তারিকুল আমিন
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন একজন আরবের ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতা ও ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা।তিনি হলেন ঐশ্বরিকভাবে প্রেরিত ইসলামের সর্বশেষ নবী। যার উপর ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ হয়। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভব। রাষ্ট্র কি ধরনের হলে সমাজ ব্যবস্থা সুন্দর ও উত্তম হতে পারে তা নিয়ে যুগ যুগ ধরে চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবান মানুষ চিন্তাভাবনা করেছেন। মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রের ও সরকারের কি ধরনের সম্পর্ক হবে, আদর্শ রাষ্ট্রের রূপ কি হবে এ বিষয়ে চিন্তাবিদগণ তাঁদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন।
মধ্যযুগে মুসলিম দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞনী ও মনীষীগণ রাষ্ট্রচিন্তার উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিলেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আল ফারাবী,ইমাম গাযযালী, ইমাম আবুহানিফা, ইবনে খালদুন, ইবনে রুশদ ও ইবনে সিনার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব চিন্তাবিদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানে ইসলামী ও মুসলিম রাষ্ট্রদর্শন পরিপুষ্ট হয়ে উঠে। ইসলামী রাষ্ট্রদর্শনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছিল হযরত মুহাম্মদ (স:) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে। কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্রদর্শনই ইসলামী রাষ্ট্রদর্শন। মনে করা হয় যে,মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক, অথাৎ সার্বিক মুক্তির জন্য ইসলামী রাষ্ট্রদর্শনের গুরুত্ব অপরিহার্য। শুরু থেকেই ইসলাম ধর্ম, শ্রেণী বৈষম্য দূর করে মানুষকে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার দিকে উদাত্ত আহবান জানিয়েছে।
রাজনীতি একটি বহুমুখী শব্দ। আমি বলবো রাজনীতি আর ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। কারণ “ধর্ম আর রাজনীতি রাষ্ট্রের অংশ, এ দুটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয় এবং রাষ্ট্রের বাইরে কল্পনা করা যায় না”। আমি মনে করি “রাজনীতি যেমন একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান, তেমনি ইসলাম ধর্ম পৃথিবীর সকল মানুষের সমবায় নীতিতে বিশ্বাসী”। ইবনে সিদার মতে, বিষয়াবলির ব্যবস্থাপনা করাই হল সিয়াসাত বা নীতি বা রাজনীতি। হযরত মুহাম্মাদ (সা) মদিনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল বনু আওস ও বনু খাজরাজ। তিনি তার দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেছিলেন। মদিনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদিনা সনদে স্বাক্ষর করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদি গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনু নাদির)। সে সময় মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। এই সনদের মাধ্যমে মদিনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মাদ হন তার প্রধান। যে সকল মদিনাবাসী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মুসলিম মুহাজিরদের আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেন তারা আনসার (সাহায্যকারী) নামে পরিচিত হন।
৬২২ খ্রিস্টাব্দে নিজ নবুয়াতের দাবির স্বীকৃতি হিসাবে মুহাম্মদকে মদীনা
শহরে শাসন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ সময় আউস এবং খাজরাজ
গোত্রের ¯’ানীয় আরব উপজাতিরা এই শহরটিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং
তাতে নিয়মিত সংঘাত সংঘর্ষ চলমান ছিল। মদিনার অধিবাসীরা হযরত
মোহাম্মদ (সা.) এর মাঝে একজন নিরপেক্ষ বহিরাগত দেখতে পেয়েছিলেন।
মুহাম্মদ এবং তাঁর অনুসারীরা এভাবে মদিনায় চলে যায়, যেখানে মুহাম্মদ
মদীনার সনদ খসড়া করেছিলেন। এই দলিলটি মুহাম্মদ কে শাসক হিসেবে
পরিণত করে এবং তাকে আল্লাহর নবী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। মুহম্মদ তাঁর
শাসনকালে কুরআন ও নিজ কর্মের উপর ভিত্তি করে আইন প্রতিষ্ঠা করে, যাকে
মুসলমানরা শরিয়া বা ইসলামী আইন হিসাবে বিবেচনা করে, যাকে বর্তমান
সময়ের ইসলামী আন্দোলনগুলো প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। মুহাম্মদ একটি
বিস্তৃত অনুসারী দল ও সেনাবাহিনী অর্জন করেছিলেন এবং কূটনীতি ও
সামরিক বিজয়ের সংমিশ্রণের মাধ্যমে তার শাসন প্রথমে মক্কা শহরে এবং এরপর
আরব উপদ্বীপের মাধ্যমে প্রসারিত হয়।
আমরা যদি লক্ষ্য করি যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ বিশ্বের জাতিসমূহের
একটি সংগঠন, যার লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন, নিরাপত্তা,
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে
পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র
জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর এই
শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ
(সা.)। তবে যুগ যুগ ধরে নবী মোহাম্মদ এর দেখানো নীতি গুলো অনুসর করে
সবাই। তবে কাজে লাগাতে পাওে না বিদায় আজ মুসলিম শাসন বিলুপ্ত।
মানবতার জয় এসেছিল ইসলামের হাত ধরেই।
প্রচলিত ধারণায় ইসলামকে যেরূপ ভাবা হয়, আসলে ইসলাম সে ধরণের কোন
ধর্ম নয়। ইসলাম ধর্মকে যারা নিছক কতিপয় আচার-অনুষ্ঠান, ভাবাবেগ ও
কিছু বিশ্বাসের সমষ্টি মনে করে থাকেন, প্রকৃত পক্ষে ইসলাম তেমনটি নয়।
বরং এমন ধারণাই তাদেরকে মহা বিপদগামী করেছে। ইসলাম হ”েছ একটি
পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই সমস্ত কর্মপরিসরে এর ব্যাপকতা
বিরাজমান। সমগ্র মানবতার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,
সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকসহ সকল ক্ষেত্রেই ইসলামে রয়েছে নিখুঁত
নীতিমালা। যে নীতিমালার মূল হ”েছ আল কুরআন ও হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর
আদর্শ। কুরআন আমাদের এই শিক্ষা প্রদান করে যে, ইসলাম শুধু প্রচারের জন্য
নয়, বরং অনুশীলন করে তা বাস্তবায়নের জন্য। সঠিকভাবে একে উপ¯’াপন করে
সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে।
রাজনীতির সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, আল্লাহর জন্য রাজনীতি ইসলামের
অবি”েছদ্য অংশ। ইসলাম ও রাজনীতি মিলে হয় এক অবিভাজ্য সত্তা। মুসলমানরা
রাজনীতিকে ইসলাম থেকে বি”িছন্নভাবে গ্রহণ করতে পারে না। কারণ রাষ্ট্রের
প্রকৃতি, সরকারের প্রকারভেদ, শাসকের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও শাসিতের অধিকার
ইত্যাদি। এ সবকিছুই ইসলামী শরীয়তের নীতিমালার আওতাধীন থাকার কথা বলা
হয়েছে। কেননা, এর মাধ্যমেই রচিত হবে মানুষের পরকালীন সীমাহীন জীবনের ফয়সালা। এ পৃথিবীর কোন কিছুই লাগামহীন করার অধিকার আল্লাহ তায়ালা
কাউকেই দেননি। আল্লাহর বিধান পূর্ণাঙ্গভাবেই মানতে হবে। সেক্ষেত্রে
পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উভয় জীবনই সাজাতে হবে ইসলামের আলোকে। উভয়েরই
অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে ইসলামে। কাজেই দুনিয়াবী জীবনের সাথে
আধ্যাত্মিক জীবনের সমন্বয় থাকতে হবে। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি অর্জন
করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। পার্থিব জীবনের কর্মকাÐের ভিতর দিয়েই
আধ্যাত্মিক জীবন অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ ইসলামকে সেভাবেই
সাজিয়েছেন।
১৯২৪ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক
অঙ্গনে বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে মুসলিম
বিশ্বের রাজনীতিতে বিবেচ্য বিষয় ছিলো পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা
করা এবং ইসলামী রাষ্ট্রসমূহে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করা। ছয় দিনের যুদ্ধে
আরব বাহিনীর পরাজয়, স্নায়ু যুদ্ধের সমাপ্তি ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত
রাশিয়ার পতন ইত্যাদি রাজনৈতিক ঘটনাবলি ইসলামী আন্দোলন সংগ্রামের
আবেদনকে বেগবান করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যব¯’ার প্রতি অনা¯’াস্বরূপ
মুসলিম বিশ্বের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে
যা”েছ।
আধুনিক রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রচলনের ব্যাপকতার কারণে সেগুলো মুসলিম
সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন অঞ্চলসমূহে ইসলামের প্রভাবে ও সংমিশ্রণে বিভিন্ন
মাত্রার মিশ্র রূপ লাভ করেছে। ইসলামী আলেমগণ একমাত্র প্রথমত খেলাফত ও
দ্বিতীয়ত মুসলিম রাজতন্ত্রকে ইসলামী বৈধ রাজনৈতিক ব্যব¯’া বলে দাবি করেন।
এবং বাকি রাজনৈতিক ব্যব¯’াগুলোকে হারাম বলেন। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার
জন্য মুসলিমদের ক্ষমতায় যাবার পথ হিসেবে সেগুলো ব্যবহার করাকে বৈধ বলে রায়
দেন।
বর্তমানে বহু সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপš’ী বা ইসলামী গণতান্ত্রিক দল মুসলিম
সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই বিদ্যমান। অনেক জঙ্গি
ইসলামী গোষ্ঠীও বিশ্বের বিভিন্ন ¯’ানে কাজ করছে। পাশাপাশি কিছু
অমুসলিম ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতিপয় জঙ্গিবাদী ইসলামী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও
ধর্মীয় দর্শনের বর্ণনা দেওয়ার জন্য “ইসলামি মৌলবাদ” নামক একটি
বিতর্কিত শব্দের উদ্ভাবন করেছেন। এই উভয় পরিভাষাই (ইসলামী গণতন্ত্র এবং
ইসলামী মৌলবাদ) পৃথক ইতিহাস, মতাদর্শ এবং দৃষ্টিকোণের অধিকারী
বিভিন্ন দল-উপদলের এক বিশাল গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।
পাশ্চাত্য পÐিতদের অভিমত যদি লক্ষ্য করি। মাইকেল কুক তার “মুহাম্মদ” নামক
বইতে মন্তব্য করেন যে, যদিও কুরআন রাজনীতি নিয়ে কোন কথা বলেনি, তবে
এতে নিপীড়িতদের, দেশত্যাগ, মুসলিম সম্প্রদায় এবং আল্লাহর পথে লড়াই করার
ধারণার উল্লেখ রয়েছে, যার রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে।
ইসলামের রাজনৈতিক শিক্ষা সীমিত হওয়ার কারণ হল, কুরআনে “কোন
আনুষ্ঠানিক ও অব্যাহত কর্তৃত্বের কাঠামো’র ব্যপারে উল্লেখ করা হয়নি,
এতে কেবল নবীকে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এর মূলভাবের
রাজনৈতিক ব্যবহার ছিল সে সময় অত্যন্ত সীমিত। যখন কিনা বিভিন্ন শহর
আর দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এক বিস্তৃত কৃষক-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের শাসনকার্য
পরিচালনাই যে ইসলামের সাফল্য হতে পারে তা মরুভূমির যাযাবর মানুষের
ধারণাতীত ছিল।
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মুহাম্মদকে একজন আদর্শ আইন
নির্মাতা এবং মহামানব আখ্যা দিয়ে মুহাম্মাদ এবং ইসলামের ভূয়সী
প্রশংসা করেন। ইতিহাসবিদ টমাস কার্লাইল এবং উইলিয়াম মন্টমেগেরি
ওয়াট তাদের নিজ নিজ বইয়ে মুহাম্মাদকে ইতিহাসের একজন অন্যতম
প্রভাবশালী ইতিবাচক সংস্কারক হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া মাইকেল এইচ.
হার্ট তার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একশ মনীষী নামক জীবনীগ্রšে’ মুহাম্মাদকে প্রথম
স্থানে রেখেছেন।
ইসলামের সঠিক জ্ঞান না থাকলে বর্তমান সমস্যা জর্জরিত অব¯’া থেকে
উত্তরণের পথ পাওয়া যাবেনা। শুধু আবেগ দিয়ে ইসলামকে বুঝা যায় না, বাস্তব
জ্ঞানের সাথে তার সঠিক প্রয়োগ থাকতে হয়। সঠিক ইসলাম বাস্তবে রূপ
দেয়ার ক্ষমতা কুরআনুল কারীমে সূরা হজ্জের ৪১ আয়াতে মুসলিম রাষ্ট্রনায়কদের
হাতে ন্যাস্ত করা হয়েছে। তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে
জাতির বিপর্যয় অবশ্যসম্ভাবী। আর সেটাই আমরা লক্ষ্য করছি। আজ মুসলিম
জাতি অবহেলিত। এ অব¯’ায় ইসলামকে যে যার মত করে ব্যাখ্যা করে পরিবেশ
আরো ঘোলাটে করেছে। আর এ সুযোগে ইসলামের দুশমনেরা ইসলামকে আরো
বিকৃতভাবে তাদের শক্তির বলে মুসলমানদের নিকট উপ¯’াপন করছে। বিকৃত
ইসলাম মেনে চলতে তারা বাধ্য করছে। তাদের কথা যারা মানবে তাদেরকে নানা
ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করা হ”েছ।
এ পরি¯ি’তিতে যে যার মত করে ইসলামকে সাজিয়ে নিয়ে সবাই সঠিক
ইসলাম মানছে বলে দাবী করবে। ফলে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে পরস্পর পরস্পরে
কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হয়ে বি”িছন্ন হয়ে যা”েছ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়
অধিষ্ঠিত নেতৃবৃন্দ প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ইসলামের দুশমনদের সহযোগিতায়
নিজের জাতিকে সর্বনাশ করছে। যার বাস্তবতা আজকের মুসলিম বিশ্ব। সঠিক
ইসলামের পথে মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিš‘
রাষ্ট্রই যদি ইসলাম প্রতিরোধে বিজাতীয়দের সহযোগিতা নেয়, তাহলে
ময়দানে যে যার মত করে যতই ইসলামের খেদমত করুক না কেন তাতে কাঙ্খিত ফল
কোন দিন আসবে না। এ পরি¯ি’তিতে ওয়াজ-নসিহত অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়
পরিণত হয়েছে। আর সঠিক ইসলামী পš’ীদেরকে হত্যা করে বিজাতি বন্ধুদের
খুশী করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যস্ত থাকবে। তখন তাওহীদের পতাকা সমুন্নততো হবেই না
বরং আরো অবদমিত হতে থাকবে। যেটা আল্লাহ তায়ালা মোটেই সহ্য করবেন
না। আল্লাহ তায়ালার রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারী, “(অমান্যকারীদেরকে) বলে দাও-
আমিতো প্রকাশ্য সতর্ককারী। এটা ঠিক তেমনি ধরণের সতর্কীকরণ যেমন
সেই বিভক্তকারীদের দিকে আমি পাঠিয়েছিলাম। যারা নিজেদের কুরআনকে
খÐবিখÐ করে ফেলে। তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস
করবো। তোমরা কি কাজে নিয়োজিত ছিলে?” সূরা হিজর ৮৯-৯৩।
যারা নানা ফতোয়া দিয়ে ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যব¯’া কায়েমে মোটেই
আগ্রহী ও তৎপর নয়। তারা আল্লাহর নিকট কি জবাব দিবেন? নিরাপদ দূরত্ব
বজায় রেখে নিজেকে সঠিক ইসলামের ধারক-বাহক বলে দাবী করা যতটা সহজ,
আল্লাহর আদালতে জবাব দেয়াটা এত সহজ হবে না। আজ ইসলামী রাজনীতি ও
রাষ্ট্র ব্যব¯’া বাতেলের রোষানলে থাকার পরেও যাদের কোন চৈতন্যদয় হ”েছ না, তারা
আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবেন? আজকে যারা ইসলাম মানি, তাওহীদ মানি
কিš‘ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাগুতকে মেনে নিশ্চিন্তে বসে আছি। ভুলে গেলে চলবেনা,
মুসলমান হতে হলে প্রথমেই তাগুত ও তাগুতী আইনকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
তাগুতী নেতৃত্ব ও আইন মিল্লাতের ঈমান-আকীদাসহ দেশ ও জাতির সর্বনাশ
করছে। কোথাও শান্তির লেশমাত্র নেই। মুসলমানদের শক্তিহীনতার কারণ কি? কেন
এমন হলো বীরের জাতির। এখান থেকে জাতিকে উদ্ধার করার দায়িত্ব কার? বিশ্বে
কি মুসলমান নেই? কুরআন সুন্নাহ কি হারিয়ে গেছে? কেন হলো এমন
দশা। ঐতিহাসিক ক্রম বিবর্তন ও পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ইবনে খালদুন মন্তব্য
করেছেন যে, কুরআন ও মহানবী (সা.) উপ¯’াপিত যে সত্যাশ্রয়ী ইসলামী শাসন
পদ্ধতি ছিল, তা হতে প্রচলিত শাসনব্যব¯’া বহুদূরে সরে গেছে। যার ফলেই বিশ্বে
আজ আবার জাহেলিয়াত মাথাচাড়া দিয়ে মানবতা ধ্বংস করছে। এর থেকে
পরিত্রাণ পেতে মুসলমানদেরকে অবশ্যই কুরআনী শাসন প্রতিষ্ঠায় ইসলামী
রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মুহাম্মাদের সমালোচনা ৭ম শতাব্দী থেকে-ই বিদ্যমান ছিল। একেশ্বরবাদ প্রচারের
জন্য তার অমুসলিম আরব সমসাময়িকরা তাকে একাধিকবার ধিক্কার দিয়েছিলো।
তারা মুহাম্মদ এর বিরুদ্ধে পরিসংখ্যানের অযৌক্তিক ব্যবহার, ইহুদি বিশ্বাসের
অপব্যবহার, এবং কোনো প্রকার অলৌকিক কাজ না করে ও নিজেকে নবি দাবি
করার অভিযোগ করতো। একজন নবি হওয়ার দাবিতে মুহাম্মদের আন্তরিকতা, তার
নৈতিকতা, তার ক্রীতদাসদের মালিকানা, শত্রæদের সাথে তার অমানবিক আচরণ, তার
বিবাহ, মতবাদের বিষয়ে তার আচরণ এবং তার মানসিক অব¯’া সম্পর্কে
আধুনিক ধর্মতাত্তি¡ক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে তার সমালোচনা হয়েছে। শত
সমালোচনা হওয়া স্বত্তেও মুসলিম একটি সাম্যবাদী জাতিতে বিশ^াসী
হিসেবে বিবেচিত। কারণ ইসলামে সকল পেশা, সকল শ্রেণি, সকল ধর্মের
মানুষকে সমান ভাবে শ্রদ্ধা করতে শিক্ষা দিয়েছেন। আর এই শিক্ষা দিয়েছেন
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)। তবে এখন আমাদের কিছু জ্ঞানহীন
মানুষের জন্য ইসলাম আজ হাসির পাত্রতে পরিণত হয়েছে। তবে যুুগ যুগ শত শত
নীতি আসবে আবার বিলুপ্ত হবে। তবে সমগ্র বিশে^ উজ্জ্বল রবি হয়ে থাকবে
হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর রাজনৈতিক দর্শন।
তারিকুল আমিন
প্রাবন্ধিক, গল্পকার, অভিনেতা, আবৃত্তি শিল্পী।