ইস্টিশানঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

0
746

রেল ইস্টিশানে বসে আছেন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।ইদানিং তাকে প্রতি বৃহস্পতিবার রেল ইস্টিশানে বসে fake watches থাকতে দেখা যায়।তার কারণ তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার সিলেট থেকে ঢাকায় যান।ঘটনাটা বেশ best replica watches কিছুদিন আগের।শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হলের নাম “জাহানারা ইমাম” হল করার প্রতিবাদে তখন আন্দোলন চলছে। একদল নামের পক্ষে আরেক দল বিপক্ষে। বিষয়টা এমন দাড়ালো যে এক পর্যায়ে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বাসায় পযর্ন্ত বোমা মারা হলো।নিজের চেয়ে নিজের সন্তানদের সব বাবা Cartier replica watches মাই বেশি ভালবাসেন (ইদানিংকার বাবা মাদের কথা আলাদা,যারা পরোকীয়া প্রেমের জন্য নিজের সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনা)। স্বভাবতই মুহাম্মদ জাফর ইকবালও তার দুই সন্তান ইয়েশিম এবং নাবিলকে অনেক ভালবাসেন এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদেরকে ঢাকায় রেখে আসলেন। সেই সন্তানের টানে প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি এবং ইয়াসমিন হক ম্যাডাম ছুটে যান ঢাকাতে।

এমনই একটা দিন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। পত্রিকা হাতে ছোট্ট একটি ছেলে তার সামনে আসলে তিনি একটি পত্রিকা কিনলেন এবং ছেলেটিকে দুটো টাকা বেশি দিলেন।জনপ্রিয় এই লেখক ও অধ্যাপককে অবাক করে দিয়ে সেই ছোট্ট ছেলেটি প্রায় হুকুমের স্বরে বলে উঠলো “দুই টাকা বেশি দিলেন কেন?আমিকি ভিক্ষা করি?” ছেলেটির সাথে তিনি কথা বলেছিলেন। ছেলেটার নাম জালাল।তিনি অবাক হয়ে জালালকে দেখলেন তার সাথে কথা বললেন। জালাল চলে যাওয়ার পরও জালালের গল্পটা মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখক সত্ত্বার মধ্যে জেগে থাকলো।এভাবে বেশ অনেক দিন ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে ঢাকা সিলেট যাওয়া আসা করতে হলো। সেই আসা যাওয়ার মাঝে নিয়মিত ইস্টিশানের সেই অনাদর অবহেলায় বেড়ে ওঠা জালালদের সাথে তার কথা হতো।বেশ ভাল বন্ধুত্বও হয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে।

এক জীবনে মানুষকে কত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আসেন।লেখক মনে কত ভাবনার উকিঝুকি থাকে।তিনিও সেভাবে কত কিছু নিয়ে ভাবছিলেন। হঠাৎ একদিকে চোখ পড়তেই তিনি দেখলেন একদল ছোট ছোট ছেলে মেয়ে অনেকটা মিছিলের মত করে তার দিকে এগিয়ে আসছে। খুব কাছে আসলে তিনি দেখলেন মিছিলের মত করে আসা ছেলে মেয়ে গুলো ওই স্টিশানেই বেড়ে ওঠা সেই সব বাচ্চা যাদের সাথে বিগত কয়েক মাসে প্রতি বৃহস্পতিবার দেখা হতো কথা হতো এবং ভাল সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সেই বাচ্চাদের মিছিলের সবার সামনে জালাল নামের সেই ছেলেটি।তার হাতটা পিছনে রাখা। যেন প্যারেডে সে আরামে দাড়িয়েছে। উৎসুক দৃষ্টিতে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। সবার চোখে মুখে আনন্দ খেলা করছে। জালাল কথা বলে উঠলো।“আপনার জন্য একটা উপহার এনেছি”। উপহার কথাটা শুনে জাফর ইকবাল মুগ্ধ হয়ে গেলেন।জালাল তখন তার পিছনে লুকিয়ে রাখা হাতটা সামনে মেলে ধরলো। তার হাতে তখন একটা চিপ্সের প্যাকেট।সে সেই চিপ্সের প্যাকেট মুহাম্মদ জাফর ইকবালের হাতে দিল।ছোটদেরবন্ধু এই মানুষটি মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন।

এক জীবনে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল দেশে বিদেশে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন, অনেক উপহারও পেয়েছেন। কিন্তু সেদিন জালাল আর তার সাথে আসা অবহেলিত বাচ্চাগুলোর দেওয়া সামান্য এক প্যাকেট চিপ্সই তার জীবনে পাওয়া সব থেকে দামী উপহার এবং এই সুলেখক, ছোটদেরবন্ধু মানুষটি সেটা নিজ মুখে স্বীকার করেছেন।

পরিস্থিতি যখন শান্ত হয়ে গেল, তখন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার ফিরে গেলেন সিলেটে।স্থায়ী ভাবে সেখানে বাস করতে শুরু করলেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া আর ঢাকায় আসা যাওয়া হতোনা।কিন্তু লেখকের মন থেকে জালালের ঘটনা গুলো মুছে যায়নি।তারই ফলশ্রুতিতে লেখা হলো “স্টিশান” নামে অসাধারণ একটি কিশোর উপন্যাস। লেখক যে লেখাটি নিজ চোখে দেখা এবং উপলব্ধিজ্ঞান থেকে লিখেছেন।উপন্যাসের শেষ অংশে সেটার অকপট স্বীকারোক্তিও চোখে পড়বে। তিনি বলেছেন উপন্যাসটির শেষ অ্যাডভেঞ্চারটুকু কল্পনার রঙে লেখা, বাকি সবটাই তার চোখে দেখা।

“ইস্টিশান” বইটি আমি অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার পড়া শুরু করেও পড়তে পারিনি।চার পাঁচ পাতা পড়ার পর কেন যেন আমাকে টানেনি লেখাটা। আজ যখন আর কোন বই হাতের কাছে নেই তখন “ইস্টিশান” জোর করে পড়তে শুরু করলাম এবং দশ পনের পৃষ্ঠা পড়ার পর তলিয়ে গেলাম স্টিশানের একেবারে গভিরে।অবাক হয়ে ভাবলাম এই অসাধারণ বইটিই বেশ কয়েকবার পড়া শুরু করেও ভাল লাগেনি বলে পড়তে পারিনি!!!!ইস্টিশানেতো হরহামেশাই যেতাম।কমলাপুর রেল স্টিশান থেকে সিয়াম আমাকে কতবার ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছে তার কোন সীমা নেই। আমিওতো ওই সব অবহেলীত শিশু কিশোরদের খুব কাছ থেকে দেখেছি।ওদের যে কষ্ট আছে তা জানতাম কিন্তু কোনদিন ওভাবে ভেবে দেখিনি ওদের অতটা কষ্ট।

মুহাম্মদ জাফর ইকবাল খুব কাছ থেকে তার বড় হৃদয় দিয়ে যে জালালদের দেখেছেন,যে জালালদের সাথে বন্ধুর মত মিশেছেন এবং তাদের কষ্ট গুলো বুকে ধরে রেখে শেষে ভার বইতে না পেরে “ইস্টিশান” বইটি লিখে কিছুটা ভার কমিয়েছেন সেই “ইস্টিশান” না পড়লে দুঃখের রংটা সব সময় হয়তো আমার চোখে তামাটেই থেকে যেত।

আমাদের চার পাশে কতনা জালালের বসবাস। আমরা কয়জনেরইবা খোঁজ পাই,কয়জনেরইবা খোঁজ রাখি।একজন সু লেখক এবং ছোটদেরবন্ধু হিসেবে সেই কাজটা বেশ ভালই করেছেন তিনি। বইয়ের শেষে তাই কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করেননি এই সুলেখক। তিনি লিখেছেন জালালের এই গল্পটা কোন বানোয়াটি গল্প নয়। এটা তার নিজের দেখা গল্প।শুধু মাত্র শেষ অধ্যায়ে বর্ণিত অ্যাডভেঞ্চারটি তার কল্পনা প্রসুত। তিনি আরো লিখেছেন জালালদের নিয়ে যে বইটা লিখলেন তা কোন দিন জালালেরা পড়ে দেখবেনা এমনকি হয়তো জানবেইনা যে তাদের নিয়ে কেউ একজন বই লিখেছে।

পাঠক মাত্রই জালালের এই গল্পটা পড়ে মুগ্ধ হবেন এবং কোন কোন পর্যায়ে চোখের কোণায় জল জমে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

জালাল একটা ছোট্ট ছেলে।যার বাবা নেই,চাচার লাথি গুতো সহ্য করতে না পেরে যে শহরে চলে এসেছে। যার বোনটা না খেয়ে মারা গেছে এবং যার মাকে জোর করে অন্য একজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।যে ছোট্ট ছেলেটি দেখেছে সবুজ নামে তার থেকে এক বছর বড় ছেলেটিকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে এবং একটুর জন্য সে নিজেও হয়তো খুন হয়ে যেতে পারতো। ইস্টিশানে জালাল যাদের সাথে থাকে তারা সবাই প্রায় সমবয়সী কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন জালাল তাদের অভিভাবক হয়ে গেল। এক মিষ্টি আপার সাথে তাদের দেখা হয়েছিল যিনি না চাইতেই প্রত্যেককে দুইটাকার একটা নতুন নোট দিতেন। সেই আপার কারণেই বদলে গেল জালালের জীবন। জীবনের ঝুকি নিয়ে সে একটা বাচ্চা মেয়েকে ট্রেনে কাটা পড়ার হাত থেকে বাঁচালো এবং একদল পাচার কারীর থেকে একদল শিশুকে বাঁচালো।

“ইস্টিশান” নামের আড়ালে জালাল ঢাকা পড়েনি। তাই পাঠক মাত্রেরই মনে হবে এই বইটার নাম “ইস্টিশান” না হয়ে “একজন জালালের গল্প” টাইপের কিছু হলে ভাল হতো।

বইটির শুরুটা যেভাবে হয়েছে তা হয়তো পাঠককে সেভাবে টানবেনা। মনে হবে ঠিক মুহাম্মদ জাফর ইকবালীয় ঢংএর লেখা নয় সেটা।যে ভুলটা আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছিল। কিন্তু দশ পনের পৃষ্ঠা পড়ার পর ধারণা পাল্টে যাবে।গল্প থেকে তখন আর পাঠক বেরিয়ে আসতে পারবেনা। মনে হবে এটা বুঝি কোন জালালের গল্প নয়, এটা যেন তার নিজেরই গল্প। এখানেই লেখকের সার্থকতা।

“স্টিশান” বইটির শেষ অংশে লেখকের সরল স্বীকারোক্তিকেও অনেকে বিজ্ঞাপন,বইয়ের কাটতি বাড়ানোর কৌশল বলে চালিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তারা কখনোই ভেবে দেখেন না যে পাঠক বই কেনে প্রথম দিকটা দেখে। শেষ অংশ পড়ে দেখে বই কেনে এমন পাঠক মেলা ভার। তাই লেখক যদি বিজ্ঞাপন বা বইয়ের কাটতির কথা চিন্তা করতেন তবে শেষ কথা গুলো আগেই বলে নিতে পারতেন।

যে গল্পটি ভালবেসে লেখা হয়েছে সেটির নাম”ইস্টিশান” যেখানে একটা অসাধারণ আপার দেখা মিলবে আর দেখা মিলবে জালাল নামের তের বছরের এক কিশোরকে।যে কোন কিছুকেই পরোয়া করেনা,যে কারো বিপদে সে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে।জালালকে খুব মনে পড়ছে,খুব মনে পড়ছে,খুউব………..।

………………….

জাজাফী

৬ মার্চ ২০১৬

Previous articleপ্রিয়াঙ্কা দুবের নো নেশন ফর উইমেন
Next articleপাঁচ হাজার বছরের পুরাতন মানুষ তাঁরাও শরীর ট্যটু বা উল্কি আঁকত !
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here