Thursday, November 21, 2024
Homeবিদেশে উচ্চশিক্ষাএমআইটিতে পড়তে চাইলে

এমআইটিতে পড়তে চাইলে

এ বছর টানা দ্বাদশবারের মতো কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিংয়ে প্রথম হয়েছে এমআইটি। এ বছর এই র‍্যাংকিংয়ে টেকসই চর্চা, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক– এই ৩টি মানদণ্ডের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। 

শিক্ষা ও গবেষণাখাতে আগের মতোই অবদান রেখে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে এগিয়ে যাচ্ছে ১৯১৬ সালে বোস্টন থেকে কেমব্রিজে স্থানান্তরিত এমআইটি তথা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।

এমআইটির বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ

এমআইটি বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ) এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি নিজস্ব গোষ্ঠী। মূলত বিদেশ-বিভূঁইয়ে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে একত্র করে রাখতে এবং ঘরোয়া অনুভূতির জন্য ক্যাম্পাসের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশ নিয়ে আসতে এই অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম। জাতীয়, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় বহু উৎসবই পালন করা হয় তাদের পক্ষ থেকে। যেকোনো সমস্যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে মোকাবিলা করতে পারার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং প্রয়োজনে প্রায় সব ধরনের সাহায্য করে থাকে। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তহবিল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র– সব পরিসরেই বিএসএ বেশ সক্রিয়। এমনকি ভর্তির আগেও যেকোনো বিষয়ে তথ্য বা সহায়তার জন্য [email protected] ই-মেইল অ্যাড্রেসে যোগাযোগের মাধ্যমে এই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। 

স্কলারশিপ এবং অন্যান্য

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে এমআইটিতে কোনো স্কলারশিপ না থাকলেও বিদ্যমান এমআইটি স্কলারশিপে বিদেশি সব শিক্ষার্থীরই আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এই স্কলারশিপগুলোতে পূর্ণাঙ্গ ফান্ডিং দেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘এমআইটি স্কলারশিপ’ প্রধান। ২০১১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্কলারশিপটির গড় অর্থায়ন ছিল শিক্ষার্থীপ্রতি প্রায় ৫৪ হাজার মার্কিন ডলার। 
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, তাদের ৫৮ শতাংশ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীই এই স্কলারশিপ পেয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত ‘কলেজ বোর্ড স্কলারশিপ সার্ভিস’ বা সিএসএস প্রোফাইলে যারা আবেদন করবেন, তাদের সবারই এই স্কলারশিপের জন্য বিবেচনা করা হবে। এমআইটিসহ অন্যান্য ইউনিভার্সিটিতে এই প্রোফাইলে নির্ধারিত তালিকা থেকে শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়।

এটি ছাড়াও এমআইটি দ্বারা পরিচালিত ৪টি ফেডারেল গ্রান্ট আছে– ফেডারেল পেল গ্রান্ট, ফেডারেল সাপ্লিমেন্টাল এডুকেশন অপরচুনিটি গ্রান্ট, টিচার এডুকেশন অ্যাসিস্টেন্স ফোর কলেজ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন গ্রান্ট ও ইরাক অ্যান্ড আফগানিস্তান সার্ভিস গ্রান্ট।

আবেদনের সময় খেয়াল রাখবেন

  • ভালো মানের সিজিপিএ ও এসএটি বা এসিটি স্কোর থাকতে হবে। ১৫৭০ এসএটি বা ৩৬ এসিটি স্কোরের নিচে থাকলে ভর্তির সম্ভাবনা কমে যাবে।
  • রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র যত বিশেষ হবে, ততই এমআইটিতে ভর্তির সম্ভাবনা বাড়বে। শুধু শব্দসীমায় যথেষ্ট নয় বরং শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকা স্বাতন্ত্র্য যাতে এই লেটারে ফুটে ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 
  • সমাজের প্রতি বিভিন্ন অবদানকেও এমআইটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মনে করা হয়। তাই শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনে কাজ করে থাকলে, আবেদনপত্রে সে বিষয়ক তথ্যও যোগ করে দেওয়া দরকার। এমআইটি নেতৃত্বের গুণাবলী আছে, এমন শিক্ষার্থী বেশি চায়।
  • ‘এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটি’ এক্ষেত্রে অনেক কাজে দেয়। শিক্ষার্থী যে শুধু গতানুগতিক বইপড়া বিদ্যা নিয়েই সন্তুষ্ট নয়, তার প্রমাণ রাখতে হবে। বাড়তি কোনো পুরস্কার বা সনদ পেয়ে থাকলে সেটি উল্লেখ করতে হবে।
  • নিজস্ব গবেষণা বিষয়ক কাজ বা প্রকাশিত লেখালেখি থাকলে সেটি শিক্ষার্থীর অন্যতম দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই সেগুলোর উল্লেখও জরুরি।

ইংরেজিতে দক্ষতা 

যেহেতু এমআইটির সব পড়াশোনাই ইংরেজিতে, তাই শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দক্ষতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আবেদনের পূর্বে টোফেল বা জিআরই এবং আইএলটিএস টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে। টোফেলের ক্ষেত্রে অন্তত ১০০ আইবিটি (ইন্টারনেট বেস্ট টেস্ট) পেতে হবে এবং আইএলটিএসের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭ স্কোর তুলতে হবে। 

প্রয়োজনীয় নথিপত্র

  • ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে
  • আগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সবগুলো একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট।
  • যে শিক্ষকেরা ‘মেজর’ বিষয়ে পড়িয়েছেন, তাদের কাছ থেকে দুটি রেকমেন্ডেশন লেটার।
  • নিজের পছন্দ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ব্যক্তিগত নিবন্ধ লিখতে হবে।

এমআইটিতে পড়াশোনার বিষয়কে এক কথায় বলা চলে ‘স্টেম’– বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞান। এতে আছে কম্পিউটার সায়েন্স, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, বিমানবিদ্যা, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, জীববিজ্ঞান ইত্যাদিসহ আরওে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয়কে ‘মেজর’ ধরে পড়াশোনার সুযোগ আছে এতে। 

এখানে প্রতি ৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য আছেন ১ জন শিক্ষক এবং এর প্রায় ৭০ শতাংশ ক্লাসরুমেই ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রাখা হয় না। শিক্ষার মানের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করে না এমআইটি কর্তৃপক্ষ।

তথ্যসূত্র: এমআইটি, ফোর্বস, ইউএসনিউজ

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments