স্বাস্থ্য, খাদ্য সুরক্ষা এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় মৌমাছি চাষ

বিশ্ব মৌমাছি দিবস

0
277

শ্যামল প্রসাদ চৌধুরী
পরিবেশবিদ, সম্পাদক, শ্রীভূমি

আজ ২০ মে ,বিশ্ব মৌমাছি দিবস। প্রতি বছর ২০শে মে বিশ্ব মৌমাছি দিবস(World Bee Day) পালন করা হয়।সারা বিশ্বের মানুষকে মৌমাছি পরাগায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জাতিসংঘের জৈবিক বৈচিত্র্য কনভেনশন (UNCBD) ২০ মে তারিখটিকে বিশ্ব মৌমাছি দিবস হিসেবে মনোনীত করার আহ্বান জানায়।জাতিসংঘ কর্তৃক এই দিনটি ঘোষণা করা হয়েছিল ।

মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগরেণু রক্ষার জন্য, স্লোভেনীয় মৌমাছি পালনকারী সমিতি ২০১৪ সালে একটি প্রচারণা শুরু করে । এই উদ্যোগকে স্লোভেনীয় সরকার সমর্থন করে l ২০১৫ সালে, এই উদ্যোগটিকে বৃহত্তম আন্তর্জাতিক মৌমাছি পালনকারী সংস্থা, এপিমোন্ডিয়া Replica Watches uk সমর্থন ও সহযোগিতা করে। আবার ২০শে মে হল স্লোভেনীয় মৌমাছি পালনকারী আন্তন জানসার জন্ম তারিখ । যিনি আধুনিক মৌমাছি পালনের পথিকৃৎ এবং মৌমাছি বিষয়ক অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে buy replica watches ২০ মে কে বিশ্ব মৌমাছি দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য স্লোভেনিয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে ।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি সেইজন্য ২০ মে বিশ্ব মৌমাছি দিবস উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।উদ্দেশ্য সারা বিশ্বের মানুষকে মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারী(পল্লিনেটিং ইনসেক্টস,ফ্যামিলি আর্থ্রোপোডা) প্রজাতি সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা।আমরা সবাই কিন্তু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মৌমাছির বেঁচে থাকার উপর ও অনেকাংশে নির্ভর করি। প্রতিবছর বিশ্ব মৌমাছি দিবস উপলক্ষে একটি প্রতিপাদ্য (থিম) নির্ধারিত করা হয়।।এই বছরের বিশ্ব মৌমাছি দিবসের প্রতিপাদ্য, ” আমাদের সকলকে পুষ্ট করার জন্য প্রকৃতির দ্বারা অনুপ্রাণিত মৌমাছি” । কৃষি ,খাদ্য rolex replica uk ব্যবস্থা এবং আমাদের গ্রহের বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যে মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরতে এই প্রতিপাদ্য বা থিম ধার্য্য করা হয়।বাস্তুতন্ত্র রক্ষা , ফসল উৎপাদন ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরাগায়ন, মৌমাছির একটি পূর্ণকালীন কাজ ।মৌমাছিরা বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭০,০০০ উদ্ভিদের পরাগায়ন করে। মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারী ছাড়া, ফল ও শাখ সব্জির অভাব দেখা দেবে। যখন আমরা বন্যফুল, বাগান এবং অন্যান্য ফুলের গাছ রোপণ করি, তখন আমরা পরাগায়নকারী মধু মৌমাছিদের সমর্থন করি। তারা তাদের বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রজাতি ফুল ও উদ্ভিদের অমৃতের (সুক্রোজ স্টার্চ,ও সুগার)উপর নির্ভর করে। বিপরীতভাবে, আমরা আমাদের খাদ্য সুরক্ষা ও বেঁচে থাকার জন্যও মৌমাছির উপর নির্ভর করি! কারণ তাদের পরাগায়ন ক্ষমতা ছাড়া, অনেক পুষ্টিকর উদ্ভিদ বংশবৃদ্ধি করতে পারত না।খাদ্য সরবরাহ, টেকসই কৃষি , আমাদের জীবন , জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য প্রাথমিক পরাগায়নকারীদের মধ্যে মৌমাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।পরাগায়নকারীরা কেবল খাদ্য নিরাপত্তায় সরাসরি অবদান রাখে না, বরং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগরেণু রক্ষার লক্ষ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (জিন কালচার) ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ক্ষুধা দূরীকরণে ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে ।বিশ্বের ৭৫ শতাংশেরও বেশি ফসলের উৎপাদনে সহায়তা করে মৌমাছি , যার মধ্যে রয়েছে ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম এবং বীজ। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি, পরাগায়নকারীরা খাদ্যের মান এবং বৈচিত্র্য উন্নত করে।প্রকৃতিতে পরিবেশগত ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ও মৌমাছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন(গ্রীনহাউস গ্যাস কমাতে) এবং পরিবেশ সংরক্ষণেও মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।মৌমাছি কেবল বন্যফুলের পরাগায়নেই অবদান রাখে না, বরং কৃষি ফসলের পরাগায়নেও অবদান রাখে। একটি অনুমান অনুসারে, মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারীরা প্রায় 90% ফুলের উদ্ভিদ এবং “বিশ্বের প্রধান ফসলের 70%” পরাগায়ন করে। মৌমাছি ছাড়া, এই সংখ্যা হ্রাস পাবে ও খাদ্য সংকট দেখা দেবে । জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মৌমাছিরা এই মুহূর্তে বড় হুমকির মুখে। মানুষের প্রভাবের কারণে বর্তমান প্রজাতির বিলুপ্তির হার স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০ থেকে ১,০০০ গুণ বেশি। প্রায় ৩৫ শতাংশ অমেরুদণ্ডী পরাগায়নকারী, বিশেষ করে মৌমাছি এবং প্রজাপতি, এবং প্রায় ১৭ শতাংশ মেরুদণ্ডী পরাগায়নকারী, যেমন বাদুড়, বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির মুখোমুখি।
আমরা সবাই মৌমাছির বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করি। মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগরেণু, যেমন প্রজাপতি, বাদুড় এবং হামিংবার্ড, মানুষের কার্যকলাপের কারণে ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে।
বিশ্বব্যাপী পোকামাকড়ের সংখ্যা এবং বৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৭০ সাল থেকে জৈববস্তু ও জৈব প্রজাতি প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বাসস্থানের ক্ষতি ,আনসায়েন্টিফিক এগ্রিকালচার,জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ (কৃষি ) নগরায়নের ও শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে – এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মৌমাছি ক্রমশ বিপন্ন হয়ে উঠছে।
পরাগায়ন আমাদের বাস্তুতন্ত্রের টিকে থাকার জন্য একটি মৌলিক প্রক্রিয়া। বিশ্বের প্রায় ৯০% বন্য ফুলের উদ্ভিদ প্রজাতির সম্পূর্ণরূপে বা অন্তত আংশিকভাবে প্রাণী পরাগায়নের উপর নির্ভর করে, বিশ্বের ৭৫% এরও বেশি খাদ্য শস্য এবং ৩৫% বিশ্বব্যাপী কৃষি জমি ও নির্ভর করে। পরাগায়নকারীরা কেবল খাদ্য নিরাপত্তায় সরাসরি অবদান রাখে না, বরং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও অতীব গুরুত্বপূর্ণ।বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন এর
হুমকিগুলি দীর্ঘদিন ধরেই জানা ছিল। বিশ্ব ব্যাপী জল বায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক
চালিকাশক্তিগুলি কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে এবং কীভাবে তাদের প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রকৃতপক্ষে উচ্চ স্তরে কোনো গবেষণা হয়নি।উদাহরণস্বরূপ, যে পোকামাকড়গুলি বা জৈব বৈচিত্র্য তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল থেকে মানুষের ক্রিয়াকলাপের জন্য বঞ্চিত হয়েছে সেটা পুনরুদ্ধার (রেস্টোরেশন)এর কোনো বিকল্প গ্রহণ করা হয়নি।


মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ একটি নতুন পরিবেশে বা উচ্চ তাপমাত্রার দ্বারা আরও বেশি প্রভাবিত হতে পারে বা ক্লাইমেট চেঞ্জ এর জন্য উপকারী কীটপতঙ্গ ও মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখতে adaptive স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হয় না।এই বিষয়গুলি নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।তাদের হ্রাস আমাদের খাদ্য উৎপাদনকে বিপন্ন করে, খরচ বৃদ্ধি করে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে গ্রামীণ সম্প্রদায় ও গ্রামীণ অর্থনীতি টেকসই এর জন্য মৌমাছি সংরক্ষণ অতিব প্রয়োজন।মৌমাছি কৃষি বাস্তুবিদ্যা, আন্তঃফসল চাষ, কৃষি বনায়ন এবং সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনার মতো প্রকৃতি-বান্ধব কৃষি পদ্ধতি ও পরাগায়নকারীদের টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। মৌমাছি চাষ স্থিতিশীল ফসলের ফলন নিশ্চিত করে এবং খাদ্য ঘাটতি ও পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করে।ইচ্ছাকৃত পরাগায়নকারী সুরক্ষা প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত জীববৈচিত্র্যের অন্যান্য উপাদানগুলির সংরক্ষণকে উৎসাহিত করে, যা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, মাটির উর্বরতা , বায়ু ও জল নিয়ন্ত্রণের মতো বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবাগুলিকে উন্নত করে। টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থার জন্য খাদ্য, আঁশ এবং জ্বালানি উৎপাদনের জন্য কৃষি পদ্ধতির দীর্ঘমেয়াদী সহাবস্থান নিশ্চিত করে এমন একটি সামগ্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।পরাগরেণুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য আমাদের সকলেরই কিছু না কিছু করার আছে।
ভারত সরকার ও বেশ কিছু প্রকল্প ও উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারত সরকার ,কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং
জাতীয় মৌমাছি পালন ও মধু মিশনের আওতায় নয়াদিল্লির পুসার জাতিসংঘের জৈবিক বৈচিত্র্য কনভেনশন (UNCBD) এ বলেন যদিও ফসলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরাগায়নকারী
মৌমাছি ক্লাইমেট চেঞ্জ ও দূষণ এর জন্য ক্ষতি হচ্ছে
তবে অন্যান্য পরাগায়নকারী, যেমন বাম্বল বি,রাও ক্লাইমেট চেঞ্জ এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।মৌ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।সরকার ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩.১৮ জানুয়ারী ২০২৪ পর্যন্ত তিন বছরের জন্য জাতীয় মৌমাছি পালন ও মধু মিশনের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছে।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ক্ষুধা দরিদ্র ও বেকারত্ব দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে মৌমাছি চাষ ও মৌ প্রকল্প।ভারত সরকার সুইট মিশন প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং আমাদের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বেকার যুবকদের এই শিল্প অর্থাৎ সুইট রেভলিউশন ইন্ডাস্ট্রি তে অংশ নিতে উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলে মনে হয়।
বিশ্ব মৌমাছি দিবস ২০২৫ এর
প্রকৃতির দ্বারা অনুপ্রাণিত মৌমাছি আমাদের সকলকে পুষ্ট করার জন্য এই প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে,
প্রতিটি পরিবেশবাদী এবং সচেতন নাগরিককে
মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে
এবং তাদের আবাসস্থল রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় রাষ্ট্রসঙ্ঘ।

Previous articleসন্ধ্যা রাতের সেঁজুতি
Next articleউঠোন পেরোলেই কালো মেঘ
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here