কবিতার এক পাতা || ২৭/০৬/২০২৫

0
227


কবিতার প্রতিধ্বনি – কবিতার এক পাতা
প্রতিধ্বনির সাপ্তাহিক আয়োজন

২৭/০৬/২০২৫ ||শুক্রবার
লেখা পাঠাতে নিচে ক্লিক করুন-

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে



লিখেছেন যারা-

  • এম এম আর তাহমিদ
  • মৌ চট্টোপাধ্যায় 
  • হুসাইন আহমাদ
  • এস এ বিপ্লব
  • আব্দুস সাত্তার সুমন
  • নুজহাত তাবাসসুম ইপ্সিতা
  • মহা রফিক শেখ
  • শেখ মিন্নাতুল মকসুদ অর্চি
  • মোহাম্মদ ফয়সাল
  • পুষ্পিতা ভট্টাচার্য
  • রওশন মতিন
  • মাহমুদা রানি

ই-পেপার পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন অথবা এই পাতা থেকেই পড়ুন



বাদুড়ের কষ্ট
এম এম আর তাহমিদ 

গভীর রাতে চাঁদের আলো
মিটমিটিয়ে হাসে,
কালো বাদুড় উড়ে গিয়ে
আতা গাছে বসে।
দুলিয়ে শাখা, উল্টো হয়ে
চাচ্ছে খেতে আতা,
একটু খেলেই লাঠি দিয়ে
তাড়ায় গাছের হোতা।
আহ, বাদুড়ের সে কি কষ্ট,
ফল খেতে না পারায়—
আমরাও হয়তো পড়েছিলাম
এমন একটা মামলায়!


সবুজ স্বাক্ষর
মৌ চট্টোপাধ্যায় 

তুমি আদর দিলে–
নিতে পারি এক বুক সামুদ্রিক ঝড়
আকালের দিনেও
খুঁজে পেতে পারি কোনো বিষন্ন সরোবর।
যুদ্ধের দিনে সৈনিক হতে পারি
হতে পারি বোমারু বিমান,
রক্তে লুটায় শরীর ধারায়
হয়ে যেতে পারি কোন এক মরু তুফান।

সে এক যুদ্ধ খেলায়
আদরের লাল সংকেত গায়ে
বলেছিলে ফিরে যাবে ওই মধ্যবর্তী দেশে–
আমি ফেরার পথে সবুজ নিশান দিয়েছি গেঁথে।
তাই তৃতীয় পক্ষ বলে দিয়েছে
এ অভিযান দেশের মাথায় দ্বেষ ভরে দেয়,
আদরের গায়ে কলঙ্ক—
প্রেমের ভাষায় রক্তধারা
আর দুচোখে মৃত্যু আতঙ্ক।
তবু তুমি আদর দিলে
নিতে পারি এক বুক সামুদ্রিক ঝড়,
যুদ্ধের লাল সংকেত মাঝেও
রেখে যেতে পারি সবুজ স্বাক্ষর।


প্রভুর সৃজন
হুসাইন আহমাদ

কি সুন্দর প্রভু তোমারই সৃজন!
অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয় মন।
মাঠ ভরা দিলে তুমি সবুজে শ্যামল,
কৃষকের মুখে হাসি ফুটিল সজল।

নদী চলে এঁকেবেঁকে আপন মনে,
পাখি যায় গান করে আকাশ পানে।
দিগন্তে ধোঁয়াশাই আকাশ নামে!
গিয়ে দেখি সেখানে, হয় মিছে মনে।

প্রভাতের খরাটা মিষ্টি লাগে,
ক্লান্ত দুপুরে ছায়া খোঁজে মনে।
সাঁঝ হলে পাখি যায় আপন নীড়ে,
দিনের আলো ঘিরে ফেলে রাত্রি নামে।


আমার কোন গল্প নেই
এস এ বিপ্লব

আমার কোন গল্প নাই
গল্পের শুরু হলো না তাই!

আমার কোন স্বপ্ন নাই
সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে তাই!

আমার কোন পদ নাই
কোন পদ অর্জন করতে পারিনি তাই!

আমার কোন অর্থ নাই
কোন আশা পূরণ হয় নি তাই!

আমার কোন ঘর – বাড়ি নাই
ভাড়াটিয়া আজও থাকি তাই!

আমার কোন কষ্ট নাই
ফেরিওয়ালা হয়ে গেছি তাই!

আমার কোন আপনজন নাই
সব পর হয়ে গেছে তাই!

আমার কোন সিনেমা নাই
নিজেই সিনেমা দেখি তাই!

আমার কোন আলোকিত পথ নাই
শিক্ষিত হয়েও আঁধারে রয়েছি তাই!

আমার কোন ভবিষ্যৎ লাঠি নাই
উপরওয়ালা কোন কিছু দেয় নি তাই!

আমার কোন ভুবন নাই
মাটির ঘরে থাকব তাই”!

আমার কোন জীবন নাই
মরণ প্রহর শুধু গুনে যাই।


স্মৃতির পাতায়
আব্দুস সাত্তার সুমন

স্মৃতির পাতায় মনের খাতায় ওমা তুমি আছো,
বসুন্ধরা ছেড়ে গেলেও আমার মাঝে বাঁচো।
তোমার কথা শুনলে ওমা বুক ভেসে যায় জলে,
ধর্মগামী সাহিত্য প্রেমী তোমার কথাই বলে।

তোমার স্মৃতি যায় না ভোলা অন্তরেতে পুষি,
জান্নাতেরই মনিকোঠায় থেকো ভীষণ খুশি।

যুগে যুগে রবে ও মা জনম জনম ধরে,
পাতাল থেকে স্বর্গ অবধ থাকবে সবার তরে।
তোমার সন্তান হতে পেরে গর্ববোধ করি,
তোমার দেওয়া শিক্ষাগুলো আদেশ মত গড়ি।


এক ফালি দীর্ঘশ্বাস 
নুজহাত তাবাসসুম ইপ্সিতা 

যতটা পথ হেঁটেছি রোজ

ততটাই যেন হয়েছি নিখোঁজ। 

যতটুকু গেয়েছি গান

ততটুকুও কমেনি পিছুটান। 

দিনের শেষের 

এক ফালি দীর্ঘশ্বাস 

সাদা হয়ে যাওয়া সবুজ ঘাস। 

পথের শেষের বাঁক

আজ কথা এতটুকুই থাক।

চিরচেনা এই শহর, 

কাটেনা আজকাল

একাকী এই প্রহর। 


ঝিরঝিরে বৃষ্টি
মহা রফিক শেখ

ঝিরঝিরে বৃষ্টি
কে করেছে সৃষ্টি,
চল তবে ছাদে যাই
খেতে দেবো মিষ্টি।

ঝিরঝিরে বৃষ্টি
অপরুপ সৃষ্টি,
মেঘ হয়ে কাছে এলি –
সে কি তোর দৃষ্টি!


কদমের পাপড়ি
শেখ মিন্নাতুল মকসুদ অর্চি


তুমি বলেছিলে ফুলের পাপড়িতে
আমার নাম লিখে এনো,
লিখে এনো ভালোবাসি শব্দটাও।
আমি বড় সুন্দর করে গোটা গোটা অক্ষরে
গোলাপের পাপড়িতে লিখেছিলাম
তোমার নাম,লিখেছিলাম ভালোবাসি।
তোমাকে দেওয়ার কালে তুমি
গ্রহণ করলে না,ছুঁড়ে ফেললে।
বললে গোলাপের পাপড়িতে নয়
যদি কদমের পাপড়িতে লিখি
তবে তুমি বিশ্বাস করবে
আমার ভালোবাসা সত্য।
তারপর থেকে প্রতি বর্ষায় আমি
কদমের পাপড়িতে ভালোবাসি
লিখতে গিয়ে ব্যর্থ হই।
ধ্যানমগ্ন হয়ে ভাবি কেন তুমি
এত ফুল থাকতে কদমের
পাপড়িতে ভালোবাসি লিখতে বললে!
এমন সরু পাপড়িতে কেমন করে
লিখবো আমি ভালোবাসি।
আচ্ছা, তুমি কি সত্যিই আমার
কাছ থেকে ভালোবাসি লেখা চেয়েছিলে?
নাকি আমাকে কঠিন পরীক্ষায়
ফেলে আমার কাছ থেকে
দূরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তোমার।
কদমের পাপড়ি তুমি এতো সরু হলে কেন?
কেন তোমার পাপড়িতে লেখা যায় না
ভালোবাসি নামক শব্দ টা?
তোমার সরু হওয়া যে আমার হৃদয়ে
সূচ হয়ে বিধলো তা কি তুমি বুঝো?


রক্তে লেখা জুলাই
মোহাম্মদ ফয়সাল

জুলাই মাসে শহরটা জ্বলে,
স্বাধীন চেতনায় আগুন উঠে চলে।
ছাত্রের হাতে ছিল না বন্দুক,
তবু গর্জে উঠলো — “থামাও এই শাসনভুক!”

কোটার নামে বিভাজন খেলা,
বিচার চাইলো হৃদয় বেলা-বেলা।
কিন্তু গুলির গর্জনে থেমে গেল প্রাণ,
কত মায়ের বুক খালি, কত অশ্রুর সন্ধান!

রাতে রাতে তুলে নেয়া ছেলেরা,
ভোরে পাওয়া যায়না, শুধু কাঁদে মায়েরা।
জেল, নির্যাতন, নিখোঁজের ছাপ,
বাংলার আকাশেও ঘোর কৃষ্ণ তাপ।

হাসিনা সরে গেলো ইতিহাসের পাতায়,
ইউনূস এলেন আশার বারতায়।
তবু কি ভুলবো সেই গুলির শব্দ?
শহীদের রক্তে তো এখনো রৌদ্র!

এই যে কিশোর, যার চোখে আগুন,
সে তো ইতিহাস, সে তো নতুন দাগুন।
পোড়াবার আগে জ্বলতে হয় ধোঁয়ায়,
তবেই তো সূর্য জাগে রক্তের রোয়ায়।

জুলাই এখন আর শুধুই মাস নয়,
এ এক বিপ্লব—যা ফিরে আসবেই, রয়!


অপেক্ষা
পুষ্পিতা ভট্টাচার্য

সূর্যের সোনালী রোদ মুঠোয় পুরে
আমি উড়ে যাব নীল দিগন্তে,
কখনো যদি পিছু ডাক,
ফিরে আসব না হয় বসন্তে।

ততোকাল অব্দি আমি
থাকব অপেক্ষায়;
মিশে যাব
শারদ মেঘের ভেলায়,
হাজির হব
হেমন্তের মিষ্টি বিকেলে,
নয়তো কুয়াশাঘেরা
শীতের সকালে।

তবু আমি অপেক্ষা করে
যাব সহস্র বছর ধরে,
যেভাবে চাতক পাখি
বৃষ্টির প্রতীক্ষা করে।
প্রার্থনা করে যাব
আমি দুহাত তুলে,
ফাগুন আসুক
তোমার রুক্ষ হৃদয়ে।


বিপরীত পৃথিবী
রওশন মতিন

দুই বিপরীত পৃথিবী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য,আদর্শ ও অশ্লীলতা
পরস্পরের দিকে অস্ত্র তাক করে আছে-মারনাস্ত্র,
রক্তে ভেজা রুটি ও বারুদ, সবকিছু এখন খল-
কুটিল নষ্ট রাজনীতির হায়েনাদের দখলে,
এখন দ্যাখো নরক ও নোংরামি, ভোগবাদ, নগ্নরুপ অবক্ষয়, সভ্যতার পতন ,কবর-কাফন,
দূর্ভিক্ষের হাহাকারে শোনো প্রেতাত্মার অট্টহাসি,
দ্যাখো পৃথিবী জুড়ে নরখাদক শয়তানদের প্রচন্ড ধ্বংসলীলা
অস্ত্রের উন্মাদ ঝংকার ও রক্ত পিপাসু হুংকার,-
এরা সাদা চামড়ার মানুষ অথচ এদের রক্তে বইচে
বর্ণবাদ,বিভাজন,কালো রক্তের বিষাক্ত ধারা,
এরাই সভ্যতার মুখোশধারী দুর্বৃত্ত -ডাকাত, মানবতার চূড়ান্ত দুশমন;

আমার বেদনার্ত হৃদয় অসীম করুনায় ভরে যায়,
দৃষ্টি সীমানায় দেখি, অস্তাচলের স্বর্গীয় গোধৃলির পথে হেঁটে যায়
দুঃখ জয়ী , মানবতাবাদী গৌতম,যীশু, মোহাম্মদ (সঃ),
আমি ও তাদের সাথী হই-কুড়াই পাপবিনাশী- জীবন ঋদ্ধ মানব-ফুল, হৃদয়ে সত্য শুদ্ধ সূর্যালোক , সবুজ বাগানে সবুজ মননে
আলোর রথে চলে যাই, জীবনের নির্বাণ অসীম আনন্দ লোকে,
পার হয়ে পাপাসিক্ত জনপদ, অভিশপ্ত পৃথিবী ও
অনন্ত-বেদনাবিদীর্ন পথ।


কবিতার ছন্দ তুমি
মাহমুদা রানি

ধরো,
বছর কয়েক বাদে হঠাৎ দেখা
চেনা পথ, চেনা নদীর পাড় ,
চেনা স্মৃতির সেই সাদা – কালো সন্ধ্যা।

সেই পুরাতন সোডিয়াম লাইটে,
চোখের ভেজা কার্নিশে জ্বলছে এক মায়াময় ভালোবাসা।
আমি চারপাশের মতোই নিস্তব্ধ!
মুখোমুখি দুজন বাকরুদ্ধ, এলোমেলো স্মৃতিরা আশ্চর্য ।
দূরত্ব আমাদের মাঝখানে এক আলোকবর্ষ।

যদি বলি,
কবিতা আমার শব্দহারা , ছন্দহারা!
আমি উচাটন মহাশূন্যের মতো শূন্য
ব্ল্যাকহোলের মতো অন্ধকার!
সাগরের ন্যায় গভীর আমার দুঃখ।
নেই কোনো আলোর প্রতিফলন,প্রতিসরণ, প্রতিস্থাপন।

তোমার খুঁজে,
নীল হতে নীলিমার দিগন্তে, দেশ হতে দেশান্তরে
আমি হয়েছি দিশেহারা!
এ কেমন পাগলামি, মাদকহীনা মাতলামি
নিদ্রা থেকে জাগরণের মূলমন্ত্র তুমি।

দারুণ অদ্ভুত,
আমি মরে যেতে যেতে বেঁচে যায় বার বার
তোমার স্পর্শে,
ধরবে কি হাতটি আরেকবার?
অচেনা গ্রামের ভেতর খানিক রোদে হাঁটা,
ক্লান্ত পথিকের বেশে,
দুঃখ – সুখের ঝুড়ি গুলো আবছা আলোয় মেলে ধরা।
হাঁটবে কি আবারো?
অচেনা গ্রামের আঁকাবাঁকা পথের ধারে।
না হয় শহরের ফুটপাত ধারে।
নিভু নিভু ল্যাম্পপোস্টের আলোয়।
এক রিকশায়।
মাঝেমধ্যে ছুঁয়ে দিবে অজুহাতে।
ভেজা চোখে বলবে কি?
একটা লাল গোলাপের কথা,
এই তো আমি এসেছি,
তোমার কবিতার শব্দ নয় ,
উপন্যাসের শেষ লাইনটির মতোই অধীর,
আগ্রহে একটু কি কাছে টেনে নিবে আমায়?
বলবে কি?
ভালোবাসি শব্দটা।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

Previous articleবৃষ্টিমূখর বিকেল
Next articleমরীচিকা
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here