব হয়েছিলো। এই ভারী, জটিল এবং ব্যয়বহুল লেজার প্রিন্টারটির সাথে বর্তমানকালের লেজার প্রিন্টারের অনেক পার্থক্য। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ক্যানন প্রথম ডেস্কটপ লেজার প্রিন্টার তৈরী করে। এটিও অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল ছিলো। এরপর ‘৯০ এর দশকের শুরু থেকে লেজার প্রিন্টার সবার জন্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এবং সময়ের সাথে এটি আরো সস্তা, বহনযোগ্য এবং কার্যক্ষম হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ পর্যায়: 3D প্রিন্টিং-

মুদ্রণশিল্পের সর্বশেষ এবং বর্তমান পর্যায় বা ধাপ হচ্ছে 3D প্রিন্টিং। ১৯৮৩ সালে চাক হাল যখন অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহার করে বার্নিশ শক্ত করতে চেয়েছিলো মূলতঃ তখন এই পদ্ধতিটির উদ্ভাবন হয়। তিনি তাঁর এই আবিষ্কারের নাম দিয়েছিলেন ‘স্টেরিওলিওগ্রাফি’। প্রাথমিক অবস্থায় এই প্রিন্টিংও অনেক ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন বহুল ব্যবহৃত মুদ্রণ পদ্ধতি। অর্থাৎ, জ্ঞান- বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে যুগে যুগে মুদ্রণশিল্পের বিকাশ ঘটেছে। আশা করি এর সাথে জড়িতরা আরো আধুনিক এবং কর্মক্ষম যন্ত্র বা পদ্ধতির উদ্ভাবন করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

1953 সালে প্রথম হাই স্পিড প্রিন্টার তৈরি করা হয়েছিল

কম্পিউটার প্রিন্টারের ইতিহাস 1938 সালে শুরু হয় যখন চেসের কার্লসন একটি শুষ্ক প্রিন্টিং প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন যা ইলেক্ট্রফটোগ্রাফি নামে পরিচিত হয় যা সাধারণত জেরক্স নামে পরিচিত, লেজার প্রিন্টারগুলির জন্য ভিত্তিপ্রতীক প্রযুক্তি আসে।

ইউনিসেক্স কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য 1953 সালে র্যামিংটন-রান্ড দ্বারা প্রথম হাই স্পিড প্রিন্টার তৈরি করা হয়েছিল।

ইয়ার্সের মূল লেজার প্রিন্টারটি 1969 সালে জেরক্স প্যালো আল্টো রিসার্চ সেন্টারে গড়ে ওঠে এবং নভেম্বর 1971 এ সমাপ্ত হয়।

জেরক্সের ইঞ্জিনিয়ার গ্যারি স্টার্কওয়েদার জেরক্স কপিয়ার টেকনোলজিকে লেজার প্রিন্টারের সাথে যুক্ত করার জন্য একটি লেজার মরীচি যোগ করেছেন। জেরক্সের মতে “জেরক্স 9700 ইলেকট্রনিক মুদ্রণ ব্যবস্থা, প্রথম জেনারোগ্রাফিক লেজার প্রিন্টার পণ্য, 1977 সালে মুক্তি পায়। 9700, মূল PARC” EARS “প্রিন্টারের সরাসরি বংশধর, যা লেজার স্ক্যানিং অপটিক্স, চরিত্র প্রজন্মের ইলেকট্রনিক্স, এবং পৃষ্ঠা বিন্যাস সফ্টওয়্যার, প্যারিস গবেষণা দ্বারা সক্রিয় করা বাজারে প্রথম পণ্য ছিল। “

আইবিএম প্রিন্টার

আইবিএমের মতে, “প্রথম আইবিএম 3800টি 1976 সালে উইলিসকোতে মিলওয়াকি, এফডব্লিউ Woolworth এর নর্থ আমেরিকান ডেটা সেন্টারের সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টিং অফিসে ইনস্টল করা হয়েছিল।” আইবিএম 3800 মুদ্রণ ব্যবস্থা ছিল শিল্পের প্রথম উচ্চ গতির, লেজার প্রিন্টার। একটি লেজারের প্রিন্টার যা 100 টিরও বেশি ছাপার গতির উপর পরিচালিত হয়-প্রতি মিনিট। এটি আইবিএম অনুযায়ী লেজার প্রযুক্তি এবং ইলেক্ট্রফটোগ্রাফি একত্রিতকারী প্রথম প্রিন্টার ছিল।

হিউলেট প্যাকার্ড

199২ সালে হিউলেট-প্যাকার্ড জনপ্রিয় লেজারজেট 4 মুক্তি পায়, প্রথম 600 600 ইঞ্চি ইঞ্চি রেজল্যুশন লেজার প্রিন্টার দিয়ে।

1 9 76 সালে ইঙ্কজেট প্রিন্টারটি আবিষ্কৃত হয়, কিন্তু 1 ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ইঙ্কজেটের জন্য হিউলেট-প্যাকার্ডের ডেস্কজেট ইঙ্কজেট প্রিন্টারের সাথে একটি ভোক্তা আইটেম হ’ল।

মুদ্রণ ইতিহাস

868 খ্রিস্টাব্দে চীনে মুদ্রিত “ডায়মন্ডস সূত্র” প্রাচীনতম তারিখের প্রিন্টেড বই। যাইহোক, এটি সন্দেহাতীত যে বইয়ের মুদ্রণযন্ত্রটি এই তারিখের আগে অনেক আগে হতে পারে।

জোহানেস গুটেনবর্গের আগে, প্রিন্টিংগুলি তৈরি করা সংস্করণের সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং প্রায় একচেটিয়াভাবে আলংকারিক ছিল, ছবি এবং ডিজাইনের জন্য ব্যবহৃত। ছাপানো পদার্থ কাঠ, পাথর, এবং ধাতু মধ্যে খোদাই করা হয়েছিল, কালি বা পেইন্ট সঙ্গে ঘূর্ণিত এবং চার্মা বা vellum চাপ দ্বারা স্থানান্তর। বইগুলি বেশিরভাগই ধর্মীয় আদেশের সদস্যদের দ্বারা অনুলিপি করা হয়েছিল।

গুটেনবার্গের একজন জার্মান কারিগর এবং উদ্ভাবক ছিলেন। গুটেনবার্গটি গুটেনবার্গের প্রেস জন্য সুপরিচিত, একটি উদ্ভাবনী প্রিন্টিং মেশিন যা চলমান প্রকারের ব্যবহার করে। এটি 20 শতকের পর্যন্ত মান অব্যাহত। গুটেনবার্গ মুদ্রণ সস্তা মুদ্রণ।

1886 সালে যন্ত্রটি রচনা করে লিটলাইটাইপের অটমার মার্গ্রেন্থলারের আবির্ভাবটি প্রিন্টিংয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ অগ্রগতি বলে মনে করা হয়, যেহেতু চলতি 400 বছর আগে চলমান প্রকারের উন্নয়ন।

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments