Saturday, July 27, 2024
spot_imgspot_imgspot_img

দুই পৃথিবী

মিঃ টম


বিয়ের সাজে সজ্জিত বসে থাকা মেয়েটির নাম ইয়ানা, অন্য বিয়ে গুলোর মতো বাসায় ধুমধাম নেই, চারিদিকে বরের বাসার এবং নিজের বাসার কিছু মানুষ ছাড়া কেউ নেই। ইয়ানার মনে পড়ে সেদিন বিকেলের কথা, হাজার অনুরোধে মেহেদীকে রাজি করিয়েছে দেখা করতে। তখন দুজন দুজনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কিন্তু কারো মুখ থেকে একটু শব্দ আসছে না। একসময় স্তব্ধতা ভেঙে ইয়ানা বললো, কেমন আছো। আজ প্রায় একমাস পরে তাদের কথা হচ্ছে। মেহেদী ইয়ানার কোন জবাব দিলো না। সে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ ইয়ানা চুপ থাকার পর আবারও বলল, আচ্ছা তুমি আমার সাথে এমনটা করলে কেন। এমনটা না করলেও তো পারতে। দীর্ঘ চারবছরের সম্পর্ক আমাদের, এর মাঝে কি এমন হলো যে মূহুর্তেই শেষ করে দিলে। আমি কি কোন ভুল করেছি। ভুল হলে মাফ করে দাও, তবুও ছেড়ে দিও না। মেহেদী কোন কথা বলছে না, ইয়ানা বললো আমার প্রশ্নের জবাব কি পাবো? এদিকে মেহেদী জানে না ইয়ানাকে কি বলবে? কি অজুহাত দেখাবে তাকে ছেড়ে দেওয়ার? কিছুই খুঁজে পায় না। এক সময় মেহেদি চুপ করে না থেকে বললো, তুমি আমার চেয়েও ভালো কাউকে পাবে।

আমাকে ভুলে যাও। ইয়ানা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো, ভুলে যাওয়ার জন্য কি ভালোবাসছিলাম? মোটেও না। মেহেদি তার কথার জবাব দেয়,আমি জানি না, তবে আমাকে ভুলে যাও, আমার চেয়ে অনেক ভালো কাউকে পাবে সবসময় দোয়া করবো।

ইয়ানা আর কথা না বাড়িয়ে, হাতে থাকা ব্যাগ থেকে একটি কার্ড বের করে মেহেদি কে দিয়ে বললো, হুম, এই নাও আমার বিয়ের কার্ড, আমি বিয়ের আগে পযন্ত তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। এই বলে চোখের জল আড়াল করে ইয়ানা মেহেদি কে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেল। মেহেদি চেয়ে থাকলো ইয়ানার পথে, মেহেদীর ইচ্ছে করছিলো, ইয়ানার হাত ধরে টেনে তাকে বুকের সাথে আকড়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে, কিন্তু সে পারলো না। বলতে পারলো না ভালোবাসি তোমাকে ইয়ানা। 

এসব ভাবতে ভাবতে ইয়ানার চোখ থেকে অশ্রু পড়তে থাকে। বিয়েতে বসার জন্য ইয়ানাকে ডাকতে এলে সে নিজেকে সামলিয়ে বিয়ের জায়গায় চলে যায়, ইয়ানার দুচোখ অপেক্ষা করছিলো মেহেদী আগমনের।

এদিকে মেহেদী ছাদে বসে একা একা কি যেন ভাবছে। কতরাত ছিল মেহেদী এই সময় আলাদা স্থান হলেও দুজনে চাঁদ দেখেছে। আজ সে একাই দেখছে। মেহেদী চলে যাবে কালকে এই শহর ছেড়ে। মেহেদীর বাবা-মায়ের যা আছে তাতে ইয়ানা কেন, তার পরিবার কেও বসিয়ে খাওয়াতে পারবে, তবুও মেহেদী কেন জানি তাদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিল না।

দুজনের স্বপ্ন ছিল, একসাথে চাঁদ দেখার, রোজ বিকেলে ইয়ানার খোপার চুল খুলে বেণি বানিয়ে দেওয়ার, সেই চিরচেনা নদীর তীরে দুজনের পূর্নতা পাওয়া ভালোবাসা দিয়ে নদীকে রাঙিয়ে দেওয়ার। দুজন দুজনের কাঁধে মাথা রেখে সাজানো স্বপ্ন গুলোকে পূর্নতা দেওয়া। আজ সবই মিথ্যে হয়ে গেল। 

সকালে রীতিমতো মেহেদী ও তার বাবা মা বেরিয়ে পড়লো, এখানকার বাসা, জায়গা জমি সব কিছু বিক্রি করেছে কয়েকদিন আগে, যদিও তার বাবা-মার মোটেও ইচ্ছে ছিল না। মেহেদীর শেষ ইচ্ছে বলে তার জোরাজোরিতে করলো। রাতে মেহেদী এক মূহুর্তের জন্য দু চোখের পাতা এক করে নি, ট্রেনে উঠতেই ঘুম এসে পড়লো। বাবা-মার ডাকে ঘুম ভাঙলে দেখে তারা ইন্ডিয়া এসে পড়েছে। ইন্ডিয়ায় তাদের দাদুর বাসা, তার বাবাও এখানেই জন্ম গ্রহণ করেন, মেহেদীর বাবা বাংলাদেশের মেয়ে মানে তার মাকে বিয়ে করে ওখানেই থেকে যায়। এখানে আসার সপ্তাহ খানিক পর মেহেদী ও তার বাবা মা মেহেদীর রিপোর্ট গুলো নিয়ে হাসপাতালে যায়, যদিও মেহেদীর কোন ইচ্ছে ছিল না। তবুও বাবা মার ইচ্ছেতে আরও একবার টেস্ট করলো। ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে। সবার মনে এক অজানা দস্যুর উপস্থিতি। মেহেদীর ক্যান্সার ধরা পড়েছে এক মাস হলো। ডাক্তার বলেছে আর মাত্র ছয় মাস সে বাঁচবে। তখন ডাক্তার আগের রিপোর্ট টা দেখে, মেহেদীকে ঠিক দুবার টেস্ট করলো। দুবার কেন চেক করলো তাদের কারো জানা নেই। তবে সন্দেহ ছিল না যে রিপোর্ট ভুল আসবে। কিন্তু তাদের মনের গতিপথ বদলিয়ে ডাক্তার বললেন, মেহেদীর আগের রিপোর্ট ভুল আসছে। প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে চাইলো না। পরে বিশ্বাস করলে আনন্দে সবার চোখে পানি এসে পড়ে, কিন্তু মেহেদী স্তব্ধ হয়ে আছে। কেন রিপোর্ট ভুল আসলো৷ এতদিন প্রিয় মানুষকে হারানোর একটা স্পষ্ট কারণ ছিল। আজ নেই, কি করবে মেহেদী ভেবে পাচ্ছে না। সে তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলো। কেন ইয়ানাকে ছেড়ে দিলো। মূহুর্তেই ভাবে ইয়ানার যদি বিয়ে না হতো তাকে ফিরিয়ে আনতাম। কিন্তু তাকে আর ফেরানোর অধিকার মেহেদীর নেই।একটি প্রাণ কাঁদছে বিরহে, এই কান্না আজ থামার নয়। 

এদিকে ইয়ানার স্বামী দূর্ঘটনায় মারা যায় দুদিন হলো। তাদের বিয়ে হয়েছে ভিডিও কলে। সে জাপানে থাকে, ছুটি নিয়েছিল বিয়ের জন্য। কিন্তু হঠাৎ তার ছুটি বাতিল হয়ে গেছে। এদিকে সবকিছু ঠিক হাওয়ার তো বিয়ের তারিখ পেছানো যায় না, তাই এভাবে বিয়ে হলো। এখন ইয়ানার স্বামীর বাসার লোকজন ইয়ানাকে অপয়া বলে। তাকে নিজের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে, তাদের কথা এই অপয়া আমাদের সংসারে এসে ছেলের সাথে এমন হলো। ইয়ানার পরিবার ও তাকে এখন কিছুটা কুলক্ষণা ভাবে। তবুও হাজার হলেও মেয়ে তাই রেখেছে তাকে। ইয়ানা এখন নিজেকে এক অপয়া ভাবে, সারাদিন এক রুমে বসে থাকে, ঠিক মতো খাবার খায় না। এক বন্দী জীবন উপহার দিয়েছে নিজেকে। যে জীবনের রং হারিয়ে গেছে, সাদাকালো মেঘ জমেছে তার আকাশে। 

দু দিকের দুই পৃথিবী এখন ভিন্ন, দুজন দুজনের অপেক্ষায় যদিও তারা জানে মিলন হাওয়া সম্ভব নয়।

হবে কি তাদের দেখা আবার? দেখা হলে কি আবার পূর্ণতা পাবে দুই পৃথিবীর ভালোবাসা। পাবে কি সেই নদী পূর্নতা?

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments