ভালবাসা কখনো কখনো ফিকে হয়ে যায় কিন্ত একেবারে মরে না

0
1347

রক্সিকে নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন কানিজ আপু। হঠাৎ করে বাবা বদলী হয়ে ঠাকুর গাও চলে গেলেন। রক্সিরপুরো দায়িত্ব এসে পড়লো কানিজ আপুর ঘাড়ে। রক্সির বয়স এগার। এতদিন বাবা মা ভাই বোন  একসাথে থাকায় রক্সি ঢাকাতেই স্কুলে ভর্তি হলো। বাসা থেকে খুব বেশি দূরেনয় ওদের স্কুল। স্কুলটাও অনেক নামকরা। দ্যা আগা খান স্কুল। বাবা হঠাৎ বদলী হওয়ায় রক্সির বেশ অসুবিধা হয়ে গেল। এত ভাল স্কুল সে কোন ভাবেই ছাড়তে পারবেনা। এত এত ভালো ভালো বন্ধু এত  আধুনিক স্কুল আর বিশেষ করে ঢাকায় থাকা সব মিস করে সে ঠাকুর গাও যেতে পারবেনা। সে বায়না ধরলো ছোট আপির কাছে। ছোট আপি মানে  কানিজ আপি। ভাইকে  এতো বেশি ভালবাসেন যে নিজের হাজারটা সমস্যা থাকার পরও তিনি ভাইকে বাবা মায়ের সাথে যেতে দিলেন না। সেই যে নিজের কাছে রেখে দিলেন আর শুরু হলো সমস্যা।  ভাইকে নিয়ে সমস্যা নয় কারন রক্সি অনেক ভাল একটা ছেলে। সমস্যা হলো সময় দেয়া নেয়ার। কানিজ আপি ব্যাংকে চাকরি করেন তার ওপর তার একমাত্র ছেলে ওয়াসির দেখাশোনা করা সব এক সাথে পেরে উঠছিলেন না।

এভাবেই কেটে গেল অনেক কয়টা বছর। রক্সি ও লেভেল শেষ করে এ লেভেলে ভর্তি হলো। আর কানিজ আপি দেখতে দেখতে ব্যাংকের এভিপি হয়ে গেলেন। তার দায়িত্ব বেড়ে গেল আগের চেয়ে অনেক । তার এক মাত্র ছেলে ওয়াসি তখন স্ট্যান্ডার্ড ফাইভে স্কলাস্টিকাতে। হঠাৎ রক্সি স্কলারশীপ পেয়ে  গেল। সে ইউএসএ তে চলে গেল। যাবার আগে ছোট আপির গলা ধরে সে কি কান্না। আর আমাদের ছোট আপিও চুপ থাকলোনা।সেও খুব কাদলো। রক্সিকে সেছোট থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ  করেছে। সেই ভাইটা বিদেশে চলে যাচ্ছে আর সে কাদবেনা তাকি  হয়। অথচ রক্সির স্কলারশীপের খবর শুনে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল ছোট আপি। এর পর বেশ অনেক ক বছর হলো।

ছোট আপির একমাত্র ছেলে ওয়াছি ও ও লেভেল এ লেভেল শেষ  করলো। স্কলারশীপ পেল ইউএসএতে যাওয়ার। অথচ এই এতোদিনে আমাদের রক্সিএকটি দিনের জন্যও দেশে আসার কথা মনে  করলোনা। মনে করলোনা তার প্রান প্রিয় ছোট আপিকে। ছোট আপি বেশ আপসেট তার ভাই এমন হতে পারে বা হবে তা তার কল্পনাতেও ছিলনা। ছোট বেলা বাবা বদলী হয়ে গেলে রক্সি বাবার সাথে  যেতে চায়নি সেকেবল ভাল স্কুলে পড়ার  কারনেই নয় সব চেয়ে বড় কারন ছিল ছোট আপির সাথে  থাকতে পারবেনা এই ভয়। সেই রক্সি নাকি ওখানে এক বিদেশী মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং আর কোন দিন বাংলাদেশে ফিরে আসবেনা।  ছোট আপির এতোদিনের ভালবাসা একেবারে বিফলে গেল। কখনো কখনো এমন হয় আপন মানুষ ভালবাসা অস্বীকারকরে। রক্সি এখন ফোন ও করেনা।  ছোট আপির এখন কেবলই ভয় তার ছেলেটাও যদি আমেরিকা গিয়ে আর দেশে আসতে না চায় তাহলে সে কাকে  নিয়ে বাচবে। তার একমাত্র ছেলেতো ওয়াসি।

ওয়াসী অবশ্য কথা দিয়েছে সেতো ফিরে আসবেই সেই সাথে তার প্রিয় মামা রক্সিকেও ফিরিয়ে আনবে। ওয়াসী এখন আমেরিকায়। এদিকে আমাদের ছোট আপি আমাদের কানিজ আপি ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছে সেই সাথে পথ চেয়ে আছে ভাইয়ের ফিরে  আসার। সত্যিই  কি সেই ভাই তার  আচলের তলে বেড়ে ওঠা ভাই ফিরেআসবে? আবার তার গলা জড়িয়ে ধরে বলবে ছোট আপি আমি ফিরে এসেছি। এক বছর বাদে ছোট আপি এয়ারপোর্টে গেলেন ছেলেকে রিসিভ করতে। মনে একটাই আশাএবার নিশ্চই ছেলের সাথে ছোট ভাইটাকে দেখতে পাবেন। কিন্ত দেখা গেল শুধু ছেলেটাই ফিরে এসেছে। রক্সি আসলোনা কেন সে  কথা জিজ্ঞেস করতেই ওয়াসী চুপ হয়ে গেল। ছোট আপির চোখ পানিতে ভরে  গেল। সেদিন ছোট আপি কারো  সাথে  কথা বলেনি। এতটুকু দানা পানিমুখে নেয়নি। আমরা সবাই ভেবে নিলাম আমাদের রক্সি  ও দেশের  হয়ে গেছে। সে আর আমাদের তুচ্ছ ভালবাসার টানে ছুটে আসবেনা। কিন্ত স্রষ্ঠার লিলাখেলা কে বোঝে। পরদিন সকালেই রক্সি এসে হাজির তাও বিদেশী স্ত্রীকে সাথে করে।  আমাদেরকে বলেও নি যে সে  সত্যিই আসছে। আমাদেরকে চমকেদেয়ারজন্যই সে এভাবে এসেছে। ওকে দেখে ছোট আপি সব ভুলে গেলেন। যেন সেই ১৩ বছর বয়সী ভাইটা তার আচলের নিচে। ভাই বোন এক সাথে একাকার  হয়ে গেলো। আমি তখন কেবল দেখলাম  আমাদের ছোট আপি যেন রক্সিকে ফিরে পেয়ে গোটা দুনিয়া ফিরেপেয়েছে।

জাজাফী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here