শিমুল হোসাইন
বিকেল ৪ টা বাজে। আকাশে মেঘ দৌড়াদৌড়ি করছে আর, খাঁ খাঁ বজ্রপাতে কেঁপে উঠছে পৃথিবী। জামিল আকাশের এই বিষন্নতা দেখে বৃষ্টি উপভোগের জন্য তাদের বাগানবাড়ির খোশগল্প করার কুটিরের বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি খুব ভালো লাগে জামিলের, তাই টিনের চাল থেকে গড়িয়ে পরা মৃদু জল সে হাতড়ে দিচ্ছে।
জামিলের দাদা ছিলেন এককালের জমিদার। তার বাবা মারা যাওয়ার পরে পৈতৃক সূত্রে সব সম্পত্তি জামিলের হয়। প্রচুর আবাদি জমি আর একটা বাগান বাড়ি হয় তার নামে। বাগান বাড়িটি গাছপালা দিয়ে ঘেরা, একটি সাত ঘরের বাসস্থানের দালান ও তার পাশেই তিনটি বড় ঘরের বৈঠকখানা। এই বৈঠকখানাতেই নাকি দেশ বিদেশের জমিদারদের সাথে জামিলের দাদা খোশগল্পে মেতে উঠত।
কৃষিজমি দেখাশোনা করার জন্য তার ছোটকাল থেকেই দেখে আসা মজনু মিয়াকেকে দ্বায়িত্ব দিয়েছে সে। কারণ, জামিলের বিশ্বাস, ছোটকাল থেকে দেখে আসা মজনু মিয়া তাকে ঠকাবে না। এছাড়াও সৎ ব্যাক্তি হিসেবে গ্রামে যথেষ্ট নাম-ডাক আছে তার।
জামিল বৈঠকখানার বারান্দায় দাড়িয়ে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখছে মেঘের লুকোচুরি, আকাশের গর্জন, ও বিদ্যুৎ চমকায়িত আলোর বিকিরণ। আকাশ তার চিরচেনা রুপ: শান্ত থেকে অশান্ত হচ্ছে। এখন আকাশ ধীরে ধীরে কালো মেঘের সাথে রাক্ষসী চিৎকার দিচ্ছে, বজ্রপাত প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। জামিলের বৃষ্টি খুব পছন্দ। কিন্তু প্রকৃতির সৃষ্ট দুর্যোগ একেবারেই অপছন্দ। তাই আর বেশিক্ষণ সে বৃষ্টি উপভোগ করেনি। বৈঠকখানা থেকে ছাতা দিয়ে তাদের দালানে চলে যায়। তারপর চলে যায় তাদের ব্যাক্তিগত লাইব্রেরিতে। এই লাইব্রেরির অধিক বই তার দাদারই সংগ্রহ করা। জামিলও তার প্রিয় বইগুলো এই লাইব্রেরীতে সংগ্রহ করে রেখেছে। এরপর লাইব্রেরি থেকে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থ পড়তে পড়তে সে ঘুমিয়ে যায়।