Friday, November 22, 2024
Homeসাহিত্যগল্পসফলতা ছুঁয়েছি কিন্তু তা পেয়ে আমি নেই

সফলতা ছুঁয়েছি কিন্তু তা পেয়ে আমি নেই

কাজী মোঃ ফুয়াদ হাসান 

_________________

দিনশেষে কালো রাত। আবার ও কালো রাত এর পর দিন। এভাবে যাচ্ছে, সময় হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হাসান।দরিদ্র হওয়ায়,সবাই তাকে অবহেলা করে,তার অসুখে কেউ খবর নেই না। শত কষ্টে, চেষ্টা করে, হাসান উকালতি পড়া শেষ করে। এখন ও মূল পরীক্ষা আছে। যা পাশ করলে সে পুরোপুরি উকিল। ঘরে তার মা, বাব,ভাই,বোন আছে। সংসারোর বড় ছেলে হাসান।তাই তার উপর অনেক দায়িত্ব। তার মা অসুস্থ প্রায় বছর খানেক,বাবা পঙ্গু, চলাফেরা করতে পারে না। এক ভাই পড়ালেখা করে। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। হাসান পড়ালেখার পাশাপাশি, একটি হোটেলে চাকরি করতো। শত আঘাতে,অবহেলায় চাকরি করতো।অনেক সময় ভুল করে,কাঁচের গ্লাস ভাঙ্গলে,মালিকের গালি শুনতে হতো,খাবার দেওয়ার একটু দেরি হলে,মানুষ ও নানারকম কথা শুনাতো,মাঝে মাঝে গায়ে ও হাত তুলতো,কী করার,মালিক মাঝে মাঝে হোটেল ও ঝাড়ু দেওয়াতো।কী আর করার। চাকরি যে করতে হবে। সংসারে অনেক খরছ।

এই টাকা দিয়ে সংসারের খরছ হয় না,দিনশেষে হাসান সংসারের খরচ দিয়ে, তার নিজের জামা, কাপড়,জুতা ও কীনতে পারে না।ছিঁড়া জামা,ছিঁড়া জুতা,নিয়ে যাচ্ছে তার দিন।আজ সোমবার, এই বারে নেমে, এলো তার দুঃখ।তার মা চলে যায় পৃথিবী ছেড়ে, এই কী? যন্ত্রনাময় দিন?বুকে কী ব্যাথ্যা কেউ বুঝবে না।যার আপন মানুষ যায়,সে বুঝে যন্ত্রনা।তার মায়ের জানাজা পড়ে,তার মাকে কবরে শেষ বিদায় দিয়ে এলো।মন টা ভালো নেই হাসানের। তার মা চলে গেছে,তার বাবা ও অসুস্থ। এভাবে করে, কেটে যায় ছয় মাস।হাসান,হোটেলে কাজ করছে,হুট করে,কেউ একজন বলে গেলো,তার ছোট ভাই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়।হাসান,কাজ ছেড়ে দৌড়ে বাড়ি যায়,দেখে তার ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে,আবারও প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রনা।হাসানের বোনের ও নাকী একটা অসুখ হয়েছে। আজ হাসানের ফাইনাল পরীক্ষা, পরীক্ষা দেওয়া শেষ  হলো।কিছু মাস পর রেজাল্ট দিবে।

এখন ঘরে,হাসান আর তার বাবা থাকে,একটা ভাঙ্গা ট্টিনের ঘড়ে,মাঝে মাঝে খুব করে বৃষ্টি হয়,ট্টিনের ফোঁটা দিয়ে, বৃষ্টির পানিতে তারা ভিজে যায়।এভাবে যাচ্ছে দিন।হোটেলে কাজ করে যাচ্ছে সময়,সাথে কিছু বড় উকিল কে সময় দিয়ে, বড় উকিল রা কেউ কেউ ভালো মানুষ, হাসান কে মায়া করে,কেউ কেউ  আবার ভালো মানুষ তবে তাদের হৃদয়ে মায়া নেই, হাসান কে দিয়ে, চা, বিস্কুট, সিগেরেট আনায়।আজ মঙ্গলবার, হাসানের রেজাল্ট দিলো।হাসান পরীক্ষার উর্ওীণ হলো।বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছে,তার বাবার জন্য।হাসানের বাসার দরজা ভাঙ্গা,বাসায় প্রবেশ করে দেখে,অনেক মানুষের ভিড়, তার বাবা মারা গেছে,আবার ও হাসানের হৃদয় ভেঙ্গে গেলো।আবার ও প্রিয় মানুষ, হারানোর যন্ত্রনা।এখন তার ছোট বোন বাদে, তার আর কেউ  নেই।প্রেমিকাও নেই,হোটেলে কাজ করাতে কেউ তাকে ভালোবাসে নিই।হাসানের নামের সাথে যুক্ত হলো,এডভোকেট হাসান।তবে তার ব্যর্থতার শেষ নেই,একটা মামলাও জিততে পারছে না,শুধু হারছে,তাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এখন হাসান,হোটেলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।যে টাকা আয় করে,তা তার বোন ও গরীব দুঃখীদের দেয়।হাসান,মাঝে মাঝে খুব করে কাঁদে,হাসান একা,চাঁদের মতো একা,তবে চাঁদ আলো দিয়ে রাতের অন্ধকার আকাশকে আলোকিত করে রাখে।তেমনই হাসান ভালোবাসা দিয়ে,হতদরিদ্র মানুষ দের আগলে রাখে।আজ একটা মামলার রায়,মামলাটি হলো,মিথ্যা মামলায় একটা ছেলে খুনী।আজ হাসান, মামলাটি জিতেছে,ছেলেটিকে নির্দোষ প্রমান করতে।একটি পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে পারলো।হাসান বাড়ি যাচ্ছে, বাড়ি যাওয়ার পথে, হাসান,ট্টাক চাপায় মারা যায়।তার সফলতায়,চলে যায়।তার জানাজায় তার প্রিয় কেউ রইলো না,ছিলো তার ছোট বোন,মেয়েরা জানাজা পড়তে পারে না।খুব করে বৃষ্টি হচ্ছে, হাসানের জন্য তার বোন কাঁদছে।আর কী কেউ কাঁদবে না?

যাদের মামলা জিতিয়েছিলো,তাদের পরিবারের কেউ বাহতদরিদ্র কেউ, কাঁদবে না,হয়তবা তারা জানলে মন খারাপ করবে কাঁদবে না হয়তবা,সব কিছু পেয়ে ও মানুষ হারিয়ে যায়,পেয়েও প্রিয় কারো জন্য কিছু করতে পারে না,তারা সফলতা দেখে না,হারিয়ে যায়!!

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments