Saturday, July 27, 2024
spot_imgspot_imgspot_img
Homeসাহিত্যগল্পশোল মাছের মাথা

শোল মাছের মাথা

আরিফের জীবনে হঠাৎ করে প্রেম আসলো। আরিফ নিজেও কখনো ভাবেনি এমন কারো প্রতি তার মুগ্ধতা তৈরি হবে। স্কুল জীবনে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হয়েছিল নটরডেম কলেজে। সুতরাং স্কুল এবং কলেজ জীবন ছিলো অন্যরকম যেখানে মেয়েদের সংস্পর্শ ছিলো না বললেই চলে। পড়াশোনার চাপ ছিলো বেশ পাশাপাশি পারিবারিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে সে কারো প্রতি দুর্বল হওয়ার সুযোগটুকুও পায়নি। মাঝে মাঝে হয়তো কাউকে ভালো লেগেছে কিন্তু  সামনে এগোনোর সাহস বা সুযোগ কোনটাই হয়নি। এইচএসসি পরীক্ষার পর ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে যখন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলো তখন তার জীবনে প্রথমবারের মত বসন্তের আগমন ঘটলো। একজনের প্রতি তার মুগ্ধতা আকাশচুম্বী হলো।

ঘটনার শুরু হয়েছিল ক্লাস পরীক্ষায় আরিফের প্রথম হওয়া নিয়ে। মেয়েটা এসে ওকে অভিনন্দন জানালো।উত্তরে সে ধন্যবাদ দিতেও ভুলে গেলো বরং অপলোক তাকিয়ে থাকলো মেয়েটির দিকে।মেয়েদের দৃষ্টি থেকে বোধহয় কোন কিছুই এড়িয়ে যেতে পারে না। আরিফের মুগ্ধ দৃষ্টি মেয়েটিকে আকৃষ্ট করলো। সে বুঝলো আরিফ তার প্রতি মুগ্ধ হয়েছে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কতক্ষণ সময় পেরিয়েছে আরিফ বুঝতেই পারেনি।মেয়েটি বললো আমার নাম তিশা।বন্ধু হবে আমার? তিশার কথা শুনে আরিফ সম্বিত ফিরে পেয়ে ধন্যবাদ জানালো। বললো ঠিক আছে। তিশার সামনে আরিফ বেশ লজ্জা পাচ্ছিল।

ক্লাস শেষে দুজন একসাথে কোচিং থেকে বের হয়ে ওভারব্রিজ পার হয়ে হলিক্রসের দিকে হাটতে শুরু করলো।আরিফের বাসা ওদিকটাতে কিন্তু আরিফ জানে না তিশার বাসা কোথায়।মনে মনে ভাবলো সে যেহেতু ওদিকেই যাচ্ছে তাহলে বাসা ওদিকেই হবে হয়তো।কথায় কথায় আরিফ জানতে চাইলো ঢাকায় কোথায় বাসা নিয়েছ? তিশা হাসি হাসি মুখে খানিকটা লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললো কল্যাণপুরে।আমি রাঙামাটি সরকারী কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছি।এখানে একটা মেসে উঠেছি।কল্যাণপুরে থাকো তাহলে এদিকে কোথায় যাচ্ছ? কোন কাজ আছে এদিকে? এমন প্রশ্নে তিশা আরও বেশি লজ্জা পেলো। তবুও যা সত্যি সে তাই বললো। তিশা বললো এদিকে আমার কোন কাজ নেই। ভাবলাম তোমার সাথে একটু হাটি।

এর পর দুজন গল্প করতে করতে বিজ্ঞান কলেজ পার হয়ে গেলো। তিশাই আরিফকে বললো কফি খাবে? আরিফ রাজি হয়ে গেলো এবং দুজন কফি খেতে খেতে অনেক গল্প করলো। নিজেদের স্বপ্নের কথা শেয়ার করলো পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনের অনেক গল্প উঠে আসলো। তিশার চেহারাটা খুব সুন্দর তবে কিছুটা অন্যরকম। দেখলে উপজাতীয় মনে হয়। আরিফ জিজ্ঞেস করবে কি না ভাবছিলো। এটা জিজ্ঞেস করলে যদি তিশা কিছু মনে করে তাই উসখুস করছিল। তিশা সেটা লক্ষ্য করে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো। তার পর নিজ থেকেই বললো আমি কিন্তু উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। আমার পুরো নাম তিশা চাকমা।উপজাতীয় শুনে প্রথমে একটু দমে গেলেও তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে তা মুহুর্তেই ভুলে গেলো। এভাবে রোজ গল্প করতো,একে অন্যকে সহযোগিতা করতো এবং একসময় তারা দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেললো তখন তাদের স্বপ্নটাও এক হয়ে গেলো।

সিদ্ধান্ত নিলো যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন একই ডিপার্টমেন্টে পড়তে চেষ্টা করবে। সেটা একান্তই সম্ভব না হলে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক থাকে। ভর্তি পরীক্ষার পর দুজনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হলো। আরিফের পরিবার থেকে ওদের সম্পর্কের কথা জানার পর প্রথমে মেনে না নিলেও পরে মেনে নিলো।এর পর পড়াশোনা শেষ হলে পারিবারিক ভাবেই দুজনের বিয়ে হলো।বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময়েই আরিফ অনেকবার রাঙ্গামাটিতে গিয়েছে তিশার সাথে। উপজাতীয় সংস্কৃতির অনেক কিছু সে জেনে নিয়েছে। শুরু থেকেই তিশার বাবা মা পরিবারের অন্যরা আরিফকে পছন্দ করতো।

বিয়ের আগে বা পরে কখনোই আরিফের যত্নের কোন ত্রুটি রাখতো না। এক বৃষ্টিবিঘ্নিত রাতে ঘুমোতে যাবার আগে আরিফ তিশাকে বললো বহুদিন থেকে আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু উত্তর পাচ্ছিনা। তিশা জানতে চাইলো কি সেই প্রশ্ন? আরিফ বললো ছাত্র জীবন থেকেই আমি যখন তোমার সাথে তোমাদের বাড়িতে আসতাম তখন বিভিন্ন সময় নানা ভাবে রান্না করা শোল মাছ খেয়েছি। এমনকি আজ রাতেও খুব স্বাদ করে শোল মাছ খেলাম। তোমার মায়ের হাতের রান্নাও অতুলনীয়। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম সেটা হলো আমাকে কোন দিন মাছের মাথা খেতে দাওনি এমনকি আজকেও যখন সবাই একসাথে বসে খেলাম তখনও কাউকে মাছের মাথা খেতে দেখলাম না। তোমরা কি শোল মাছের মাথা না খেয়ে ফেলে দাও? তিশা আরিফের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো। তার পর বললো তুমি এতোদিন আমাদের সাথে খুব স্বাদ করে যা খেয়েছ সেটাতো শোল মাছ না! সেটাতো সাপ! আর সাপের মাথা কি খাওয়া যায় নাকি?

তিশার কথা শুনে আরিফ চমকে উঠলো। সে ভাবলো তিশা তার সাথে রসিকতা করছে।অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে জানতে চাইলো তিশা তুমিকি আমার সাথে রসিকতা করছো? সাপ হতে যাবে কেন? ওটাতো শোল মাছ। তিশা বললো আরিফ আমি তোমার স্ত্রী এবং এক সময় প্রেমিকা ছিলাম। আমি কেন তোমার সাথে রসিকতা করতে যাব। সত্যি সত্যিই আমরা আজকে রাতে যেটা খেয়েছি সেটা সাপ।আমরাতো সাপ খাই আর সাপের মাথা খাওয়া যায় না তাই তোমাকেও কখনো মাথা খেতে দেওয়া হয়নি।

তিশার কথা শুনে আরিফের মাথা ঘুরতে শুরু করলো এবং সে হড়হড় করে বমি করে দিলো। সে রাতে অনেক বার বমি হলো এবং কোন ভাবেই বমি থামানো গেলো না।কোন ভাবেই বমি কমছেনা দেখে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলো। ডাক্তার স্যালাইন দিলেন,ইনজেকশন দিলেন তবে তেমন কিছু হলো না। ভোর রাতে আরিফ মারা গেলো। আরিফ বিষক্রিয়ায় মারা যায়নি বরং না জেনে এতোদিন সাপ খেয়েছে সেটা মনে করে বমি করতে করতে মারা গেছে। তিশার দুই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকলো। সে যদি বুঝতে পারতো তবে আরিফকে সাপের কথাটা বলতো না। অবশ্য তারতো কোন দোষ নেই। তিশাতো ভেবেছে অন্যদের মত আরিফও নিশ্চই জানে যে তারা সাপ খায়!

3 জুন 2020

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments