Saturday, July 27, 2024
spot_imgspot_imgspot_img
Homeসম্পাদকীয়নতুন শিক্ষাক্রমের ফান্ডামেন্টাল নীতিতেই গলদ

নতুন শিক্ষাক্রমের ফান্ডামেন্টাল নীতিতেই গলদ

লেখকঃ কামরুল হাসান মামুন

নতুন শিক্ষাক্রমের ফান্ডামেন্টাল নীতিতেই গলদ। সেই গলদ নিয়ে প্রতিবাদ না করে সেই গলদের ভিত্তিতে গৃহীত কর্মের প্রতিবাদ চলছে। একটি বইয়ে একটি বিখ্যাত ওপেন সোর্সের কিছু অংশ অনুবাদ (গুগল ট্রান্সলেট) করে বইয়ে ছাপিয়ে দিয়েছে। এই কন্টেন্টে কি কোন ভুল আছে? একদম না। শিক্ষার্থীরা এইটা পড়ে কোন ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। জুনিয়র লেভেলের স্কুলের টেক্সট বই কোন গবেষণা প্রবন্ধ না তাই কখনোই রেফারেন্স দেয়া হয় না। কোথাও না। তাহলে রেফারেন্সের কথা আসলো কেন। এইটা লেখকের দায়িত্ব। এইটা ধরে নেওয়া হয় স্কুলের বইয়ের লেখক যিনি হবেন তিনি নৈতিকতার দিক থেকে অনন্য। এই লেভেলের লেখকের কাছ থেকে তার নতুন আবিষ্কারের জিনিস বইয়ে লেখা হবে এই আশা নিশ্চই করিনা। এই লেভেলের বইয়ে একদম সর্বজন গৃহীত বহুল ব্যবহৃত বিষয়কে লেখক তার নিজের ভাষায় সাবলীল করে লিখবেন বলে ধরে নেওয়া হয়। ওই একই কনটেন্ট যদি একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুন্দর ও সাবলীল করে লিখতেন কেউ প্রশ্ন তুলতে পারতো না।

লেখক গুগলের অনুবাদকেই যথেষ্ট মনে করেছিলেন আর এইখানেই গলদ। এইটা ঠিক হয়নি। তবে আমাদের জোরালো প্রতিবাদ হওয়া উচিত কাররিকুলামের দর্শন ও আদর্শ নিয়ে। নতুন শিক্ষাক্রমে যে আমরা বিজ্ঞানকে বামন বানিয়ে ফেলতে যাচ্ছি সেটার সুদূরপ্রসারী ক্ষতি কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি? নবম ও দশমশ্রেণী থেকে উচ্চতর গণিত একদম উঠিয়ে দিয়ে, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও রসায়নের সাথে প্রযুক্তি ঢুকিয়ে বিজ্ঞান নামক একটি বিষয় পড়ালে আমাদের সন্তানেরা কি একুশ শতকের বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম হবে? পাশাপাশি একই দেশে ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়বে তারা ঐসব বিষয়ে অধিক পড়বে এবং অধিক জানবে ফলে একই দেশে দুই মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ফারাক বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা ধনী গরিবের বৈষম্য আরো বাড়িয়ে দিব না? বলদের দল আলোচনা হওয়া উচিত এইটা নিয়ে।

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এখানে আলোকপাত করতে চাই। বইয়ের অনুবাদ কিভাবে হলো তার চেয়েও অধিক ক্ষতিকর জিনিস যে স্কুলের বইয়ে ঢুকে যাচ্ছে বা বই থেকে বাদ পরে যাচ্ছে কিংবা ভুলভাবে যাচ্ছে তা নিয়ে কি আলোচনা হচ্ছে? এই শতকে দাঁড়িয়ে বিবর্তনবাদ না পড়া বা ভুল পড়া কিংবা বিবর্তনের বিপক্ষে পড়া অমার্জনীয়। একুশ শতকের বিজ্ঞানের ছাত্র তৈরী করতে হলে বিবর্তন পড়াতেই হবে। কিভাবে এলাম আমরা, কেন ভিন্ন ভিন্ন প্রাইমেটদের একই রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়, এতো এতো ট্রানজিশনাল ফসিলের লজিক্যাল যোগসূত্র কিসের ইঙ্গিত করে, কেন ব্যাক্টেরিয়ার mutation ঘটে এবং আরো বেশি রেজিস্ট্যান্ট হয় ইত্যাদি ইউনিভার্সাল জ্ঞান এখন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরই শেখাতে হয়। এইসব ফান্ডামেন্টাল ধারণাগুলো পোক্তভাবে না শিখলে ভবিষ্যৎ-এ বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব না। বইয়ে বিবর্তনের পক্ষে লিখলে হৈচৈ আর বিপক্ষে ভুলভাল লিখলে চুপচাপ থাকা অমার্জনীয় অন্যায়। এই অন্যায়টা আমাদের দেশে হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা পর্যন্ত এহলান জারি করে যে “আমি নিজেও বিবর্তন বিশ্বাস করি না”! অনেকেই এর বিপক্ষে লেখালেখি করেন বা অন্যের লেখার সাথে সহমত পোষণ করেন।

নিউটন বলেছিল “আমি অনেকদূর পর্যন্ত দেখতে পাই কারণ আমি জায়ান্টের ঘাড়ে দাঁড়িয়ে আছি”। এই জায়ান্ট মানে বর্তমানের জ্ঞান। গত ১০০ বছরে জ্ঞানের এক্সপ্লোশন ঘটেছে। এত এত নতুন জ্ঞান আমরা কিভাবে অর্জন করব আমরা যদি বিবর্তন নিয়ে বিতর্কেই আটকে থাকি? আলোচনা হওয়া উচিত বিবর্তবাদের তথ্যে যেন একটুও ভুল না থাকে। সামান্য ভুল যা আপাত হার্মলেস সেইটা নিয়ে আমাদের প্রচন্ড মাথাব্যথা আর যেইটা অসামান্য ক্ষতি করবে সেইটা নিয়ে চুপচাপ থাকা দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হই।

লেখকঃ কামরুল হাসান মামুন

শিক্ষক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments