শেষ দেখা

0
72

নুজহাত তাবাসসুম ইপ্সিতা

নীলিমা! আমার শার্টটা কোথায়?

তোমার শার্টতো তুমি নিজেই কাল কোথায় যেন রেখেছিলে।

এই তো পেয়েছি। কিন্তু, এটা তো ইস্ত্রি করতে হবে।নীলিমা! নীলিমা!

ওহ!তুমি আর কতবার আমাকে ডাকবে?দেখতে পাচ্ছ না,যে আমি রান্না করছি তোমার জন্য?

রোহান রান্নাঘরে নীলিমার কাছে গেল।

রান্নাটা তাড়াতাড়ি শেষ করো।আমার অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আশ্চর্য! আমি কি সকাল থেকে বসে আছি?তোমার জন্য কত কষ্ট করে কাজ করছি।এরপর রিশান ঘুম থেকে উঠে গেলে আরেকটা ঝামেলা শুরু হবে।

তুমি আমার শার্টটা তাড়াতাড়ি ইস্ত্রি করে দাও তো।

তুমি তোমার এসব আহ্লাদের কথা বন্ধ কর।আমি এখন তোমার আর একটা কাজও করতে পারবো না।

এখন তুমি না করলে এসব কাজ করবে কে?আমার মা সব কাজ আমাকে সময় মতো গুছিয়ে দিতেন।

তোমার মা যখন এত ভালোই ছিল তখন তাঁকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠালে কেন?

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

আরে মা তো সারাদিন আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগির কথা বলতো।তাছাড়া মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তুমি তো সবই জানো।বোকার মতো প্রশ্ন করছো কেন?

আচ্ছা, তুমি এখন যাও,তোমার এসব কথা আমি পরে শুনবো।

কয়েকঘন্টা পরে,

হ্যালো রোহান!জানো আমি দুই সপ্তাহ আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম না?

হুম! তারপর?

সেটার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এসেছে। আমার চাকরিটা হয়েছে।

এটা তো খুব ভালো একটা খবর।কিন্তু তুমি অফিসে গেলে রিশান কার কাছে থাকবে?

হ্যাঁ, আমিও তো এই চিন্তায়ই আছি।

আমরা চাইলে রিশানকে কোনো একজন আয়ার কাছে রাখতে পারি বা কোনো ডে-কেয়ার এ দিতে পারি।

আমি আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে কোনো আয়া অথবা ডে কেয়ারে রাখতে পারবো না।আর আমি আমার বাচ্চার জীবন নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।

তাহলে এখন কি করবে?তোমার চেনা -পরিচিত কেউ কি আছেন?

আমার চেনা -পরিচিত কেউ দরকার হবে কেন?তোমার মাকে কি আমরা আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে পারি না?

মা?কিন্তু মাকে তো আমরা দু ‘বছর আগেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এখন মাকে যদি আমরা শুধুমাত্র রিশানের দেখাশোনার জন্য নিয়ে আসি, তাহলে মা কি মনে করবেন?

ধুর! মা কি মনে করবে সেটা দিয়ে আমাদের কি দরকার? তাছাড়া আমরা আমাদের ছেলের জন্য একটা মানুষ পেয়েছে এটাতে তো আমাদের আরো খুশি হওয়া উচিত।

হ্যাঁ, সেটা ঠিক। আচ্ছা আমি তোমার সাথে বাসায় এসে কথা বলছি।

রিশান তুমি কি তোমার দাদির সাথে থাকবে?

হ্যাঁ হ্যাঁ, আব্বু আমি আমার দাদির সাথে থাকবো।

রোহান আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি যে রিশান ওর দাদীর সাথে খুব ভালভাবেই থাকবে।

আচ্ছা আমি তাহলে কালকেই মায়ের সাথে কথা বলে দেখব।

হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম মা!

হ্যালো বাবা ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস? বৌমা আর রিশান দাদু ভাই কেমন আছে?

জি মামা সবাই ভালো আছি। আসলে আমরা একটা সমস্যায় পড়েছি।

সমস্যা! কি সমস্যা? আমারে খুলে বল বাবা কি হইছে?

আসলে রিশানের মায়ের একটা চাকরি হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি দুজনেই অফিসে চলে যাই তাহলে রিশান একা হয়ে যায়। এখন ওকে কারো কাছে রাখার সাহস হচ্ছে না। মা তুমি যদি আমাদের কাছে এসে একটু থাকতে!

ওহ!তাই আমাকে তোরা বাসায় আসতে বলতেছিস।

চিন্তা করিস না আমি আমার রিশান দাদু ভাইয়ের কাছে চলে আসব।

আচ্ছা মা তুমি তাহলে আগামী দুদিনের মধ্যে এসে পড়।

বাবা আজকে না দাদী আসবে?

হ্যাঁ, রিশান তুমি একটু অপেক্ষা করো তোমার দাদি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবেন।

কিছুক্ষণ পর একটা ফোন এলো–

হ্যালো! আপনি কি রোহান হোসাইন বলছেন?

জি বলছি আপনার মায়ের রোড এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। আপনার মায়ের ব্যাগের একটি কার্ড থেকে আপনার ফোন নম্বর পেয়েছি। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন।

নীলিমা তাড়াতাড়ি চলো মায়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে।

এরপর হসপিটালে –

ডাক্তার আমার মায়ের এখন কি অবস্থা?

সরি আপনার মাকে বাঁচানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হলো না ।

আপনার মায়ের পায়ে অসম্ভব ব্যথা ছিল সেজন্য তিনি রাস্তা পার করার সময় গাড়ির সামনে থেকে সরে যেতে পারেননি।আপনার উচিত ছিল নিজের মাকে সাবধানে রাখা। আর আপনার মায়ের কাছ থেকে একটা চিঠি পাওয়া গেছে এই নিন।

রোহা চিঠিতে পড়া শুরু করল –

আমার প্রিয় রোহান বাবা,

তুই সবসময় আমারে বলতিস,” মা তুমি আমাকে ভালোবাসো না। সেজন্য আমাকে বারবার সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখাও। আরে বাবা প্রত্যেকটা মাই তার সন্তানকে ভালোবাসে। আমি তোকে সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখাতাম যাতে তুই নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখিস।আমি তোকে অনেকবারই বলতে চেয়েছি যে আমি তাকে সম্পত্তির অধিকাংশ দিয়ে দিয়েছি, তোর বাকি তিন ভাই বোনে থেকে বেশি দিয়েছি কারণ, তুই আমাকে জীবনে অনেক শিক্ষা দিয়েছিস। যেদিন তুই আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলে, সেদিন আমি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে আশ্রয় নেই সেদিনই আমি আমার জীবনের বড় শিক্ষা পাই।তুই আমাকে শিখিয়েছিস কিভাবে প্রতিটা রাত না ঘুমিয়ে তোর জন্য কান্না করে কাটিয়ে দিতে হয়।তুই আমাকে শিখিয়েছিস কিভাবে তোর সাথে কথা না বলে থাকতে হয়। তুই আমাকে আরো শিখিয়েছিস কিভাবে তোকে ছাড়া খাবার একা একা খেতে হয়। তুই যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস। আশা করি আমি যদি কখনো মরে যাই তাহলে আমার মৃত দেহ পর্যন্ত তোকে কোনরকম বিরক্ত করবে না।

ইতি

তোর বিরক্তকর মা।

একি নীলিমা! দেখো মা তো আমাকে সম্পত্তির অধিকাংশ দিয়ে দিয়েছিলেন। আর এই সম্পত্তির কারণে আমি মাকে কত কষ্ট দিয়েছি। মা যে এভাবে করে চলে যাবেন আমি ভাবতেও পারি নি, জানতামও না। মায়ের সাথে আমার আর শেষ দেখা হলো না। মায়ের কাছে আমার শেষবারের মতো ক্ষমা চাওয়া হলো না। আমি আমার নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না।

Previous articleমরীচিকা
Next articleলিখবো না আর
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here