ভাষান্তর: মোহাম্মদ মোশাররফ হুসাইন
তার পিতা নিজ খরচে তাকে বিদেশে ডাক্তারি পড়ার বন্দোবস্ত করল। তবে তার পিতা তাকে শর্তজুড়ে দিল যে বিদেশে যাওয়ার পূর্বে বিবাহকার্য সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। তার আপন খালাতো বোনের সাথে তার বাগদান খুব দুমদামের সাথে সম্পন্ন হলো। বাগদানের একমাস পরেই সে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করল। তার পিতা বিদেশের যাবতীয় খরচ বাবৎ তাকে প্রায় তিনশত ডলার তার হাতে দিল..! বিদেশে পাড়ি জমানোর পূর্বে তার পিতা -মাতা ও তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী শেষ বারের মতো তাকে অশ্রসিক্ত নয়নে বিদায় জানালো। বিদেশে গিয়ে সে এক জনবহুল এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাড়া নিয়ে থাকতে লাগলো। সেখানে সে আপন মনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলো। কারণ সে এই উদ্দেশ্যই অপরিচিত – অচেনা জায়গায় আপন জন ফেলে পাড়ি জমিয়েছে।
সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছিলো। আচমকা সে এক রাতে তার দারজায় কাকে যেন সে প্রচন্ড আওয়াজ করতে শুনতে পায়। দরজা খুলতেই সে এক প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাকে দেখতে পেল এবং মহিলাটি তার কাছে তার পাশের ফ্ল্যাটে থাকা এক যুবতী মেয়ের জন্যে ডাক্তার নিয়ে আসার অনুরোধ করল। সে ঐ ফ্ল্যাটের দিকে ছুটে গেল এবং ঐ মেয়েটির পেটের পীড়ার ঔষধ এনে দিলে মূহুর্তের মধ্যে তার পেটের পীড়া চলে যায়। মেয়েটি তার এই সেবা-যত্নের জন্যে ধন্যবাদ জানালো এবং সেও নিজ ফ্ল্যাটে ফিরে গেল।
মেয়েটি একদিন তার বাসায় তাকে ডিনারের অফার করল। প্রথমে সে কিছুটা সংকোচবোধ করলেও শেষমেশ সে তার অফার গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মেয়েটির বাসায় গিয়ে দেখে সে একা তার সাথে কেউ নেই…. ব্যাস এখন থেকেই সবকিছুর যাত্রা শুরু..। মেয়েটি তার সামনে নেশাজাতীয় পানি পরিবেশন করল। প্রথমে সে কিছুটা অস্বীকৃতি জানালেও খুব দ্রুতই সে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সে মনে মনে ভাবছিল যদি সে তার পরিবেশনকৃত পানিয় দ্রব্য গ্রহন না করে তাহলে হয়তো সে মনে করতে পারে সে তাকে মনেমনে ইগনোর করছে..! এর ফলে তারা একে অপরকে খুব কাছ থেকে চেনার এক মোক্ষম সু্যোগ তৈরি হয়ে গেল… তারা নেশায় এতটাই মত্ত ছিল যে কখন দ্বিপ্রহর হয়ে গেল তারা সেটা টেরই পাইনি। সে খুব তীব্র মাথা ব্যাথায় ভুগছিল। তাই সেখান থেকে প্রস্থান করার মনস্থ করল। মেয়েটি তার অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত সে তার কিচেন রুমে চলে গেল। সেখান থেকে সে এক সাদা লিকুইডের একটি ইনজেকশন এনে তার দেহে পুশ করে দিল। ফলে সে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে। আর বিপত্তিটা ঠিক সেখানেই ঘটে। প্রতিদিন বিকাল হলেই তার মাথা শুরু হয়ে যায়। অবস্থা এমন এমন হয়ে দাড়াল যে এটা তার নিত্য দিনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে । মাথা ব্যাথা শুরু হলেই সে মেয়েটির কাছে ছুটে যায় এবং মেয়েটিও তার জন্যে’ Comfortable syringe’ বা আরামদায়ক সিরিঞ্জ তার জন্যে প্রস্তুত করে রাখে। দুই মাস যতে না যেতেই সে ‘Comfortable syringe’ পুশিংয়ের নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
হঠাৎ এক রাতে সে মেয়েটির কাছে ভিক্ষুকের ন্যায় ধরনা দেয় এবং তার কাছে করজোড়ে করে বলে তাকে সেই ‘Comfortable syringe’ পুশ করার জন্যে। মেয়েটি সাফ জানিয়ে দেয় এই সিরিঞ্জের দাম অনেক এবং বর্তমানে তার হাতে এত টাকা নেই। তারপর সে মেয়েটিকে একশত ডলার হাতে ধরিয়ে দিল। মেয়েটি তাকে বলে: এই সিরিঞ্জের জন্যে এই অ্যামাউন্টাও যথেষ্ট নয়। কারন তা সরকারিভাবে ব্যান করা হয়েছে… এটা শুনে তার কাছে মনে হলো যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। সে মেয়েটিকে খুব কৌতূহল হয়ে জিজ্ঞেস করে এটা আবার কোন ধরনের জিনিস ?.. মেয়েটি অকপটে তাকে বলে: এটা হলো ‘হিরোয়িন ’! এটা শুনে তো সে তেলে-বেগূনে জ্বলে উঠল। সে মেয়েটিকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে লাগল এবং এক পর্যায়ে সে নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জোরে তার গালে এক চড় কষলো। শেষমেষ সে কোন উপায়ান্তর না দেখে মেয়েটির পায়ে পড়ে যায়। যাতে করে মেয়েটি তাকে ‘Comfortable syringe ’পুশ করে দেয়। মেয়েটি বলল : ঠিক আছে তবে তোমাকে এক টি শর্ত দিতে হবে তা হলো ; তোমার সব টাকা – পয়সা আমাকে দিয়ে দিতে হবে তাহলে তুমি যখনই চাইবে তখনই আমি তা তোমাকে এনে দিব। সে সাত-পাঁচ না ভেবেই তার পিতার দেওয়া সমুদয় টাকা মেয়েটির হাতে দিয়ে দিল। এখন তার ‘Comfortable syringe’ পুশ করার প্রয়োজন হলে মেয়েটি তাকে তা পুশ করে দেয়।
এভাবে চার মাস অতিবাহিত হলে মেয়েটি তাকে জানায় যে তার ব্যালেন্স শেষ । এখন তার কাছে একটি কানাকড়িও নেই যা দিয়ে তার সিরিঞ্জের জোগান দিবে। মেয়েটি তার দিকে ভ্রুকুঞ্চিত করে তাকিয়ে বলল: এক শর্তে তোমাকে আমি ‘Comfortable syringe’ এর ব্যাবস্থা করতে পারি। শর্তটা হলো তোমাকে আমার লোকেশন অনুযায়ী কিছু ব্যাগ চালান দিতে হবে। সে আগ-পিছ না ভেবে অবলীলায় তার শর্তে রাজি হয়ে যায়। এটাই পরে তার জীবনের জন্যে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সে ব্যাগ চালান দিতে শুরু করে দেয়। তার চালানকৃত ব্যাগগুলোতে যে ‘হিরোয়িন ‘ও ‘ক্র্যাক’ থাকত এ সম্পর্কে সে মোটেও ওয়াকিবহাল ছিলনা..!
কিছু দিন পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার এই মাদক চালনের বিষয়টি জানত পারলে তাকে বরখাস্তের নোটিশ পাঠায়। তার বিষয়ে জানার জন্যে তার পিতা সেখানকার দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা তার ছেলের যাবতীয় অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়গুলো ফাঁস করে দেয়। দূতাবাসের লোকেরা তাকে দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলে। সে রোগমুক্ত কিনা এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে তার শরীরে নানান ধরনের মেডিক্যাল পরিক্ষা – নিরিক্ষা চালানো হয়। রিপোর্টে দেখা যায় তার শরীরে এক জটিল রোগ দানা বেঁধেছে যা তাকে হয়তো ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিবে। যাকে এখন মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় ‘এইডস্’ । প্রথমে তার ‘এইডস্’ এ আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি । কিন্ত মেডিকেলে থাকা অবস্থায় সে তার ওয়াশরুমের দেয়ালে একটি লিফলেট দেখতে পায়, যেখানে লেখা ছিল: ‘Welcome to the AIDS Club’। এটা দেখে তার এখন বুঝার বাকি নেই যে সে এখন এইডসের ভিকটিম । ফলে সে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলে এবং ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করেছিলো। কিন্ত নিরাপত্তাকর্মী থাকায় তার জন্যে আর সেটা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
দূতাবাস তাকে নিজ দেশে পাঠানোর সকল ব্যাবস্থা গ্রহন করে এবং সেখানে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। মেডিকেল কতৃপক্ষ তার পিতাকে তার ‘এইডস্’এ আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ট অবহিত করলে তিনি ‘Hysteria’( মৃগ রোগ) তে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তার মাতাও এ খবর শুনে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। তার পিতা-মাতা উভয়কে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তার নব্য বিবাহিতা স্ত্রী আকস্মিক মেডিক্যাল কতৃপক্ষের মাধ্যমে এখবর জানতে পেরে সে কিছুটা সেন্সলেস হয়ে যায়। পরে তার স্বামীর যাবতীয় বিষয়াবলি জানতে পারলে তার চার হাত-পা প্যারালইসড হয়ে যায়। এক করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে এই ট্রাজেডির পরিসমাপ্তি ঘটে।