আধ খাওয়া লাশ

আধ খাওয়া লাশ
আধ খাওয়া লাশ-গল্পের প্রতিধ্বনি

-আয়েশা সিদ্দিকা

আজকের এই সত্যিকারের ভুতুড়ে ঘটনাটি আমার মামার সাথে ঘটেছিল। সালটা তখন ২০০১ মামা তখন ছাত্র ছিলেন। একদিন মামা বাসায় আসার সময় রাস্তায় দেখতে পেলেন, একজন রিক্সাওয়ালা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে আছে। মামা তার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলেন এবং বুঝতে পারলেন তার অবস্থা খুব খারাপ, এখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। মামা কোন কিছু না ভেবে লোকটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। লোকটির অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় তাকে দ্রুত জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মামা তার কাছ থেকে তার বাসা ঠিকানা জানতে পেরেছিল। তার আসল বাড়ি হল চাঁদ গ্রাম । জীবিকার সন্ধানে সে এই শহরে রিকশা চালাত। ওই দিনের মতো মামা হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসলেন। দুখ সংবাদ এলো ঠিক তার পরের দিন, হাসপাতাল থেকে মামাকে জানানো হলো যে ওই ব্যক্তিটি মারা গিয়েছে। মামা বেশ শোকাহত হলেন । মামা তার মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ থেকেই লোকটির ব্যাপারে কিছু সন্ধান করলেন। তিনি তা জানতে পারলেন তা শুনে তিনি বেশ অবাক হলেন । এ শহরে লোকটির আপন আত্মীয় কেউই নেই। তিনি একাই থাকতেন। মামা সিদ্ধান্ত নিলেন, ঐ লোকটির মৃতদেহ তার নিজের জন্মস্থান চাঁদ গ্রামে পৌঁছে দিবেন। তারপর মামা তার এলাকার একটি ছোট ভাইকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করলেন। সমস্ত কাগজপত্রের কাজ শেষ করে হাসপাতাল থেকে লাশটি নিয়ে বের হতেই মাগরিবের আজান দিল। অ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলেছে মানিকগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে। পাটুয়ারী ফেরিঘাট যাওয়ার পর বেশ কিছু সময় ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হলো। ফেরি ঘাট হয়ে নদীর ওই পার পর্যন্ত পৌঁছাতেই রাত আটটা বেজে গেল। রাতের এই নির্জন রাস্তায় এম্বুলেন্স বেশ গতিতে ছুটতে শুরু করল। এত সময় পর্যন্ত মামাদের সাথে তেমন কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই নির্জন রাস্তায় হঠাৎ গাড়িটির যেন ওজনটি বেড়ে গেল। যার ফলে মামাদের কেমন যেন একটা বাড়তি চাপ অনুভব হচ্ছিল। আর সেই সাথে গাড়িটির গতীও যেন কমতে শুরু করেছে। গাড়ির চালকও ব্যাপারটা বুঝতে পারল না। এবার মামারা খেয়াল করলেন যে, সামনের বাসটি আঁকাবাঁকা ঘুরে যেন একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেলো। এম্বুলেন্স চালক দ্রুত গাড়িটি ব্রেক করে রাস্তার পাশে রাখল। এবং সকলে ওই বাসটির দিকে ছুটে গেল। বাসটির চালকটিকে দেখে মনে হলো সে খুব ভয় পেয়ে আছে। মামা ওই বাস চালকটিকে জিজ্ঞাসা করল,”কি হয়েছে ভাই এমন আকাবাকা ভাবে বাস চালাচ্ছিলেন যে?”। চালকটি একটু ভয়ের সাথে মামাকে বলল,”রাস্তাটি খুব ভয়ানক রাতের বেলা গাড়ির সামনে হঠাৎ করে কেউ সাদা কাপড় পড়ে রাস্তা পারাপার হয়। চালক এটি দেখতে পেয়ে গাড়ি খুব দ্রুত ব্রেক করতে যে এক্সিডেন্টের শিকার হয়”। এ কথা শুনে মামা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কিছু সময় পরে মামারা এম্বুলেন্স নিয়ে আবারো যাত্রা শুরু করলো। হঠাৎ করে মামা লাসটিকে দেখার জন্য পিছনে তাকালেন এবং যা দেখলেন তা দেখে তিনি খুব হকচকিয়ে গেলেন।লাসটি তার সামনেই যেন উঠে বসেছে। মামা দ্রুত বাকি দুইজনকে এই কথা জানালেন এবং তিনি কিছুটা ভয় এবং অবাক হয়ে বসে থাকলেন। চালক এম্বুলেন্স টিকে আবার থামিয়ে রাস্তার পাশে রাখলো। এবার চালক ও মামার পাশের ছেলেটি উভয়ই পিছনে তাকালো কিন্তু তারা কোন প্রকার অস্বাভাবিক কিছুই দেখতে পেল না। আবার গাড়ি ঠিকমত চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ চলার পর গাড়ি চালক দেখতে পেলেন যে সামনে একজন সাদা পড়া একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি চালক অনেক ভয় পেয়ে গেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ব্রেক করলেন। মামাও তার পাশের ছেলেটি বেশ অবাক হলো। চালক বলল,”দেখেন তো সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে”। মামা ও তার পাশের ছেলেটি কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। এখনই তিনজন বুঝতে পেল যে তাদের সাথে কোন খারাপ কিছু হচ্ছে। ঘড়িতে সময় তখন রাত দশটা। এরপরেই শুরু হল নানারকম অস্বাভাবিক ঘটনা। পিছন থেকে কারো ডাকা শব্দ আবার কারো কান্নার শব্দ। কিন্তু কেউই সাহস করে পিছনে তাকালো না। এভাবে এম্বুলেন্সটি পদ্মা নদীর কাছে এসে থেমে গেল। এখান থেকে নৌকায় করে লাশটিকে নিয়ে যেতে হবে। এই গভীর রাতে যেহেতু একটি নৌকার মাঝি ছিল তারা কেউই এই গভীর রাতে লাশ নিয়ে নদী পার হতে চাচ্ছিল না। অবশেষে একটি বৃদ্ধা মাঝি লাশটিকে নিয়ে যেতে রাজি হল। এবং তার নৌকাতেই মামারা রওনা দিল। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা গেল নৌকাটি এই বুঝি ডুবে যাবে নদীর পানিতে। অথচ আশেপাশের নদীর পানিতে কোন স্রোতই নেই। মামা ও তার সাথের ছেলেটি বেশ ভয় পেয়ে গেল। মাঝনদীতে নৌকাটি আসতেই কিছু সবুজ আলো লাশটিকে ঘিরে ফেলল। তখন বৃদ্ধ নৌকার মাঝি বলল,”আপনারা বেশি বেশি দোয়া দরুদ পড়ুন। লাশ নিয়ে নদীতে আসলে এমনটাই হয়। ভয় না পেয়ে দুয়া দুরুদ পড়ুন। আনুমানিক এক ঘন্টা পর নদী থেকে নৌকাটি একটি খালে চলে আসলো। খাল দিয়ে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর নৌকাটি আবারো হেলতে দুলতে শুরু করল। মামা ভাবলেন এবার হয়তো নৌকাটি ডুবেই যাবে। কিন্তু শেষে কোন এক অবশক্তির প্রভাবে ঠিক পারে আশার আগ মুহূর্তে নৌকাটি অল্প পানিতে উল্টে পড়ে গেল। অনেক কষ্টে লাশটিকে টেনে পানি থেকে উপরে উঠানো হলো। বৃদ্ধ মাঝি তখন বলল,”আপনারা কি কিছু বুঝতে পারছেন। এই লাশটিকে নেওয়ার জন্য কিছু খারাপ জিন আমাদের নৌকাটিকে ঘিরে ধরেছিল। অনেক খারাপ জিন আছে যারা লাশ খেয়ে ফেলে। আপনারা যত তাড়াতাড়ি পারেন লাশটাকে দাফন করে দিন”। মামা ও তাঁর সাথের ছেলেটি মাঝি কে বিদায় দিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটি ভ্যান আনলেন। ভ্যানচালক সহ তারা তিনজনে মিলে অনেক কষ্ট করে লাশটিকে ভ্যানে উঠালেন। লাশ টিকে তোলার সময় মামার এমন মনে হচ্ছিল যে লাশটিকে যেন মাটির নিচ থেকে কোন অদৃশ্য কেউ টানছে। এরপর চাঁদ গ্রামের ঠিকানা মত ভ্যান চালক মামা কে নিয়ে চলল। সে বলল, ৩০ মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাব। এবার লোকালয়ে ছেড়ে ভ্যান্ টি নির্জন রাস্তা দিয়ে চলা শুরু করল। দুই ধারে গাছপালা এবং ফসলি জমি এবং দূরে হালকা চাঁদের আলো। লাসটি কাছে থাকায় মামার কাছে আশেপাশের পরিবেশ গুলো ভুতুড়ে লাগতে শুরু করল। হঠাৎ করে আবার আগের মতো সবার শরীর ভার হতে শুরুকরল। ভ্যানচালক আর যেন ভ্যান টি চালাতে পারছিলেন না। মনে হচ্ছিল যেন ভ্যানের উপর অনেকজন বসে আছে। ভ্যানচালক রীতিমতো অনেক ভয় পেয়ে গেলেন। মামা ও তার পাশের ছেলে বুঝতে পারলো যে এ হলো সে খারাপ জিন। যারা লাশ খাওয়ার জন্য এসে হাজির হয়েছে। কিছুক্ষণ পর মামা বলে উঠলেন,’এই কে? কে যেন আমায় পিছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে।”দ্রুত তারা পিছনে তাকালো, এবং দেখলো লাশ টি উঠে বসে আছে। এসব দেখে মামারা ভ্যান ছেড়ে চিৎকার শুরু করল। কিছু দূর যাওয়ার পর মানুষের ঘনবাস দেখে মামা হাকডাক শুরু করলেন। মামার চেঁচামেচি তে বেশ কিছু মানুষ সেখানে একত্রিত হলো। ভ্যানচালক উপস্থিত সকলকে সহ কিছু খুলে বললেন। এরপর কিছু মানুষ হাতে মশাল জ্বালিয়ে ওই লাশটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেখানে যে তারা যা দেখতে পেল তা দেখে সকলের বুক কেঁপে উঠল। লাস্ টির মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত কিছু একটা ভয়ানক জিনিস খেয়ে ফেলেছে। এরপর সকলে ওই আধ খাওয়া লাশটিকে একটি বাঁশের কবরস্থানে কবর দিয়ে দিল। এরপর মামা আত্মার সাথী সারারাত ঘুমাতে পারল না তাদের মনে হল যে কেউ তাদের বাইরে থেকে ডাকছে।

Facebook Comments Box
Previous article কর্ণফুলীর পাড়ে শিয়াল
Next article বিলীন হওয়া একটি জীবনের গল্প
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here