back to top
Wednesday, March 26, 2025
Homeসাহিত্যগল্পকর্ণফুলীর পাড়ে শিয়াল

কর্ণফুলীর পাড়ে শিয়াল

কর্ণফুলীর পাড়ে শেয়াল - টি এইচ মাহির

১)

‘জানিস, এখানে শিয়াল আছে।’

‘কী বলিস! তাই নাকি?’

সজীবের কথায় কিছুটা অবাক হলো বাবলু। কর্ণফুলীর পাড়ে শিয়াল আসবে কীভাবে? ধু ধু নদীর চরে ঝোপজঙ্গলেরও কমতি নেই। বাবলুরা যেখানে বিকেলে খেলতে যায়, সেখানেও মাঠের শেষে জঙ্গলের মতো। কখনো শিয়াল দেখেনি বাবলু। তবে আজ সজীবের মুখে শিয়ালের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো। ভয়ও পেল।

‘তুই দেখেছিস নাকি শিয়াল?’

‘বড় ভাইয়াদের কাছে শুনেছি। তবে একবার বিকেলে মাঠ থেকে ফেরার সময় ওই ঢিবির ওখানে শিয়ালের মতো একটা প্রাণী দেখেছি। ডাক শুনিনি। মনে হয় শিয়াল।’ নদীর দিকে নির্জন একটা মাটির ঢিবি ইশারা করে বলল সজীব।

ভাবনায় পড়ে গেল বাবলু। সত্যিই কি এখানে শিয়াল আছে? আর থাকলেই–বা ভয় পাওয়ার কী আছে? হয়তো থাকতেও পারে। নির্জন এই চরে শিয়াল থাকাটা অবাক করা বিষয় নয়। তবে আগে কখনো শিয়াল দেখেনি বাবলু। এবার একটা সুযোগ পেয়ে গেল সে।

সবার কাছে শুনে বাবলুর আগ্রহ আরও বাড়তে লাগল। দূর থেকে হোক কাছ থেকে হোক শিয়াল দেখতে চায় সে। কিছুদিন পরই সুযোগটা এসে গেল।

প্রতিদিনের মতোই নদীর পাড়ে খেলছিল বাবলু। সরগরম মাঠ। ক্রিকেট চলছিল। প্রতি ওভারেই বল উড়ে যাচ্ছিল ঝোপঝাড়ে। হঠাৎ একটা ছক্কা হাঁকানো বল উড়ে গিয়ে পড়ল একটা ঝোপে। বাবলু আনতে গেল বলটা। ঝোপে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে কাঁটা। সন্তর্পণে পা ফেলল বাবলু। আনারসের পাতার মতো পাতাগুলো সরিয়ে সামনে এগোল সে। ঠিক তখনই তার চোখের সামনে ভেসে উঠল ঢিবির ওপর বসে আছে শিয়াল–জাতীয় কিছু। খুশি আর উত্তেজনায় বাবলুর চোখ চকচক করল। আজকে কি তবে শিয়াল দেখা হবে? বলটা নিয়ে চলে এল বাবলু। সজীবকে বলল ঘটনাটা। ঠিক করল, খেলা শেষ হলে দুজনে মিলে শিয়াল দেখবে।

খেলা শেষে সবাই চলে গেল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কিন্তু বাবলু আর সজীব রয়ে গেল মাঠে শিয়াল দেখার জন্য। বাবলু দেখল, ঢিবির ওপর প্রাণীটা এখনো বসে আছে। বাবলু এগিয়ে গেল ঝোপের দিকে। ওখানটায় ভালো করে দেখা যাবে। সজীবও এল পিছু পিছু। কাঁটায় ভরা ঝোপ থেকে ঢিবির দূরত্ব গজ পঞ্চাশেক। নিঃশব্দে পা ফেলে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল বাবলু আর সজীব।

‘এটা কি আসলেই শিয়াল?’

‘দেখে তো তা–ই মনে হচ্ছে।’ বলল সজীব। ‘দেখ কী রকম বাদামি রঙের গা।’

বাদামি রঙের শিয়ালটা নদীর দিকে মুখ করে আছে। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ঠিকমতো। তার ওপর সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আঁধার হয়ে আসছে দুই পাড়ের আকাশ। বাড়ি ফিরতে হবে দুজনেরই। এই নির্জন ধু ধু চরে যা দুই–একজন লোক ছিল, তারাও বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরছে পাখিরাও। এদিকে এখনো শিয়ালের মুখ দেখা হলো না বাবলুর। অপেক্ষার সঙ্গে বাড়ছে ভয়। মশার কামড়ও সমানুপাতিক হারে বাড়ছে। তবু দুজনে নিশ্চুপ বসে রয়েছে শিয়াল দেখার জন্য। কখন শিয়ালটা পেছনে ফিরবে। বসা থেকে উঠে দাঁড়াবে। আচ্ছা, ওর কি বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই?

‘কিরে বাবলু, আমাদের শিয়াল দেখা কি হবে?’ নীরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করল সজীব।

‘এভাবে বসে থাকলে মনে হয় না হবে।’

‘কী করবি তাহলে?’

‘চল, এক কাজ করি।’

‘কী?’ সজীবের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি।

পাশে পড়ে থাকা মাঠির ঢেলার দিকে ইঙ্গিত করল বাবলু।

‘চল দু–একটা ছুড়ে দেখি শিয়ালটার দিকে।’

‘যদি আমাদের দিকে তেড়ে আসে? ভেবে দেখ। এখানে কিন্তু কেউ নেই। আমাদের বাঁচাতে কে আসবে?’

‘আরে দূর, আমরা তো মেরেই দৌড়ে পালাব।’

দুটো মাটির ঢেলা নিল বাবলু। একটা সজীবকে দিল, একটা তার হাতে। ঢিপ ঢিপ করছে বুকটা। একি আসলেই শিয়াল। আজকে শিয়াল দেখার আশা পূর্ণ হবে কি?

সাত–পাঁচ ভাবতে ভাবতে মাঠির ঢেলা দুটো ঢিবির ওপরে থাকা প্রাণীটার দিকে ছুড়ে দিল দুজনে।

২)

এলাকায় কুকুরদের ধরে ধরে ভ্যাক্সিন দিচ্ছে লোকেরা।সুইয়ের ভয়ে পালিয়ে নদীর পাড়ের এই নির্জন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে বাদামী রঙের কুকুরটা।হঠাৎ দুটো মাঠির ঢেলা ছুটে এলো তার পিছন দিক থেকে।

আবার পালালো কুকুরটা।

Facebook Comments Box
এই ধরণের আরো লেখা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

প্রতিধ্বনির বর্তমান মূল্যprotiddhonii.com estimated website worthprotiddhonii.com domain valuewebsite worth calculator

সাম্প্রতিক লেখা

Recent Comments