উম্মে হাবিবা অহনা
অন্ধকার ঘরের এক কোণে টিপটিপ করে জ্বলছে একটা মোমবাতি।
ঘড়ির কাঁটা রাত দুই পেরিয়েছে, কিন্তু মিরার চোখে ঘুম নেই।
রাইসুল অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। হয়তো ক্লান্ত, সারাদিন অফিস করে ফিরে যেরকম বিধ্বস্ত থাকে
প্রতিদিনই।
তিন বছর ধরে সংসার করছে তারা — এই নিস্তব্ধতা, এই দূরত্ব… মিরার কাছে এখন খুব চেনা।
রাইসুল আগে খুব ভালোবাসত, ছোটখাটো জিনিসে খেয়াল রাখত, অফিস থেকে ফেরার সময় মিরার
প্রিয় ফুল নিয়ে আসত, কখনও মাঝরাতে মিরার কপালে চুমু খেয়ে জেগে থাকত শুধু তাকে ঘুমন্ত
দেখবে বলে
সেইসব দিন পেরিয়ে গেছে বহুদিন…
এখন তারা একসাথে থেকেও আলাদা—একটা সন্তান না থাকার শূন্যতা যেন অদৃশ্য দেয়াল তুলে
দিয়েছে মাঝখানে।
বাড়িতে গেলে আত্মীয়স্বজন জিজ্ঞেস করে, “খুশির খবর কবে দেবে?”
এই একটাই প্রশ্ন মিরার বুকটা ভারী করে তোলে।
ঘুম না আসায় মিরা নিঃশব্দে উঠে বারান্দায় যায়।
বৃষ্টি পড়ছে… ঠান্ডা বাতাসে তার চুল উড়ছে।
ঠিক তখনই পিছন থেকে কে যেন জড়িয়ে ধরে।
মিরার গা শিউরে ওঠে… পরিচিত সেই স্পর্শ।
— “উঠে এলে যে? তোমায় তো দেখলাম ঘুমে…”
— “তোমায় দেখলাম আনমনা… ভাবলাম তোমার পাশে এসে বসি।”
— “এমন করলে কাল অফিসে যাবে কীভাবে?”
— “বাদ দাও, না গেলে কী এমন হবে… আজ রাতটা তোমার আর আমার হয়ে থাক।”
মিরা হেসে বলল, “চা খাবে?”
রাইসুল চোখে ভালোবাসা নিয়ে বলল, “প্রিয়তমাকে উপেক্ষা করা যায়?”
মিরা চুপচাপ কিচেনে গিয়ে লিকার দিয়ে করা করে দু’কাপ চা বানাল।
বারান্দায় বসে তারা দু’জনে তিন বছরের সংসার ঘেঁটে ঘেঁটে স্মৃতি বের করল —
সেই প্রথমবার দেখা,
প্রথম ঝগড়া,
দু’জনে একসাথে ভিজে ফেলা এক বর্ষার দিন,
আর একটা রাত — যেদিন রাইসুল বলেছিল,
“তোমার মুখ না দেখলে আমার দিন শুরু হয় না…”
চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছিল,
আর মনে হচ্ছিল — হয়তো তাদের সম্পর্কটা এখনো শেষ হয়নি,
হয়তো এই তিন বছর কেবল শুরু।
এভাবেই রাতটা কেটে গেল।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করল…
দিগন্তে রঙ ছড়িয়ে সূর্য উঠছে ধীরে ধীরে।
পাখিরা ডেকে উঠছে…
সবকিছুই সুন্দর লাগছে হঠাৎ।
কিন্তু রাইসুল আর উঠল না।
সে শুয়েই ছিল চুপচাপ… নিঃশব্দ
মিরা পাথরের মতো এক জায়গায় বসে রইল…আর কাল রাতের সব কাহিনী মিরার কল্পনা ছিল
কারণ আজ বাদ জোহর রাইসুলের জানাজা।