আফসানা মিমি
এবারে যেনো একটু বেশীই শীত পড়েছে। রুক্ষ শীতল হাওয়াটা চামড়া চিরে বিধিয়ে জানান দিচ্ছে নিজের উপস্থিতি।দ্বিপ্রহর অলসভাবে গড়িয়ে যাওয়ার পর ছেলে কে নিয়ে স্কুল থেকে বের হয় স্বর্ণা।বাজার টুকু পেরুলেই তাদের বাড়ি।শাশুড়ি আর নিজের জন্য শাল, ছেলে মেয়ের মোজা আর শ্বশুরের ঔষধ কিনে ছেলেকে বগল দাবা করে বাড়ির পথে চললো সে।মনে চলে ছক কষা, কি কি করতে হবে এখন বাড়ি গিয়ে।নিজের ক্লাস শেষ করে গিয়ে মেয়ে কে গোসল করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে ছেলেকে নিয়ে যেতে।রান্নার সরঞ্জাম গোছাতে হবে, ছেলেকে খাওয়াতে হবে,বিকেলের নাস্তা, ঘর বাড়ি পরিষ্কার করা, এক গাদা কাপড় ধুয়ে শুকোতে দিয়ে এসেছে সেগুলো গোছানো, রাতের রান্না, শাশুড়ির পায়ে সেক দিতে হবে,শ্বশুরের ওযুর পানি, চা আর ও কতো কি,সাথে আবার তিন বছরের মেয়েটা তো আছেই। দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।মানুষটা আসার আগেই সব কাজ শেষ করতে হবে তাকে।বাসায় ঢুকেই সব কিছু গোছালো গোছালো মনে হলো।
ছেলেকে ফ্রেশ হতে বলে রান্নার সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখলো।কে গোছালো মনে এই প্রশ্ন আসার আগেই পিছন থেকে চোখ ধরলো কেউ,,
-জিমি কখন এসেছ তুমি?
- এইতো তুমি যখন বাবুকে আনতে গেলে তখন।
- আর এসেই কাজে লেগে গেছো?তুমিও না কতো দিন পর পর আসো কি একটু বিশ্রাম নেবে তা না।শোনো এইবার যতদিন আছো কোনো কাজ করবে না তুমি ঠিক আছে।আমি আছি বুঝলে?
- ওহ ভাবী আমি হলে বিশ্রামেই থাকি বুঝলে তোমার বরের টাকায় খাই দাই, ঘুরে বেড়াই আর পড়া শোনা করি। আর এইটুকু তো কাজ না,আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য একটু খানি ভালোবাসা।
বিকেলে নাশতা শেষে শাল টা দিলো শাশুড়িকে আর নিজের টা জিমি কে। মেয়েটা বড্ড ভালো বোনের থেকে কোনো অংশে কম নয়।
চুলে তেল দিতে বসেছে স্বপ্না,ছেলে মেয়ে দুটো জিমির সাথে খেলছে।আজ ভীষণ খুশি তারা হবেই না কেন তাদের ফুপি এসেছে যে আজ। শ্বাশুড়ি এসে তেল দিয়ে দিতে লাগলো তার। - মা কি করছেন?আপনি তো অসুস্থ,আমি একাই দিতে পারবো।আপনি বিশ্রাম নিন।
- এতো কথা কেনো বলো বাছা, চুপটি করে বসে থাকো তো দেখি।সবার জন্য খাটতে খাটতে নিজের দিকে খেয়াল নেই।
জোর করেই তেল দিয়ে দিতে লাগলো তার শাশুড়ি রুপি মা,হঠাৎ করেই ফুঁপিয়ে উঠলো স্বপ্না।কতো দিন মায়ের হাতে ওমন তেল দেয়া হয় না। - দেখো দেখি কাণ্ড কাদছ কেনো?
আদুরে কণ্ঠে ধমকে উঠলেন তিনি।সাথে সাথেই আর একটা কণ্ঠ শোনা গেলো। - কি হচ্ছে এখানে?
- এখানে ভালোবাসা হচ্ছে ভাইয়া।
রাতে বিছানা ঠিক করে চুলে বিনুনি করছে স্বপ্না। পিছন থেকে নতুন চাদরে পুরোনো হাতে আবৃত হলো সে। - কি দরকার ছিলো নতুন আনার।আমি তো এনেছিলাম।
- হ্যাঁ,সেটা যে জিমি কি দেয়া হয়ে গেছে সেটাও জানি।
- কি করছো?ছাড়ো।
- তোমরা সবাই তো ভালোবাসা বিলাচ্ছ আমি না হয় একটু ভালোবাসার উষ্ণতা বিলাই কি বলো।।
স্বপ্নার ঠোঁটে হাসি আর চোখে পানি।এই যে সে একসাথে হাসি কান্না মিলেমিশে একাকার করে ফেলছে, এটার নামই হয়তো ভালোবাসার উষ্ণতা।