মার্চিসন উল্কাপিণ্ড 

1
152

মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম সোহেল

উল্কা হচ্ছে পাথুরে-ধাতব বস্তু যেটি গ্রহাণু ও ধূমকেতুর চূর্ণবিচূর্ণ অংশবিশেষ । অঙ্গারময়, শিলা (কাদামাটি, সিলিকেট শিলা, নিকেল ও লোহা), কন্ড্রুল এবং ধাতু সমৃদ্ধ । এটি মহাকাশে উৎপত্তি হয় । কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে দুর্বার গতিতে ঝাঁক বেঁধে পৃথিবী, চাঁদ ও অন্য কোনো গ্রহের দিকে ধাবিত হয় । বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় বাতাসে ঘর্ষণ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এটি জ্বলে ওঠে । এর নিজস্ব প্রভাব এবং উত্তাপের কারণে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা সৃষ্টি করে । তখন কেউ এটিকে বলে নক্ষত্র-খসা বা ছুটন্ত তারা বা উল্কাপাত । কখনো এটি বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভেঙে প্রজ্জ্বলিত হওয়াকে কেউ বলে উল্কা বৃষ্টি বা উল্কা ঝড় । এটি পৃথিবী, ধূমকেতু ও মহাজাগতিক অন্যান্য উৎসের সাথে সংঘর্ষ বা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ স্রোতকে কেউ বলে উল্কা ঝরনা । আবার কেউ কেউ এটিকে বলে উল্কা বৃষ্টি বা আকাশের সন্তান । সাধারণত উল্কা ধেয়ে এসে আকাশেই ধ্বংস হয়ে যায় । কদাচিৎ গ্রহ বা চাঁদের পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে । উল্কা হচ্ছে প্রাণ ও অস্তিত্বের প্রাচীনতম কঠিন পাথর বা মহাজাগতিক বস্তু কিংবা সৌরজাগতিক বস্তু । উল্কার বিধ্বংসী আঘাতে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে ডাইনোসর জাতি পৃথিবী গ্রহ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল । সত্যিই, ভয়াবহ! অষ্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মার্চিসন গ্রামে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে সেপ্টেম্বর মার্চিসন উল্কাপিণ্ড (মার্চিসন ম্যাটিওরাইট) পতিত হয় । উজ্জ্বল আগুনের গোলা, কম্পন, শব্দ ও ধোঁয়ার মেঘ তৈরি হয় । এটি কার্বনসমৃদ্ধ সিএম কনড্রাইট যা রাসায়নিকভাবে আদিম উল্কাপিণ্ডগুলোর মধ্যে একটি । মার্চিসন উল্কাপিণ্ডের মধ্যে এমন কিছু কার্বন-ভিত্তিক জৈব যৌগ পাওয়া যায় যেগুলো খুব সম্ভবত পৃথিবীতে নয় বরং মহাকাশে গঠিত হয়েছিল । সেই সকল হচ্ছে জীবনের জন্য এমন কিছু মৌলিক উপাদান যেমন: গ্লাইসিন, অ্যালানাইন, প্রোলিন, গ্লুটামিক অ্যাসিড, আইসোভালাইন, সিউডোলিউসিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড এবং পিউরিন, পাইরিমিডিন, ইউরাসিল, জ্যান্থাইন, হেক্সামেথিলিনেটেট্রামাই বা টেট্রাজাডামান্টেন জৈব যৌগ ও সিলিকন কার্বাইড । এ বৈচিত্র্যময় সৌরজগৎ গঠনের পূর্বে বা প্রাথমিক সময়ে মার্চিসন উল্কাপিণ্ডের জন্ম । হয়তো, কোনো মহাবিস্ফোরণে । হতে পারে, এটি ভ্রুণগ্রহীয় চাকতি বা ধ্বংস হওয়া কোনো গ্রহের অবশিষ্টাংশ । এ জগতের বাইরে । মার্চিসন উল্কাপিণ্ডের বয়স ৪.৬ বিলিয়ন বছর । পৃথিবীর থেকেও পুরোনো, যেখানে পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ কোটি বছর । ৪৬০ কোটি বছর পূর্বে নীহারিকা বিস্ফোরণ থেকে এক দানবীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক আণবিক মেঘের মহাকর্ষীয় পতনের ফলেই আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি । মার্চিসন উল্কাপিণ্ডের পূর্বপুরুষগণ সৌরজগৎ সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান বহন করে । বিস্ময়কর যে, তার আদি পিতৃপুরুষের উপাদান সিলিকন কার্বাইড (কার্বোরান্ডাম) কণার বয়স প্রায় ৭০০ কোটি বছর ।

* তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল, ছবি: উইকিপিডিয়া ।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

Previous articleঅভিমান থেকে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব
Next articleরক্তে ভাসা জুলাই
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

1 COMMENT

  1. শুভ সকাল !
    বহুল জনপ্রিয় প্রতিধ্বনি পত্রিকায় আমার লেখা ‘মার্চিসন উল্কাপিণ্ড’ প্রকাশিত হওয়ায় পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here