back to top
Wednesday, March 26, 2025
Homeফিচারপাখির ভাষায় কথা বলে যারা

পাখির ভাষায় কথা বলে যারা

টি এইচ মাহির

মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে মুখের সাহায্যে,হাত নাড়িয়ে,বিভিন্ন অঙ্গিভঙ্গি করে মনের ভাব প্রকাশ করে।ঠিক তেমনি অন্যান পশু-পাখিরাও তাদের মনের ভাব প্রকাশে নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে।মনের ভাব প্রকাশের ভাষা জাতি দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।সকল ভাষার নিজস্ব বর্ণ আছে।কিন্তু তুরষ্কের এই গ্রামের মানুষ কথা বলে সুরে সুরে।পাখির শিসে।পাখির মতোই শিস দিয়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে।

তুরষ্কের উত্তরের এক পাহাড়ি গ্রাম কুসকয়।যেখানের ভাষার নাম “কুস দিলি”।কুস দিলি হলো এমন এক ভাষা যা শিস দিয়ে তৈরি।একে বলা হয় পাখির ভাষা।কেননা এই গ্রামের লোকেরা পাখির মতোই শিস দিয়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে।তাই এই গ্রামকে কুসকয় বা পাখির গ্রাম বলা হয়।

পাখির ভাষা বা কুস দিলি প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলে আসছে।গ্রামবাসীরা তাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে এই ভাষা পেয়েছে।গ্রামের অধিকাংশ লোক এই ভাষায় কথা বলে।যদিও তাদের প্রধান ভাষা তুর্কি।তবে সেখানে পাহাড়ি এলাকা এবং বাসিন্দাদের বাড়িগুলোর দূরত্ব বেশি হওয়ায় একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে শিস দিয়ে কথা বলে।সাধারণ ভাষায় কথা বললে পাহাড়ি উপত্যকা হওয়ায় সহজে একে অপরকে শুনতে পায় না।তাই শিস দিয়ে কথা বললে সহজ শোনা যায় এবং অনেক দূর থেকেও তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

মুখের ভেতর দুই আঙ্গুল দিয়ে তীক্ষ্ণ সুরে শিস দিয়ে কথা বলে,যা পাখির শিসের মতোই শোনায়।শিস দিয়ে সম্পূর্ণ বাক্য বলা যায়।এই ভাষার শব্দভান্ডারের কোন ব্যবহারিক সীমা নেই বা ব্যাকরণগত ত্রুটির সাথে মানুষকে সংগ্রাম করতে হয় না।এখানকার কৃষকরা এক মাঠ থেকে অন্য মাঠে যোগাযোগ করতে শিস ব্যবহার করে।শুধুমাত্র তাদের আঙ্গুল, দাঁত, জিহ্বা, ঠোঁট এবং গাল ব্যবহার করে লোকেরা দ্রুত সহজ জিনিস থেকে জটিল বিষয়গুলিও বলতে পারে।এই ভাষার বোধগম্যতা কথ্য ভাষার সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ,এনকোডিং পিচ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির বিশেষত্বের উপর নির্ভর করে। এভাবে কুশ দিলি হল তুর্কি ভাষাকে বিভিন্ন পিচ এবং সুরে শিস দেওয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করার একটি উপায়।

কুসকয় গ্রামের এই ঐতিহ্য UNESCO পাখির ভাষাকে ২০১৭ সালে Intangible Cultural Heritage তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৪ সাল থেকে,সেখানকার জেলা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তরে পাখির ভাষা শেখানো শুরু করে।১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর গ্রামটিতে ‘কুসদিলি উৎসব‘ নামে এক ধরণের উৎসব আয়োজন করা হয়। উৎসবে শিস বাজানোর প্রতিযোগিতাও হয়।কুস দিলি শেখার জন্য গ্রামে নির্দিষ্ট প্রোগ্রামও হয়।যেখানে পর্যটকদের এবং বহিরাগতদের পাখির ভাষা বা কুস দিলি শেখানো হয়।এই ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।২০১৯ সাল থেকে তুরস্কের গিরেসুন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন অনুষদে কুস দিলি নামে একটি ঐচ্ছিক কোর্স হিসেবেও পড়ানো হয়।

পাখির ভাষায় যে শুধু কুস দিলি গ্রামের বাসিন্দারা কথা বলেন এমন নয়।এমন আরো অনেক ভাষা আছে যেখানে শিস এবং সুরের সাহায্যে কথা বলা হয়।সিলবো গোমেরো নামে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে ব্যবহৃত হয় এমন এক ভাষা।যেখানে শিসের সাহায্যে স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহার করা হয়।সিলবো গোমেরো ২০০৯ সালে ইউনেস্কো স্বীকৃতি পেয়েছে। গ্রিসের ইউবিয়ার আন্তিয়া গ্রামের বাসিন্দারা শিস দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে।ইথিওপিয়ার ওমো উপত্যকায় এখনও বেশ কয়েকটি শিস দেওয়া ভাষা শোনা যায়।তাছাড়া বিভিন্ন সময় যোদ্ধারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য শিস দিয়ে কথা বলতো।যাতে প্রতিপক্ষ বুঝতে না পারে।রেডিওতে সংকেত পাঠানোর সময় শিস দিয়ে পাঠাতো অস্ট্রেলিয় সৈন্যরা।আবার সাইবেরিয়ান ইউপিক শিকারীরা সমুদ্রে শিকার করার সময় হুইসেল ব্যবহার কমান্ড দেয়।

Facebook Comments Box
Previous article
Next article
এই ধরণের আরো লেখা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

প্রতিধ্বনির বর্তমান মূল্যprotiddhonii.com estimated website worthprotiddhonii.com domain valuewebsite worth calculator

সাম্প্রতিক লেখা

Recent Comments