Sunday, November 10, 2024
spot_imgspot_img
Homeসাহিত্যগল্পঅন্য কিছুর আশায়

অন্য কিছুর আশায়

রাদির সাথে বাবার খুব কমই দেখা হয়।রাদি যখন সকালে ঘুমিয়ে থাকে বাবা তখন অফিসে রওনা হয় আবার রাতে বাবা যখন বাসায় ফেরে রাদি তখন ঘুমিয়ে যায়।একমাত্র ছুটির দিনেই কেবল বাবার সাথে রাদির দেখা হয়,কথা হয় আড্ডা হয়।শুক্রবারে সারা সপ্তাহের জমিয়ে রাখা ঘুম একবারে জেকে বসে রাদির ছোট্ট চোখে।ঘুম ভাংতে ভাংতে জুম্মার নামাজের সময় হয়ে যায়।বাবা ডেকে তোলেন রাদি চলো মসজিদে যাই।রাদি খুব একটা আগ্রহ দেখায় না।মাত্র ক্লাস টুতে পড়ে রাদি।এক শুক্রবারে কি মনে করে রাদি বেশ ভোরেই ঘুম থেকে উঠলো। তার পর বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বললো বাবা আজকে তোমার সাথে আমি নামাজে যাব।ছেলের কথা শুনে বাবা খুব খুশি হলেন।গোলস করে বাবা রাদিকে নিয়ে মসজিদে রওনা দিলেন।

রাদি অবাক হয়ে দেখলো তার মত আরো অনেক বাচ্চারাও নামাজে এসেছে।বাবার মত বড়রা যেমন আছে তেমনি দাদুদের বয়সীরাও আছে।নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বেরোনোর সময় গেটে দাড়িয়ে এক লোক সবাইকে জিলাপি দিচ্ছিল।লোকটা রাদির হাতেও দুটো জিলাপি ধরিয়ে দিলো।রাদি দেখলো বাবাও দুটো জিলাপি পেয়েছে।তার পর হাটতে হাটতে বাসার পথে যেতে যেতে রাদি সেই জিলাপী খেয়ে শেষ করলো।রাদির ভীষণ ভাল লাগলো।বাসায় ফিরে এটা নিয়ে সে বাবাকে কত কত প্রশ্ন করলো।বাবাও যতটা পারে উত্তর দিল।সেদিনের পর রাদির অপেক্ষা শুরু হলো।আবার এক সপ্তাহ পর বাবার অফিস ছুটি থাকবে আর সে বাবার সাথে মসজিদে যাবে।

এক সপ্তাহ পর রাদি একা একাই মসজিদে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বাবার অপেক্ষায় থাকলো।ছেলের এই পরিবর্তন দেখে বাবার খুব ভাল লাগলো।বাবা ছেলেকে সাথে নিয়ে মসজিদে রওনা দিলেন।সেই শুক্রবারে রাদি দেখলো নামাজ শেষ হওয়ার পর সবাই পাশের স্কুলে যাচ্ছে।বাবার সাথে রাদিও সেখানে গেল।তার পর দেখা গেল সেখানে সবাইকে বসিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে।আসলে সেদিন পাশের বাসার একজনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সবাইকে খাওয়ানো হচ্ছি। ছোট্ট রাদির বিষয়টা খুবই ভাল লাগলো। আবার এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর শুক্রবার আসলো।আগের মতই রাদি রেডি হয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করলো। তার পর বাবা রেডি হলে দুজন মসজিদে রওনা হলো।

যথারীতি নামাজ শেষ হলো এবং বাবার হাত ধরে রাদি বাইরে বেরিয়ে এলো।নাহ সেদিন গেটে দাড়িয়ে কেউ জিলাপী দেয়নি।রাদি বাবার হাত ধরে সেই স্কুল মাঠের দিকে রওনা দিল।রাদির বাবা জানতে চাইলেন স্কুলের দিকে কেন যাবে? ছোট্ট রাদি বললো কেন বাবা ওখানে না নামাজের পর বিরিয়ানি খেতে দেয়।বাবা বুঝলেন তার ছোট্ট ছেলেটি ভেবেছে প্রতি শুক্রবারেই হয় গেটে দাড়িয়ে জিলাপী দেওয়া হয় নয়তো স্কুলমাঠে গিয়ে বিরিয়ানী খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।তিনি রাদির কাধে হাত রেখে বললেন রাদি বাবা আজতো খাবার দেওয়া হবেনা। সব সময়তো খাবার দেওয়া হয়না।আগেরবারতো একটা লোকের মৃত্যুবার্ষিকি ছিল তাই খাবার দেওয়া হয়েছিল।

বাবার কথা শুনে ছোট্ট রাদির মনটা বিষন্ন হয়ে গেল।এর পরের শুক্রবারে খুব ভোরে রাদি আর ঘুম থেকে উঠলো না।নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে বাবা ডাকলেন কিন্তু রাদির আলস্য যেন আর ছাড়লোইনা। সেদিন বাবা একাএকাই মসজিদে গেলেন। এর পরের শুক্রবারেও রাদি মসজিদে গেলনা তার পরের শুক্রবারেও মসজিদে গেলনা।বাবা একদিন জানতে চাইলেন রাদি তুমি আর মসজিদে নামাজে যাওনা কেন? রাদি বললো বাবা ওখানেতো এখন আর জিলাপীও দেয়না বিরিয়ানীও খাওয়ায় না তাই যাই না। ছোট্ট রাদির কথা শুনে বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।রাদিকে তিনি বললেন কেউতো মসজিদে জিলাপী বা বিরিয়ানী খাওয়ার জন্য যায়না। সবাইতো নামাজ পড়তে যায়।ছোট্ট রাদি কিছু বললো না।বাবাও ওকে কিছু বললেন না। এভাবে কেটে গেল তিন চার সপ্তাহ। এক শুক্রবারে বাবা দেখলেন রাদি বেশ সেজেগুজে বসে আছে।ওর মাথায় টুপি।বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন রাদি তুমি আজকে এতো দ্রুত ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়েছ যে।রাদি বললো বাবা মসজিদে যাব।বাবা বললেন তুমিনা যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলে। জিলাপী বা বিরিয়ানীতো দিবেনা তাহলে কেন যাবে?

রাদি বাবার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো বাবা আমি ভেবে দেখলাম মসজিদে আমার মত ছোটরাও যায় তোমার মত বড়রাও যায় আবার বুড়ো দাদুরাও যায়। রোজতো আর জিলাপী দেয়না,বিরিয়ানীও দেয়না কিন্তু তার পরও যায়। কিন্তু কেন যায়? আমার মনে হলো অন্য কিছু পাওয়ার জন্য যায়।সেই অন্য কিছুটা কি সেটা দেখার জন্যই আমি এখন থেকে যাবো।যতদিন পযর্ন্ত সেই অন্য কিছুটা না পাবো ততোদিন যেতেই থাকবো।
ছোট্ট রাদির কথা শুনে বাবার চোখে পানি চলে আসলো।রাদিকে তিনি বুকে জড়িয়ে নিলেন।তার রাদি আর সবার মতই সেই অন্য কিছুর আশায় মসজিদে যাবে ভেবে তার খুব ভাল লাগছে।

১৪ মে ২০১৪
#জাজাফী

রাদির সাথে বাবার খুব কমই দেখা হয়।রাদি যখন সকালে ঘুমিয়ে থাকে বাবা তখন অফিসে রওনা হয় আবার রাতে বাবা যখন বাসায় ফেরে রাদি তখন ঘুমিয়ে যায়।একমাত্র ছুটির দিনেই কেবল বাবার সাথে রাদির দেখা হয়,কথা হয় আড্ডা হয়।শুক্রবারে সারা সপ্তাহের জমিয়ে রাখা ঘুম একবারে জেকে বসে রাদির ছোট্ট চোখে।ঘুম ভাংতে ভাংতে জুম্মার নামাজের সময় হয়ে যায়।বাবা ডেকে তোলেন রাদি চলো মসজিদে যাই।রাদি খুব একটা আগ্রহ দেখায় না।মাত্র ক্লাস টুতে পড়ে রাদি।এক শুক্রবারে কি মনে করে রাদি বেশ ভোরেই ঘুম থেকে উঠলো। তার পর বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বললো বাবা আজকে তোমার সাথে আমি নামাজে যাব।ছেলের কথা শুনে বাবা খুব খুশি হলেন।গোলস করে বাবা রাদিকে নিয়ে মসজিদে রওনা দিলেন।

রাদি অবাক হয়ে দেখলো তার মত আরো অনেক বাচ্চারাও নামাজে এসেছে।বাবার মত বড়রা যেমন আছে তেমনি দাদুদের বয়সীরাও আছে।নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বেরোনোর সময় গেটে দাড়িয়ে এক লোক সবাইকে জিলাপি দিচ্ছিল।লোকটা রাদির হাতেও দুটো জিলাপি ধরিয়ে দিলো।রাদি দেখলো বাবাও দুটো জিলাপি পেয়েছে।তার পর হাটতে হাটতে বাসার পথে যেতে যেতে রাদি সেই জিলাপী খেয়ে শেষ করলো।রাদির ভীষণ ভাল লাগলো।বাসায় ফিরে এটা নিয়ে সে বাবাকে কত কত প্রশ্ন করলো।বাবাও যতটা পারে উত্তর দিল।সেদিনের পর রাদির অপেক্ষা শুরু হলো।আবার এক সপ্তাহ পর বাবার অফিস ছুটি থাকবে আর সে বাবার সাথে মসজিদে যাবে।

এক সপ্তাহ পর রাদি একা একাই মসজিদে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বাবার অপেক্ষায় থাকলো।ছেলের এই পরিবর্তন দেখে বাবার খুব ভাল লাগলো।বাবা ছেলেকে সাথে নিয়ে মসজিদে রওনা দিলেন।সেই শুক্রবারে রাদি দেখলো নামাজ শেষ হওয়ার পর সবাই পাশের স্কুলে যাচ্ছে।বাবার সাথে রাদিও সেখানে গেল।তার পর দেখা গেল সেখানে সবাইকে বসিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে।আসলে সেদিন পাশের বাসার একজনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সবাইকে খাওয়ানো হচ্ছি। ছোট্ট রাদির বিষয়টা খুবই ভাল লাগলো। আবার এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর শুক্রবার আসলো।আগের মতই রাদি রেডি হয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করলো। তার পর বাবা রেডি হলে দুজন মসজিদে রওনা হলো।

যথারীতি নামাজ শেষ হলো এবং বাবার হাত ধরে রাদি বাইরে বেরিয়ে এলো।নাহ সেদিন গেটে দাড়িয়ে কেউ জিলাপী দেয়নি।রাদি বাবার হাত ধরে সেই স্কুল মাঠের দিকে রওনা দিল।রাদির বাবা জানতে চাইলেন স্কুলের দিকে কেন যাবে? ছোট্ট রাদি বললো কেন বাবা ওখানে না নামাজের পর বিরিয়ানি খেতে দেয়।বাবা বুঝলেন তার ছোট্ট ছেলেটি ভেবেছে প্রতি শুক্রবারেই হয় গেটে দাড়িয়ে জিলাপী দেওয়া হয় নয়তো স্কুলমাঠে গিয়ে বিরিয়ানী খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।তিনি রাদির কাধে হাত রেখে বললেন রাদি বাবা আজতো খাবার দেওয়া হবেনা। সব সময়তো খাবার দেওয়া হয়না।আগেরবারতো একটা লোকের মৃত্যুবার্ষিকি ছিল তাই খাবার দেওয়া হয়েছিল।

বাবার কথা শুনে ছোট্ট রাদির মনটা বিষন্ন হয়ে গেল।এর পরের শুক্রবারে খুব ভোরে রাদি আর ঘুম থেকে উঠলো না।নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে বাবা ডাকলেন কিন্তু রাদির আলস্য যেন আর ছাড়লোইনা। সেদিন বাবা একাএকাই মসজিদে গেলেন। এর পরের শুক্রবারেও রাদি মসজিদে গেলনা তার পরের শুক্রবারেও মসজিদে গেলনা।বাবা একদিন জানতে চাইলেন রাদি তুমি আর মসজিদে নামাজে যাওনা কেন? রাদি বললো বাবা ওখানেতো এখন আর জিলাপীও দেয়না বিরিয়ানীও খাওয়ায় না তাই যাই না। ছোট্ট রাদির কথা শুনে বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।রাদিকে তিনি বললেন কেউতো মসজিদে জিলাপী বা বিরিয়ানী খাওয়ার জন্য যায়না। সবাইতো নামাজ পড়তে যায়।ছোট্ট রাদি কিছু বললো না।বাবাও ওকে কিছু বললেন না। এভাবে কেটে গেল তিন চার সপ্তাহ। এক শুক্রবারে বাবা দেখলেন রাদি বেশ সেজেগুজে বসে আছে।ওর মাথায় টুপি।বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন রাদি তুমি আজকে এতো দ্রুত ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়েছ যে।রাদি বললো বাবা মসজিদে যাব।বাবা বললেন তুমিনা যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলে। জিলাপী বা বিরিয়ানীতো দিবেনা তাহলে কেন যাবে?

রাদি বাবার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো বাবা আমি ভেবে দেখলাম মসজিদে আমার মত ছোটরাও যায় তোমার মত বড়রাও যায় আবার বুড়ো দাদুরাও যায়। রোজতো আর জিলাপী দেয়না,বিরিয়ানীও দেয়না কিন্তু তার পরও যায়। কিন্তু কেন যায়? আমার মনে হলো অন্য কিছু পাওয়ার জন্য যায়।সেই অন্য কিছুটা কি সেটা দেখার জন্যই আমি এখন থেকে যাবো।যতদিন পযর্ন্ত সেই অন্য কিছুটা না পাবো ততোদিন যেতেই থাকবো।
ছোট্ট রাদির কথা শুনে বাবার চোখে পানি চলে আসলো।রাদিকে তিনি বুকে জড়িয়ে নিলেন।তার রাদি আর সবার মতই সেই অন্য কিছুর আশায় মসজিদে যাবে ভেবে তার খুব ভাল লাগছে।

১৪ মে ২০১৪
#জাজাফী

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments