বজ্রপাতের একদিন

0
126

আকাশ ইসলাম সাগর

বাংলা জৈষ্ঠ মাস। চারিদিকে আম কাঁঠালের মৃদু গন্ধ। সকাল থেকেই আসমান ভারী। এই বুঝি মেঘের আগমনী বার্তা। বাড়ির পাশেই ফসলের মাঠ। কৃষকেরা আপন কাজে ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততায় নিজেকে হারিয়ে ফেলার পায়তারা। থমথমে প্রকৃতি। বোধ হয় দশ মিনিট যেতে না যেতেই, কেমন যেন প্রকৃতির রুক্ষতা ঢেলে দেওয়ার মেজাজ দেখাচ্ছে গ্রাম বাংলায়। সবাই আপন আলয়ে ফেরার জন্য ব্যতিব্যস্ত। মেঘের গুরুমগুরুম শব্দ ক্রমেই বাড়তে লাগল। হালকা গরম হাওয়া খানিক পরপর ছুঁয়ে যাচ্ছে। কালা ও ধলা এগুলোর কোনো রকম তোয়াক্কা না করে কাজে খুবই ব্যস্ত। আমি মাঠ থেকে ফেরার পথে স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের দেখলাম তারা খুবই আনন্দে খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরছে। শহুরে আট দশটা ছেলের মতো রুদ্রের বেড়ে ওঠা। তার কাছে মনে হয়েছে, শহুরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ গ্রামের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থেকে একেবারে আলাদা। তাইতো সে বাড়ি থেকে মাঠের পথে গান গাইছে আর দৌঁড়াচ্ছে। আসলে গ্রীষ্মের ছুটি উপভোগ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। আমার সাথে ধাক্কায় যেন তার প্রতিক্রিয়া নেই। কিরে রুদ্র! যাচ্ছি কোথায়? কোনো সাড়া না দিয়ে মনের সুখে দৌড়। আমি কথা আওড়াতে থাকলাম। আকাশে এতো মেঘ বেশিদূর যাসনে বাবা। কে শুনে কার কথা! আমি বাড়ি পৌঁছাতেই মেঘ আর হালকা বৃষ্টি একাকার। হঠাৎ বজ্রপাত! মনে হচ্ছিল বোমার আঘাতে পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। শব্দের সাথে সে কি আলো! বাড়ির সবাই বাধা দেওয়া সত্তেও মাঠে ছুটে গিয়েছে রুদ্র। বাড়ির সবাই রুদ্রের খোঁজে উতলা। আমি তাকে খুঁজতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। তাও একমাত্র ভাগ্নে। এভাবে কয়েক মিনিট খোঁজের পর মাঝ পাথারে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে আমি হকচকিয়ে গেলাম। একি, এতো দেখি স্কুলের সেই বাচ্চা দুটি! তাদের শরীর থেকেই ধোঁয়া বের হচ্ছে। কিছুদূর আগাতেই ধলা ও কালার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন নির্জীব দেহ দেখে নিজের অজান্তেই চোখের কোন ঘেঁষে জল গড়িয়ে পড়ল। বুঝতে আর বাকি রইল না, বজ্রপাতের দরুন এ অবস্থা। সামনে আগাতেই ভাগ্নের পড়ে থাকা নিথর দেহ দেখে আমার কলিজা কেঁপে উঠল। ভাগ্নে আমার আর বুঝি নেই। হাত ধরতেই তার হৃদস্পন্দন টের পেলাম। অচেতন হয়ে আছে।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

Previous articleরুহের হাহাকার 
Next articlePoem by Peshawa kakayi || ইরাকি কবির কবিতা
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here