এ কোন অন্ধকার

0
626

দিনের আলো ম্লান হয়ে এসেছে।রাত আর দিনের মাঝের এই সন্ধ্যাটুকু জয়ীকে বিষণ্ন করে তোলে।কেমন আনমনা হয়ে যায়।ও কি তবে অন্ধকারকে ভয় করে?

জয়ী চাকরি করে।অফিস থেকে বাসা কাছে বলে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে পারে।শপিং এ গেলে অবশ্য কোন কোন দিন দেরি হয়ে যায়।রাতে বাসায় ফিরে রান্না করে খেয়ে দেয়ে কিছু পড়াশোনা ও লেখালেখি করে।পত্রিকায়মাঝে মাঝে ওর লেখা বের হয়।ছুটির দিনগুলোতে বন্ধুদের সাথে বাইরে বের হয়।সব মিলিয়ে ভালই কেটে যায়।তবে রাতে অনেক সময় ভয় লাগে।ও ভুত বিশ্বাস করে না।ওর মানুষকেই ভয়।যেদিন ভয় লাগে টিভি ছেড়ে ঘুমায়।পাশের বাসার সাথে ওর সম্পর্ক ভালই।বিশেষত মহিলার সাথে।ভদ্রলোকও ভালো।

একদিন বৃষ্টি হচ্ছে।রাত নয়টা।ও গল্পের বই পড়ছে।কলিংবেলের শব্দে ও উঠলো।রাতেতো সাধারণত কেউ ওর বাসায় আসে না।কী-হোলে দেখলো পাশের বাসার ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন।একটু ইতস্তত করে দরজাটা খুললো।ভদ্রলোক বললো আমার স্ত্রী বাসায় নেই।চা কোথায় রেখেছে পাচ্ছি না।আপনি যদি একটু চা পাতা দিতেন।জয়ী অবাক হলো।কিন্তু ভদ্রতা বজায় রেখে বললো হ্যাঁ আমি দিচ্ছি।ও কিচেন থেকে চা নিয়ে এসে দেখে ভদ্রলোক সোফায় বসে আছে।ও একটা বক্স এগিয়ে দিলো।নিতে গিয়ে ভদ্রলোক ওর হাত চেপে ধরলো।কী করছেন! ছাড়ুন।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।ওর রাগ উঠে গেলো।বললো আপনি এখনি বের হয়ে যান।আর না হয় আমি চিৎকার করবো।লোকটা বললো, লাভ হবে না।

আমার বাসায় কেউ নেই।আর তুমিতো একাই থাকো। এই বলে ওকে জড়িয়ে ধরলো।জয়ী ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।ফোনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ততোক্ষণে সে তার মুখ চেপে ধরেছে।জয়ীর হঠাৎ মনে পড়লো ও সবসময় খাটের নিচেয় একটা দা রাখে।লোকটা ওকে খাটের কাছে নিয়ে গেল।জয়ী এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে খাটের নিচ থেকে দা বের করে লোকটার হাতের উপর মারলো।ওর হাত কাঁপছিল রক্ত দেখে।দেখলো লোকটা হাত চেপে দরজা খুলে বের হয়ে যাচ্ছে।কতক্ষণ কেটেছে জয়ীর মনে নেই।সংবিৎ ফিরে পেয়ে সে দেখলো দরজা খোলা।এসে দরজা বন্ধ করলো।

অনেক রাত হয়েছে।সামনে পুরো অন্ধকার রাতটা পড়ে আছে।ওর প্রচন্ড ভয় করছে।ও কোন সমাজে বাস করে! মেয়েদের কোন নিরাপত্তা নেই।

জয়ী ওর হারানো সাহস ফিরে পাচ্ছে।ও মনস্থির করলো,এভাবে একটা অমানুষের কাছে ও হেরে যাবে না।সমাজে অনেক ভাল মানুষও আছে।ও আইনের আশ্রয় নেবে।হয়তো কেউ কেউ অন্য চোখে ওর দিকে তাকাবে।কিন্তু ও হার মানবে না।ও দৃপ্তপায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

লতা হামিদ

২৭ অক্টোবর ২০১৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here