পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের জুড়ি নেই। ডিম খাওয়ার সব ধরনের উপায়ের মধ্যে সিদ্ধ করে ডিম খাওয়াকে সবচেয়ে পুষ্টিকর উপায় মনে করা হয়। কারণ সিদ্ধ ডিমের ক্যালোরি মোটামুটি কম। এতে প্রচুর পুষ্টি, প্রোটিন, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। আপনি যদি দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকেন তবে সিদ্ধ ডিম আপনাকে সাহায্য করতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন ওমলেট, পোচের তুলনায় সিদ্ধ ডিমই কিন্তু বেশি উপকারি।
গবেষণায় দেখা গেছে, সিদ্ধ ডিম দুই সপ্তাহের মধ্যে ১১ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে পারে। ওজন হ্রাস ছাড়াও এই ডায়েট হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ও ব্লাড সুগারকে কার্যকর উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
সিদ্ধ ডিমের কুসুম ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে আপনাকে ডিম খেতে হবে।
ডিমের অনেক উপকার। ডিম খেলে পেট তো ভরেই, তার সঙ্গে নানারকম পুষ্টিকর উপাদানও শরীরে যায়। চিকিৎসকদের মতে, ভাজা বা অন্য কোনও পদের চেয়ে সেদ্ধ ডিমেই বেশি উপকার।
যে কোনও বয়সেই ডিম খাওয়া যায়। সব বয়সেই ডিম খেলে উপকার পাওয়া যায়।
ডিম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে অনেকেই দৈনিক ডিম খেতে ভয় পান, যদি ওজন বেড়ে যায় কিংবা হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে এই ভেবে। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, সকালের নাস্তায় একটি করে ডিম খাওয়া শারীরিক বিভিন্ন রোগের সমাধান করতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে কে কীভাবে ডিম খাচ্ছেন।
অনেকেই ডিমের কুসুম ফেলে দিয়ে সাদা অংশটা খান। পুষ্টিবিদদের মতে, দিনে একটি নয় অন্তত ২টি ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন। আর যদি এর চেয়েও বেশি ডিম খেতে চান তাহলে সাদা অংশ খেতে পারেন।
অন্যদিকে ডিম যত বেশি ভাজা হয় এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ডিমের পোচ বা হাফ বয়েল খান। দরকার হলে ফুল বয়েল ডিমও খেতে পারেন। তবে ডিমের অমলেট সপ্তাহে একবার খান।
ডিমের পুষ্টি উপাদান
একটি ডিমে অ্যানার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরি। আর কার্বোহাইড্রেট থাকে ০.৭২ গ্রাম মতো। প্রোটিন থাকে ১২.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৯.৫১ গ্রাম। এছাড়া ফসফরাস থাকে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক থাকে ১.২৯ মিলিগ্রাম।
ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন ও কুসুমে থাকে ভালো ফ্যাট, আয়রন ও ভিটামিন। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্ত করতে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। ডিমে আরও আছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আর কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি, হাড়ের জন্য ভালো।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অপুষ্টি, রক্তাল্পতা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের সুষম পুষ্টিকর খাদ্যের কথা বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা মুরগির ডিম ডায়েটে রাখার কথা বলছেন।
ডিম খেলে সারবে যেসব রোগ
> ডিম খেলে শরীরে দ্রুত অ্যানার্জি আসে। ডিমে থাকা ভিটামিন থেকেই মূলত এই অ্যানার্জি বা শক্তি মেলে। এতে থাকা ভিটামিন বি খাদ্যকে অ্যানার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাই প্রতিদিন সকালে একটি সেদ্ধ খেলে সারাদিন ক্লান্তহীন থাকবেন।
> ডিমে থাকে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। তাছাড়া ডিমে থাকা কেরোটিনয়েড আর ল্যুটেন বয়স হয়ে গেলে চোখের এক বড় সমস্যা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
> ডিমে থাকা ভিটামিন ই কোষ আর ত্বকে থাকা ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও নতুন কোষ তৈরি হতেও সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
> পেশী ব্যথায় অনেকেই ভোগেন। ডিমে থাকা ভিটামিন ডি পেশী মজবুত করে। নিয়মিত যারা ব্যায়াম করেন তাদেরকে বিশেষজ্ঞরা ডিম খেতে বলেন।
> নারী স্বাস্থ্যের উন্নতিতে জন্য প্রতিদিন ৫০-৬০ শতাংশ প্রোটিন দরকার হয়। যা ডিম থেকেই পাওয়া যায়। একটি ডিম থেকে ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন মেলে।
> এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ডিম খেলে হার্টে রক্ত জমাট বাঁধে না। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি সারা শরীরেই রক্ত চলাচল সচল থাকে।
> অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা আছে, ডিম না কি কোলেস্টেরল বাড়ায়। যা একদমই ভুল। বরং ডিম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডিমে থাকা ওমেগা ৩ এই কাজটি করতে সাহায্য করে। আবার ডিম এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় প্রায় ১০ শতাংশ।
> ডিম লিপিড প্রোফাইলও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া ডিম লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই রোজ নিয়ম করে ডিম খান।
> শরীরের সার্বিক সুস্থতায় কোলাইন খুবই প্রয়োজন। কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের নানা সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়। ডিমে প্রায় ৩০০-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। তাই ডিম খেলে লিভার ও স্নায়ু ভালো থাকে।
> প্রোটিনের মূল উৎস হলো অ্যামিনো অ্যাসিড। প্রোটিন তৈরিতে প্রায় ২১ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড লাগে। যার মধ্যে ৯টি শরীরে তৈরি হয় না। এজন্য বাইরে থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। যা মেলে ডিম থেকে।
> নখ ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যায় অনেকই ভোগেন। নখ মজবুত করে সালফার। আর ডিম হলো এই সালফারের উৎস। নখকে সুন্দর ও সাদা রাখতেও সাহায্য করে সালফার। তাই নিশ্চিন্তে ডিম খান।
> অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় নারী ও শিশুরা বেশি ভোগে। শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকলে অ্যানিমিয়া হয় না। আর ডিমে থাকে আয়রন। তাই নিয়মিত ডিম খেলে রক্তাল্পতার সমস্যার সমাধান হয়।
> শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম দুর্দান্ত কার্যকরী। ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা জ্বরে ভুগতে না চাইলে রোজ ডিম খান। ডিমে থাকা জিংক ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করে।
> হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে ডিম। হাড় মজবুত করে ফসফরাস। এই উপাদানটি আবার দাঁতও মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে ডিম খান প্রতিদিন।
> অনেকেই মনে করেন ডিম বোধ হয় ওজন বাড়ায়। বিশেষ করে ডিমের কুসুম ওজন বাড়িয়ে দেয়! তবে এ ধারণা ভুল। বরং ডিম খেলে ওজন কমে। কারণন ডিম অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। একটি ডিম শরীর থেকে ৪০০ ক্যালোরির কমাতে পারে। তাই ওজন কমাতে ডিম খান।
আজ ৮ অক্টোবর, বিশ্ব ডিম দিবস। এ বছর ডিম দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই’। ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক এগ কমিশনের কনফারেন্সে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো ডিমের খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ডিম উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ভোক্তার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডিম অন্তর্ভুক্তি উৎসাহিত করা।
কাঁচা ডিমের উপকারিতা
কাঁচা ডিমের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন বি (Vitamin B), ভিটামিন ই (Vitamin E), ভিটামিন বি সিক্স (Vitamin B 6) এবং প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ। তাছাড়াও কাঁচা ডিমে উপস্থিত রয়েছে পুষ্টিকর কোলিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জেক্সানথিন নামক উপাদান। গবেষকরা জানিয়েছেন কাঁচা ডিমের চেয়ে সিদ্ধ ডিম অথবা হাফ বয়েল ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়।
সিদ্ধ ডিমের উপকারিতা
ডিম সিদ্ধ শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। সিদ্ধ ডিম স্নায়ুতন্ত্র এবং হৃদযন্ত্র কে সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পেশীর যে কোন সংবেদন মস্তিস্কে পৌঁছাতে সাহায্য করে। মানবদেহের মস্তিষ্কের ঝিল্লি গঠন করতে সিদ্ধ ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও মস্তিষ্কের মেমব্রেন ও পেশি সুগঠিত রাখতে সাহায্য করে এবং চুল, নখ ও চখের জন্য খুবই উপকারী সিদ্ধ ডিম।
দুধ ও ডিমের উপকারিতা
ডিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, অ্যামাইনো এসিড, এবং প্রোটিন। অন্যদিকে দুধে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন। শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করেতে দুধ এবং ডিম এক সঙ্গে খেতে পারেন। দুধ ও ডিম দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় মানবদেহের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে দুধ ও ডিম।
ডিম খাওয়ার নিয়ম
ডিম যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। কিন্তু গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ডিম ভাজা বা কাঁচা খাওয়ার থেকে সিদ্ধ করে খাওয়া সবথেকে ভাল। যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। কারণ সিদ্ধ ডিমে ক্যালরির পরিমাণ সীমিত পরিমাণে উপস্থিত। সিদ্ধ ডিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।