Tuesday, December 3, 2024
Homeসাহিত্যপ্রবন্ধ/নিবন্ধঅগ্নিকান্ডের কারণ প্রতিকার এবং কিছু দাবী

অগ্নিকান্ডের কারণ প্রতিকার এবং কিছু দাবী

আমাদের জীবন আজ আনন্দ বেদনার মহাকাব্য হয়ে গেছে।আমরা প্রতিনিয়ত খুশির সওদা করতে গিয়ে এক সমুদ্র দুঃখ নিয়ে ফিরে আসছি। সেই দুঃখ আজীবন বয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের স্বজন। এই যেমন গতকাল বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড এক নিমিষে অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত করেছে। আজীবনের জন্য দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। একটি দুটি নয় ৩৮ এর অধিক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

রাজধানীসহ সারাদেশেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা বাড়লেও বাড়েনি জনসচেতনতা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যেমন-রাজউক, সিটি করপোরেশন আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবনসহ কল-কারখানাগুলোতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিতে সঠিক নজরদারি করতে পারছে না। আর এ কারণে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েই চলছে। ২০২০ সালে সারাদেশে ১৮ হাজার ১০৪টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছে ২ হাজার ১৩৮ জন। আহত হয়েছে ১৪ হাজার ৯৩২ জন।

২০২১ সালে সারা দেশে ২২ হাজার ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা ২০২০ সালের দুর্ঘটনার চেয়ে ১ হাজার ৪৯টি বেশি। এক বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত এক বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৩৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৯০ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ফলে ২ হাজার ৫৮০ জন নিহত হন। আহত হয় ১১ হাজার ৯৯৯ জন। এই তথ্য আমার মনগড়া নয় বরং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।গত বছরের এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৮৬১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঐ সময় ১৫০ জন নিহত হয়। আহত হয় ১ হাজারের বেশি মানুষ। অগ্নিকান্ডের ঘটনা কমিয়ে আনতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিলেও তা মানছে না। ফলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা কমছেই না।

দেশের অধিকাংশ অগ্নিকান্ডের ঘটনার সূত্রপাতের পেছনে মানুষের অসচেতনতা, ঘনবসতি, অপরিকল্পিত নগরায়নকে দায়ী করা যেতে পারে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে আমার তাই মনে হয়েছে।

ঢাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি। ঢাকায় ঘনবসতি ও অলিগলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় ঢাকায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ব্যবসায়িক এলাকা পুরনো ঢাকায় সড়কগুলো একেবারেই সরু। কোনো সড়কেই দুটি গাড়ি পাশ কাটানোর জায়গা নেই। পুরনো ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখন অগ্নিকান্ডের সময়ে ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি প্রবেশে সমস্যায় পড়ছে। দেশের বহুতল ভবন ও কল-কারখানাসহ বাণিজ্যিক ভবনগুলোর প্রায় ৯০ ভাগেই অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ভবন পুরনো, তাই বর্তমানে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সংযোজন করাও কঠিন। তাছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলেও আগুনের ঘটনা বাড়ছে।

অগ্নিকান্ডের পেছনে মূল তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত মানুষের অসচেতনতা, দ্বিতীয়ত ঘনবসতি এবং তৃতীয় অপরিকল্পিত নগরায়ণ। দেখা গেছে, মানুষ অসচেতনভাবে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখছেন কিংবা বৈদ্যুতিক সংযোগে দুর্বল তার ব্যবহার করায় অগ্নিকান্ডের ঘটছে। যেখানে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করেই রাসায়নিক কেমিকেল রাখা হচ্ছে যার অধিকাংশই দাহ্য। সেগুলো এক একটি বোমার মত ভয়াবহ বিপর্যয় যেকে আনতে পারে। ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা, যন্ত্রাংশের সংঘর্ষ, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র, সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো, খোলা বাতির ব্যবহার, চুলার আগুন, মিস ফায়ার, চিমনি, রাসায়নিক বিক্রিয়া, বাজি পোড়ানো ইত্যাদি কারণে আগুন লাগে। প্রায় প্রতি মাসে একাধিক আগুন লাগে। বিশালসংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে শহরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ (এসি, ফ্রিজ),গ্যাসের চুলাসহ আবাসিক এলাকায় দাহ্যপদার্থ রাখা, কারখানা স্হাপন প্রভৃতি কারণে মূলত অগ্নিকান্ড ঘটে থাকে।

আমার জানা মতে সারা দেশে ৪৫৭টি ফায়ার স্টেশন আছে। নতুন ৪০টি উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ঢাকা শহরে ১৪টি ফায়ার স্টেশনের পাশাপাশি মন্ত্রীপাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পাঁচটি টহল ডিউটি আছে। প্রশিক্ষিত দক্ষবাহিনী কাজ করছে। আামি কখনোই মনে করি না যে আমাদের ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দক্ষ নয় বা সাহসী নয়। তারা জীবন বাজী রেখে এগিয়ে আসে। এই যেমন গতদিনের চট্টগ্রামের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সাত বা তারও অধিক সংখ্যক ফায়ার সার্ভিস কর্মী জীবন দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের এই বীরেরা সাহসের কমতি না থাকলেও তাদের কাজের জন্য যে সরঞ্জাম আছে তা যথেষ্ট নয়। এমনকি যেগুলো আছে সেগুলো যুগোপযোগী নয়। আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।

২০১৬ সালের ২১ আগষ্ট হঠাৎ করে আবারও বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগে। এ নিয়ে মোট তিনবার আগুন লেগেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শপিংমলে।সেদিন আমি ওখানেই ছিলাম। কী ভয়াবহ সেই দৃশ্য।

আমরা শপিং করতে যাই খুশি নিয়ে আর ফিরে আসি স্বজন হারানো ব্যাথায় বুক চাপড়াতে চাপড়াতে।এর আগে দুইবার যখন আগুন লেগেছে তখন এই শপিংমলের সংশ্লিষ্টদের আরো সচেতন হওয়া উচিত ছিল।আমার জানতে পেরেছি বিগত দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার কোন রিপোর্ট কোথাও জমা পড়েনি।

এরকম একটা স্বনামধন্য শপিংমলে অনাহুত ভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনা তাই জন মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে।ফায়ার সার্ভিসের ২৯টা ইউনিট একাধারে অগ্নিনির্বাপন কাজে নিয়োজিত থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনলেও ততোক্ষণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে।

শুধু বসুন্ধরা সিটির ঘটনাই নয় বরং দেশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অগ্নিকান্ডের ঘটনা আমরা দেখছি।তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা আজও আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। কিন্তু তার পরও আমাদের মধ্যে সচেতনতার বড়ই অভাব।

কয়েক বছর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ করেছিল। ওই সুপারিশমালার মধ্যে ছিল জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম বা কারখানা সরিয়ে নেয়া, অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া, রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া জোরদার করা, ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩’ ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ বা বিপণনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্য বা বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ মজুদকরণ বা বিপণন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা, ঘরবাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারের গুণগতমান নিশ্চিত করা, রাস্তায় স্থাপিত খোলা তারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা পরিহার করতে প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার সরেজমিনে পরীক্ষা করা, দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের জন্য স্থানীয়ভাবে পৃথক পানির লাইনসহ হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপন করা, দুর্ঘটনা মোকাবেলায় জাতীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন, রাসায়নিক ও রাসায়নিক জাতীয় দাহ্য বস্তুর আলাদা দফতরের পরিবর্তে সব দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধন, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অবকাঠামো, জনবল, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের আধুনিকায়ন, জনসচেতনতা বাড়ানো, অগ্নিকান্ডের সময় যেন উৎসুক জনতা উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য আইনৎশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো, পাঠ্যসূচিতে অগ্নিকান্ড, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা, ৬২ হাজার কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, কমিউনিটি সেন্টারগুলো নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো ডেকোরেটরের উপকরণের সঙ্গে প্রয়োজনীয়সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা ইত্যাদি। কিন্তু নিমতলীর ঘটনার ১০ বছর পরও সুপারিশমালাগুলোর অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। যতদূর মনে পড়ে ২০১০ সালে নিমতলীতে আগুনে পুড়ে ১২৪ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

একের পর এক দেশের আনাচে কানাচে শপিংমল, শিল্পকারখানায় আগুন লেগে রক্তমাংসের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।এভাবে আর কত দিন? কেন আগুন লাগছে শপিংমল কিংবা শিল্প কারখানায়? কী এর রহস্য? এর থেকে কি কোনই প্রতিকার নেই? কোন ভাবেই কি আগুন লাগা থামানো যায় না? আগুন লাগার কিছু সাম্ভাব্য কারণ আমরা চিহ্নিত করতে পারি।

বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় তাড়াহুড়ো করেই হোক আর খরচ বাঁচাতে গিয়েই হোক নিম্ন মানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে সহজেই তা থেকে শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লাগছে।

পোষাক শিল্পে আগুন লাগার ক্ষেত্রে বিশেষত যে কারণটি লক্ষ্য করা যেতে পারে তা হলো কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক কর্মচারি ধুমপান করে। যখন বিরতী দেয়া হয় তখন অনেকেই এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে ধুমপান করে।

এরপর যখন ঘন্টা বা সাইরেন বাজে কাজে ফিরে যাওয়ার, তখন অনেকেই হাতের সিগারেট বা বিড়ির অবশিষ্টাংশটুকু যত্রতত্র ফেলে দেয়। সেই রেখে যাওয়া সিগারেটের অল্প একটু আগুন ভেতরের তাপে আরো বেশি উত্তপ্ত হয় এবং একসময় ভয়াবহ আগুন হিসেবে সব জ্বালিয়ে দেয়। মশার কয়েল থেকেও অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হতে পারে।

বিগত বছর গুলোতে দেখা গেছে দেশের আনাচে কানাচে শপিংমল সহ শিল্প প্রতিষ্ঠানে বেশ অনেক বার আগুন লেগেছে এবং প্রতিবারই বেশ কিছু মানুষ মারা যাচ্ছে। যার সবচেয়ে ভয়াবহতা দেখেছি তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ডে। শত শত মানুষ লাশ হয়ে আজীবনের মত হারিয়ে গেছে।

যাদের অনেককেই কেউ চিনতেই পারেনি। কোন কোন মা তার ছেলেকে শেষ বারের জন্যও দেখতে পায়নি। কোন কোন শিশু তার বাবা মাকে শেষ বারের জন্য বাবা-মা বলে ডাকতে পারেনি। গবেষণায় দেখা গেছে আগুন লাগার সাথে সাথে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েনা।

চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে এবং ভয়াবহ রুপ নিতে যতটুকু সময় লাগে তার অনেক আগেই ভবন থেকে সব মানুষ নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারে। তাহলে কেন সেটা হচ্ছেনা? তার কারণ হতে পারে এরকম যে গার্মেন্টস গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে প্রায় সবগুলোতেই একটাই মাত্র পবেশপথ এবং সেই প্রবেশ পথটাও খুব বেশি প্রশস্থ নয়। এ ছাড়া সেটা সব সময় বন্ধ রাখা হয়। ফলে আগুন লাগার পর ভয়ে আতংকে সবাই যখন ছোটাছুটি করে গেটের কাছে আসে এবং দেখে গেট বন্ধ তখন তারা দিশাহারা হয়ে পড়ে। সেই হুড়োহুড়িতেই অনেকে চাপা পড়ে আবার অনেকে জ্ঞান হারায়। এর ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।

শপিংমল কিংবা কারখানা গুলোতে অগ্নি নিবার্পক ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে সহজে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়না।

কোনো এক ফ্লোরে আগুন লাগলে সাথে সাথে যদি অটো অ্যালার্মিং সিস্টেম চালু থাকে  তবে অন্য ফ্লোরে অবস্থানরতরা আগেই স্থান ত্যাগ করতে পারে। এ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে অন্তিম মুহুর্তে সবাই বুঝতে পারে আগুন লেগেছে। ফলে তারা দিশা হারা হয়ে পড়ে। হতাহতের সংখ্যাও বাড়ে।  শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শপিংমল গুলোতেও সব সময় ভবনের ছাদ বন্ধ থাকে। ফলে দুর্ঘটনার পর ছাদ দিয়ে সহজেই কেউ বেরিয়ে আসতে পারেনা । দেশে শপিং মল,আবাসিক হাউজিং কিংবা শিল্প কারখানা নির্মানের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা জোরালো তা নিশ্চিত না হয়েই ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ফলে দুঘর্টনার সময় হতাহতের পরিমান বাড়ে।

কোথাও কোন অবস্থাতেই আগুন লাগুক এটা কারো কাম্য হতে পারেনা। সচেতনতাই পারে এর থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

প্রথমত ভবন নির্মানের সময় সচেতন ভাবে মানসম্মত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে যেন বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আশংকা শুন্যের কোটায় নেমে আসে। একই সাথে বিপদ কালীন দ্রুত বাহির হওয়ার মত বিকল্প ব্যবস্থাও রাখতে হবে। ভবনের ছাদ সবর্দা খোলা রাখতে হবে এবং ভবনের ছাদের থেকে অস্থায়ী প্রস্থান ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভবন ব্যবহারের জন্য চালু করার আগেই নিম্চিত হতে হবে যে সেখানে পযার্প্ত অগ্নিনিবার্পক ব্যবস্থা আছে। ফায়ার স্টিংগুইশার বা ফায়ার এলার্ম বা ওয়াটার হোস পযার্প্ত না থাকা পযর্ন্ত ভবন ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া যাবেনা। ভবনে নিয়োজিত কর্মচারিদের নিয়োগের আগেই ভালভাবে বিপদ কালীন করনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কেননা এতে করে সবাই ধীর স্থির ভাবে কিভাবে বিপদ থেকে বাঁচা যায় তা বুঝতে পারবে। এলার্মিং সিস্টেম নাজুক থাকায় এক ফ্লোরে আগুন লাগলে অন্য ফ্লোরের মানুষ তা জানতেই পারেনা। তাই এলার্মিং সিস্টেমের দুর্বলতা দুর করতে হবে যেন আগুন লাগার সাথে সাথে সবাই সেটা বুঝতে পারে। পযাপ্ত সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন কোথায় কি হচ্ছে তা সহজেই মনিটর করা যায়। এতে করে বিপদের আশংকা কমে যাবে। শপিংমল এবং শিল্প কারখানার জন্য প্রতি ফ্লোরে অন্তত একজন করে মনিটরিং অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। তাদের দায়িত্ব প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা ঘুরে ঘুরে শপিংমল বা কারখানার সব কিছু দেখাশোনা করা। কোথাও কোন সমস্যা থাকলে তার সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া। এমনকি প্রতি সপ্তাহে বা মাসে বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সব সংযোগ ও অন্যান্য ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে হবে ঠিক আছে কিনা।

চট্টগ্রামের যে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছে তার ভয়াবহতা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। ডেইলিস্টারের এক প্রতিবেদনে দেখলাম যে ছেলেটি প্রথম এই ঘটনা ফেসবুক লাইভ করেছিল বিস্ফোরণের সময় সেও হতাহত হয়ে পরে মারা গেছে। এই ভয়াবহতার পিছনে সবচেয়ে প্রধান কারণ ওখানে থাকা দাহ্যপদার্থ। রাসায়নিক পদার্থগুলোর কারণে অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা বেড়েছে। কত হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে তার হিসেব করতে চাই না। কিন্তু কতগুলো জীবন আগুনে পুড়ে শেষ হলো,কতগুলো পরিবার আজীবনের জন্য দুঃখের বোঝা কাঁধে নিলো তার হিসেব রাখা দরকার। পাশাপাশি পত্রিকার সংবাদে দেখেছি মালিকপক্ষ নাকি গা ঢাকা দিয়েছে ফলে এই লেখাটি যখন লিখছি তখন পযর্ন্ত জানা যায়নি ভেতরে কী ধরনের কেমিকেল ছিলো।

চট্টগ্রামের এই ভয়াবহ ঘটনাই শেষ নয়। দেশে আজ আরও একাধিক জায়গায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রিকা থেকে জেনেছি। আজই যেন এই দেশে অগ্নিকান্ডের শেষতম ঘটনাটা ঘটেছে এমন হয়। ভবিষ্যতে আর কোনো অগ্নিকান্ড ঘটুক তা আমরা চাই না। দেশের প্রধান দুটি ভয়াবহতম বিষয়ের একটি হলো অগ্নিকান্ড আরেকটি হলো সড়ক দুর্ঘটনা। সারা দেশে আজও একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং প্রাণ হারিয়েছে অনেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিজ্ঞানীর মৃত্যু। প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার। এ দুঃখ আজীবন বয়ে বেড়ানো যে কতটা কষ্টের তা শুধু তারাই জানে যাদের প্রিয়জন হারিয়েছে।

চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে এই সব দুর্যোগের সময় মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সেই সব লড়াকু সহযোগিতাপরায়ণ মানুষদের জন্য আমি গোটা দেশের পক্ষ থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাই। এভাবেই বেঁচে থাকুক মানবতা।

আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে, সড়ক দুর্ঘটনার হার কমাতে। আমরা কেউ চাইনা আর কোন ভাই বোন বন্ধু আগুনে পুড়ে বা অন্য কোন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাক। সবাই সচেতন হলেই কেবল আশা করা যাবে যে আর কোনো পুড়ে যাওয়া লাশের ছবি কোনো পত্রিকার পাতায় আমাদের দেখতে হবে না।

-জাজাফী

৫ জুন ২০২২

পরিমার্জিত

২৩ আগষ্ট ২০১৬,দৈনিক ইত্তেফাক।

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments