মনিরা খানম ঐশী
আকাশের ঈশাণ কোণে অল্প অল্প করে মেঘ জমেছে।চারিদিকে ঘন বাতাস বইছে। এমন এক অবস্থায় জহির বাজারে এসেছে দুটি লাউ আর কুমড়া বিক্রি করতে।জহিরদের অভাবের সংসার।বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন।বাড়িতে মা,ছোট বোন নিলু ছাড়া আর কেউ থাকে না। তাই জহিরকেই এক হাতে সব সামলাতে হয়।
মা আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করতো,এখন অসুস্থতার কারনে আর কাজে আর যেতে পারেন না।
হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করে।জহির বৃষ্টি একদমই সহ্য করতে পারে না। তাই বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। বাড়িতে ঢুকতেই সে দেখে তার মা তার জন্য বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছে।সামনে খাবার সাজানো।খাবার তেমন কিছুই না শুধু ডাল,ভাত। মা জহিরকে দেখে বললেন,”জহির বাবা হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়।” জহির মার কথা মতো টিউবওয়েল থেকে হাতমুখ ধুয়ে মার পাশে বসে। মা তাকে যত্ন করে ভাত বেড়ে দেন।মা তাকে কিছু একটা বলতে যাবেন তখনিই হুট করে মা কাশতে শুরু করে।মুখ দিয়ে অঝরে রক্ত পড়তে থাকে। মায়ের অবস্থা খারাপ হতে দেখে জহির আর নিলু মিলে মাকে ধরাধরি করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। জহির তখন ডাক্তার আনতে বৃষ্টির মধ্যেই বাহিরে বেড়িয়ে পড়ে। ডাক্তার তার মায়ের অবস্থা দেখে বলেন, গ্রামে ভালো চিকিৎসা হবে না,ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। পরদিন জহির কিছু টাকা ধার করে মাকে নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয়।সেখানে এক দূরসম্পর্কের মামার সহযোগিতায় জহির মাকে ডাক্তার দেখায়। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর জানায় তার মায়ের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছেে। চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন।দ্রুত চিকিৎসা না করাতে পারলে বাচানো সম্ভব হবে না।জহির মায়ের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করার জন্য এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। মা তখন বলেন, জহির আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না,আমি এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাব।এইদিকে মায়ের শরীর ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে।একদিন জহিরের সাথে গ্রামের এক মাতবরের দেখা হয়। মাতবর তাকে বলে,”জহির শুনলাম তোমার মায়ের নাকি বড় অসুখ করেছে, কথা সত্য নাকি?”জহির তখন বলে,”জ্বী চাচা, মায়ের অনেক বড় অসুখ। চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন যদি কিছু টাকা ধার দিতেন।” মাতবর তখন বলে,” ঠিকাছে তোমাকে কিছু টাকা ধার দিব তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তা সুদে আসলে পরিশোধ করে দিতে হবে।” জহির জানে এই টাকা কখনো পরিশোধ করতে পারবে না,তবুও জহির মায়ের জীবন বাচাতে রাজি হয়ে যায়। মাকে চিকিৎসা করাতে পারবে ভেবে জহির খুশিমনে বাড়ির পথে রওনা দেয়।ওইদিকে মায়ের শরীর আরোও খারাপ হতে থাকে। মাকে এমন ছটফট করতে দেখে নিলু প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।
অন্যদিকে জহির বাড়িতে ঢুকে মা মা করে মাকে ডাকতে থাকে।বাড়ির ভেতর থেকে কারোও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সে যখন ঘরে ঢুকে তখন সে স্তব্ধ হয়ে যায়।তার চোখের সামনেই মায়ের নিথর দেহ। পাশে তার ছোট বোন কাদচ্ছে।মাকে বাচানোর সমস্ত আশা শেষ হয়ে যায়।জহির হঠাৎ বুঝতে পারে তার চোখ দিয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।