Saturday, July 27, 2024
spot_imgspot_imgspot_img
Homeবিনোদনশহুরে কিশোর-কিশোরী মানসিক চাপে ভুগছে

শহুরে কিশোর-কিশোরী মানসিক চাপে ভুগছে

বাংলাদেশের ১৩-১৯ বছর বয়সী শহুরে ছেলেমেয়েদের ৬০ শতাংশের বেশি মাঝারি থেকে তীব্র মানসিক চাপে ভোগে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে।

এই স্ট্রেস বা মানসিক চাপের ফলে তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যেমন, নাগরিক এই কিশোর-কিশোরীদের একটি বড় অংশ স্থূলতা এবং বিষণ্ণতা বা অবসাদে ভোগে।

এছাড়া শহুরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে শারীরিকভাবে সক্রিয় মানে নিয়মিত খেলাধুলা এবং কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে মাত্র আড়াই শতাংশের কিছু বেশি কিশোর-কিশোরী।

বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন, পাবলিক হেলথ ইন্সটিটিউট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি সংস্থার করা যৌথ এই গবেষণায় দেখা গেছে, সন্তানদের এ ধরণের মানসিক চাপের ব্যাপারে পরিবারে বা অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম।

ফলে মানসিক চাপ সামলাতে পরিবার এবং স্কুলের সহায়তাও খুবই কম পায় তারা।

কী নিয়ে মানসিক চাপে থাকে কিশোর-কিশোরীরা?

গবেষণার একজন সহ-গবেষক আমব্রিনা ফেরদৌস বিবিসিকে বলেছেন, জরিপটি মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে পরিচালনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল বিএমআরসি গবেষণা নিবন্ধটি অনুমোদন দিয়েছে।

গবেষণাটি ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সাড়ে চার হাজারের বেশি কিশোর-কিশোরীর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে পরিচালনা করা হয়েছে।

বয়ঃসন্ধিকালে সারা পৃথিবীতেই ছেলেমেয়েরা নানা রকম মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। আর হরমোনের নানা পরিবর্তনের সাথে সাথে যুক্ত হয় পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশার চাপ।

ভালো স্কুলে শিক্ষার সুযোগ পাওয়া, ভালো ফলসহ শিক্ষা কার্যক্রমে সাফল্য এমনতর নানাবিধ চাপ তৈরি হয় ছেলেমেয়েদের ওপর।

মিজ ফেরদৌস বলছেন, গবেষণায় দেখা গেছে ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপ বোধ করে পড়াশোনা নিয়ে।

এছাড়া ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, স্কুলের পারফরম্যান্স এবং রোমান্টিক সম্পর্কের কারণেও মানসিক চাপে পড়ে তারা।

“পরীক্ষার রেজাল্ট, বাবা-মায়েদের প্রত্যাশা এবং স্কুলে পড়াশোনার চাপ থেকে তারা সবচেয়ে বেশি স্ট্রেস ফিল করে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে কোথায় পড়তে যাবে, কী করবে এ সব নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগে এই বয়সী ছেলেমেয়েরা।”

আবার নিজেদের শারীরিক অবয়ব মানে তাদের কেমন দেখাচ্ছে, তা নিয়েও এ বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা বিরাট স্ট্রেস তৈরি হয়।

“এর একটা কারণ হচ্ছে, শহুরে ছেলেমেয়েদের খাদ্যাভ্যাসে জাঙ্কফুড খাওয়ার প্রবণতা বেশি। আর খেলাধুলার সুযোগও কম, ফলে তাদের মধ্যে ওবেসিটির (স্থূলতা) সমস্যা প্রকটভাবে রয়েছে। ফলে এ নিয়েও ছেলেমেয়েরা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে,” বলছেন মিজ ফেরদৌস।

কারণ কী এই মানসিক চাপের?

সহ-গবেষক মিজ ফেরদৌস বলেছেন, তারা দেখতে পেয়েছেন কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদের মঙ্গে মা-বাবার মানসিক দূরত্ব, নাগরিক জীবনে একক পরিবার কাঠামোর কারণে একাকীত্ব, স্কুলে বা অবসর সময়ে সমবয়সীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, বুলিয়িং – এসব কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।

মানসিক চাপের কারণে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। প্রায়শই তারা নিজেদের সমস্যার কথা তারা পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারে না।

সমস্যা কথা শেয়ার করা, কিংবা কোন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে বন্ধু বা সমবয়সীদের ওপর নির্ভর করে।

বাড়তি ওজন কমানোর জন্য শারীরিক পরিশ্রমের কাজ কিংবা বিশেষজ্ঞ পরামর্শের বদলে খাওয়া কমিয়ে দেয়, যা পরে তাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে।

কতটা ব্যাপক এই সমস্যা?

গবেষণায় পাওয়া তথ্য বলছে, ২৬ শতাংশের বেশি শহুরে কিশোর-কিশোরীর ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি। এছাড়া ৩০ শতাংশের বেশি ছেলেমেয়ে দিনের বড় সময়টি বাড়ির ভেতরেই থাকে।

এছাড়া ঘরের বাইরে খেলাধুলা এবং কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে মাত্র ২.৬ শতাংশ কিশোর-কিশোরী।

শহর এলাকায় খোলা জায়গার অভাব এবং ইনডোর গেমের প্রতি আকর্ষণের কারণে ওবেসিটির সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

মিজ ফেরদৌস বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বাড়ছে, কিন্তু নানা ধরণের বিষণ্ণতা এবং অবসাদ কিংবা আত্মহত্যার মত ঘটনাও বাড়ছে।

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে এক ধরণের সামাজিক ট্যাবু কাজ করে, বেশির ভাগ মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না।

আর মা-বাবাদের এই কথা না বলা, বা বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কারণে ছেলেমেয়েদের জীবনে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসতে পারে।

অনেকেই না বুঝে কুসংসর্গে পড়ে বিপথগামী হয়, কেউ মাদকাসক্তিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, কেউবা আবার আত্মহণনের পথও বেছে নেয়।

তিনি বলছেন, “বয়ঃসন্ধিকালে তাদের সাহায্য দরকার। তারা যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা নিয়ে সচেতনতার কথা বলা হলেও এ নিয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পরিবার এবং স্কুলগুলোর ভূমিকা এখানে আরো অনেক জোরালো হওয়া দরকার।”

সমস্যা চিহ্নিত করে, একে এড়িয়ে না গিয়ে সমাধানের দিকে নজর দেবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে গবেষণায়।

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments