-সাঈদুর রহমান লিটন
মাহিমের জন্ম বস্তিতে। মাহিমের বাবা রাস্তায় ফেরি করে চা বিক্রি করতো। মাহিম যেদিন জন্ম নেয় সেদিন মাহিমের মায়ের প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছিলো। মাহিমের বাবা ঔষধ আনার কথা বলে আর বস্তিতে ফেরে নাই। মাহিমের মা সেদিন মরতে মরতে আর মরে নাই। মাহিমের মা যেখানে থাকতো তার পাশে একজন পাগলি থাকতো। মাহিমের মায়ের কান্না শুনে এগিয়ে আসে। সেই ই সেবা শুশ্রূষা করে মা ছেলেকে ভালো করে তোলে। জীবনে কখন কে কার উপকারে আসে বলা যায় না। জীবনের দীর্ঘদিন এই পাগলি এখানে থাকায় অনেকের সাথে পরিচয় ছিলো। অনেকে তাকে চিনতো। সবাই তাকে মজিরণের মা বলে ডাকে। মজিরণ পাগলির মেয়ের নাম। পাগলি কোত্থেকে এসেছে কেউ জানে না। এই বস্তির কাছেই তার মেয়ে হারিয়ে গেছে। রাস্তায় বসে মজিরণ মজিরণ বলে কান্নাকাটি করতে ছিলো সেই থেকে সবাই তার মেয়ের নাম মজিরণ হিসেবে জানে।দীর্ঘ কয়েক যুগ সে এখানে আছে মজিরণের জন্য। তার ধারণা মজিরণ একবার ফিরে আসবে। যদি ফিরে আসে, তাকে যদি না পায় তাহলে কোথায় যাবে? হারিয়ে যাবে, বা কেউ নিয়ে যাবে? মজিরণের মা পৃথিবীর সব কিছুই বোঝে। কিন্তু মজিরণ যে আর ফিরবে না।সেটা বোঝে না। কয়েক যুগ পার হয়ে গেছে। মজিরন বড় হয়ে গেছে তা মজিরণের মা মেনে নিতে পারে না।
সেই মজিরণের মা মাহিমের মার দূত হয়ে এসেছে।মাহিমের মাকে এক সাহেবের সাথে কথা বলে ঝিয়ের কাজ ধরিয়ে দিয়েছে।
মাহিমের মা নিয়মিত কাজে যায়। সকাল বিকাল কাজ করে।
কাজে গেলে মাহিম কে পাগলিই দেখে।
বস্তির মানুষ তা ভালো চোখে দেখে না। কবে যে পাগলি মাহিম কে নিয়ে চলে যাবে সেই ভয় দেখায় মাহিমের মা কে।
মাহিমের মা কানে নেয় না। মাহিমের মা ভাবে মজিরণের মাও মাহিমের আরেক মা। সে যদি না থাকতো তাহলে তারা দুই জন বেঁচে থাকতো না। বস্তির লোক কি বলে না বলে তা শোনার সময় মাহিমের মার নাই।
নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে সে। তার এতটুকু চিন্তা নাই মাহিম কে নিয়ে। কারণ মজিরণের মা আছে।
মজিরণের মা চেয়ে চিনতে খায়। এখন সেই সময় টুকু ও নাই। তবু মাহিমের মা ফিরলে যায়।
মাহিমের মা প্রায় প্রতিদিন কিছু খাবার নিয়ে আসে। যে খাবার তাকে খেতে দেয় তা না খেয়ে নিয়ে আসে।আর পাগলি যা পায় তাই ভাগ করে তারা খেয়ে নেয়।
দিন গুলো ভালই যাচ্ছিল।
হঠাৎ মাহিমের মার জ্বর আসে। দিনের পর দিন জ্বর বাড়তে থাকে। চিকিৎসা করার মতো অর্থ তাদের নাই।
মজিরণের মা সাধ্যমতো চেষ্টা করলো।
ভিক্ষা করে খাবার জোগাড় করতে লাগলো। ওষুধ কিনবে কি দিয়ে।
মাহিম মা বলা শিখেছে ইতিমধ্যে।
মাহিম দুজন কেই মা বলে।
মাহিমের মা অসুস্থ শরীরে খুশি হয়। মুচকি হাসি হেসে দেয়। মাহিমের মা ভাবে মাহিমের মা হারানো ভয় নেই।
মাহিমের মা জীবনের যুদ্ধে হেরে যায়।
আঞ্জমান মফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করে মাহিমের মাকে।
মজিরণের মা অনেকক্ষণ কাঁদতে থাকে।কি করবে বুঝে ওঠে না। মাহিমের দিকে তাকায়। মাহিম মা বলে জরিয়ে ধরে।মাহিমকে কোলে তুলে নেয় মজিরণের মা।
মাহিমকে কোলে নিয়ে মজিরণের মা বস্তি ছেড়ে চলে যেতে থাকে। পিছন ফিরে একবার ও তাকায়নি।