মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ
রাত গভীর হয়েছে, চারদিকে নিস্তব্ধতা। ছোট্ট ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাজীব
তার বাবার কথা ভাবছে। বাবাকে মনে পড়ে গেলেই এক ধরনের মিশ্র অনুভূতি তার
হৃদয়ে আঘাত করে। বাবা কখনো খুব গম্ভীর, কঠিন আর কঠোর। খুব কমই হাসতে
দেখেছে তাকে। ছোটবেলায় যখন স্কুল থেকে ফিরে বাবা রেগে যেতেন, তখন মনে হতো
বাবা তাকে ভালোবাসেন না। কিন্তু বড় হতে হতে বুঝতে পারল, বাবার সেই রাগের
পেছনে লুকিয়ে ছিল এক গভীর ভালোবাসা।
বাবা ছিল এক বটবৃক্ষের মতো। বিশাল, শক্তিশালী, দৃঢ় তবে তার ছায়া যতটা
প্রশান্তিদায়ক, তার গম্ভীরতা ততটাই ভয়ের। সেই গম্ভীরতায় লুকিয়ে ছিল স্নেহের
কোমলতা, যেটা রাজীব তখনো বুঝতে শেখেনি। ছোটবেলায় যখন রাজীব কোন ভুল
করত, বাবা কঠোরভাবে শাসন করতেন। কিন্তু মায়ের কাছে শুনেছে, শাসন শেষে বাবা
নাকি রাতভর ঘুমাতে পারতেন না। নিজের ঘরের এক কোণায় চুপচাপ বসে রাজীবের
জন্য দোয়া করতেন।
আজ সেই বটবৃক্ষের শক্তি অনেকটাই কমে গেছে। বাবা এখন বয়সের ভারে নুইয়ে
পড়েছেন। তার চুলের কালো রঙ সাদা হয়ে গেছে, কিন্তু তার গম্ভীরতা এখনো রয়ে
গেছে। রাজীব এবার বুঝতে পেরেছে, সেই গম্ভীরতার নিচে কী বিশাল এক পৃথিবী
লুকিয়ে ছিল একটি ভালোবাসায় ভরা, শান্তির ছায়া।
বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, রাজীব তার পাশে বসে হাত ধরেছিল। বাবা তাকে
একবারের জন্যও তিরস্কার করেননি, বরং চোখে পানি নিয়ে বলেছিলেন, তোর জন্য
সবকিছু করেছি, রাজীব। তুই যেন মানুষ হতে পারিস, সেজন্যই এত কষ্ট করেছি।
রাজীব অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকাল। মনে হল, সেই কঠোর গম্ভীরতা ভেঙে
ভালোবাসার স্রোত বইছে। এতদিন যে বাবা তার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে সংকোচ
বোধ করতেন, আজ সেই বাবা অসুস্থ বিছানায় শুয়ে তার সন্তানকে ভালোবাসার কথা
বলে যাচ্ছেন।
রাজীবের মনে হল, বাবা সত্যিই বটবৃক্ষ। তার ছায়া শুধু রাগ আর গম্ভীরতায় ঢাকা
ছিল না; সেখানে ছিল পরম ভালোবাসা, যে ভালোবাসা তার সন্তানদের জন্য পৃথিবীর
সবকিছু ত্যাগ করতে পারে।
গল্পের শেষে রাজীব উপলব্ধি করল, বাবা আসলে কখনোই কঠিন ছিলেন না। তার
কঠোরতার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক কোমল হৃদয়, এক ভালোবাসার মূর্তি।
বটবৃক্ষের ছায়া যেমন প্রশান্তি দেয়, তেমনই বাবা ছিলেন তার পরিবারের সেই ছায়া,
যে ছায়ার নিচে সবাই শান্তি খুঁজে পায়।
১৬-১০-২০২৪ইং