টয়লেট

0
56

ইউনুস মোহাম্মদ 

গতকাল থেকে ড্রেজারের মোটা পাইপ দিয়ে বালু নামছে জুয়েলের জাগায়।তার জাগার চারদিক দুই হাত উঁচু করে বেঁধেছে।ভেতরে পড়ছে সেই ড্রেজারের পাইপ দিয়ে আসা বালু।জায়গাটা ভরাট করে বাড়ি করার মতো করে ভিটা বাঁধবে।পূর্ব পাশ দিয়ে বাঁধের কিছুটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।গতকাল পানি নেমে গেছে চারদিকে ছড়িয়ে।তাতে বিস্তির্ন জায়গা পানিতে ভেসে গিয়েছিল।পাশের বাড়ির কিছু খড়িজাবা আর ছড়িয়ে রাখা ছাগলের লাদ (যেগুলো রোদে শুকানোর জন্য ছড়িয়ে রাখা হয়েছিলো)এই ড্রেজারের পানিতে ভেসে গেছে।পাশে একটা খড়কুটোর গাদা ছিলো।যেগুলো জ্বালানি হিসেবে পোড়ানোর জন্য গাদা করা ছিলো ।সেটারও পানিতে নিচের অংশ ভিজে জ্যাবজ্যাবে।তাতে সমস্যা নেই।এই ক্ষতি তেমন বড় কিছু নয়।
মাঝখানে এক প্লট রেখে পাশেই আলমের বাড়ি।এই খড়ির গাদা তাদেরই।আজ সকালে আলমের বউ এসে দেখলো এই ড্রেজারের পানিতে তাদের টয়লেটের পাশ ঘেঁষে অনেক বড় গর্ত হয়েছে।ভেতরে ঢুকে গেছে সেই গর্ত।এই অবস্থায় যেকোনো সময় টয়লেটের এই দিকটা ফাটল ধরতে পারে।দেবেও যেতে পারে।গতকাল সারারাত ড্রেজার চলেছে।নতুন বালুর ওপর নতুন টয়লেট দেয়া হয়েছে।টয়লেট দেয়ার সময় যথেষ্ট পানি ঢালা হয়েছিলো বালু ভেজানোর জন্য।ভিজেছিলো ভালোভাবেই।
সেই বালুই ড্রেজারের অবিরত পানির ধারা পেয়ে ভীজে,ভীজে এখন দেবে ভেতরে ঢুকে গেছে।তাই বড় গর্ত তৈরি হয়েছে টয়লেটের গোড়ায়।বউটির নাম সীমা।নতুন টয়লেট।তিন মাস হলো সত্তর হাজার টাকা খরচ করে এই টয়লেট দিয়েছে তারা।গর্তের যে অবস্থা তাতে যেকোনো সময় টয়লেট ভেঙে পড়তে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা রাতে ড্রেজারের পানির ধারা ছুটেছিলো তাদের টয়লেটের পাকা ঘেঁষে।সেই পানি পাশের বাড়ির বসত বাড়ির ছোট্ট পালানের ওপর দিয়ে বেড়িয়ে গেছে রাস্তায়।তাদেরও পালানে শাকপাতা বোনা ছিলো।তেমন ক্ষতি না হলেও ঐ বাড়ির দুয়ারও পানিতে ভেসে গিয়েছিল।তাদের চুলায় পানি ঢুকেছে।তাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতি তারা মেনেই নিয়েছে।যাহোক,সন্ধ্যা রাতে যখন সীমা এখানে এসে উঁকি ঝুকি দিয়েছিলো তখন কিছু চোখে পড়ে নাই।টয়লেটের গোড়ায় পানি এসেছিলো তখনও।আসলে তখন এমন চিন্তা বা ধারণা তার মাথায়ই আসে নাই।না হলে রাতেই বিষয়টা ধরা পড়তো।এতোটা ক্ষতি হওয়ার সুযোগ পেত না।টয়লেটের এই অবস্থা দেখে সীমা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লো।কি করবে ভেবে পেল না।তৎক্ষনাৎ সে তার স্বামীকে ফোন দিলো।তাকে জানালো টয়লেটের অবস্থা এবং এখন সে কী করবে জানতে চাইলো।
স্বামী ফোনের ওপাশ থেকে বললো,জুবেলের কাছে কও।

জুবেল এই ভিটি ভরাট করার দায়িত্বে আছে।গত দুইদিন ধরে সে আর তার বাপ এখানে দাঁড়িয়ে কাজের দেখাশোনা করছে।বাঁধের জায়গাটা ড্রেজারের বালু দিয়ে ভরে সমান হয়ে উঠেছে।লেবাররা আজও কিছু কাজ করছে।জুবেল আর জুবেলের বাপ আজও এসে দাঁড়িয়ে আছে।দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে দেখছে লেবারদের কাজ।কাজের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে কোনোটা ভুল করে কিনা?
মাঝে,মাঝে এটা সেটা বলছে তাদের।

সীমা এগিয়ে গিয়ে তার টয়লেটের ক্ষতি হওয়ার কথা বললো জুবেলের বাপকে।বাপের নাম হাকি।হাকি যেন সীমার কথা কানেই তুললো না।লেবারদের দিকে তাকিয়েই রইলো।এই দিকে একটু নজরও দিলো না।যেন এতে তাদের কোনো দায় নেই।সীমা দেখলো যে হাকি তার কথা পাত্তাই দিচ্ছে না।আর পাত্তা দিবেও না।তাই সে আর টয়লেটের কথা কিছু বললো না।শুধু জিজ্ঞেস করলো আজও তারা ড্রেজার চালাবে কিনা?
উত্তরে হাকি একটা মাত্র শব্দই উচ্চারণ করলো, না।
এই হাকি কিছুদিন আগে হজ্জ করে এসেছে।কিন্তু হজ্জ করে এলে কি হবে।তার মন এখনও পরিষ্কার হয়নি।কারো বিপদের কথা শুনে যে চুপ করে থাকে বা মুখ ফিরিয়ে নেয় তার ভেতর পরিষ্কার বলা যায় না।তাকেও বলা যায় না।না হলে সীমার কথার সামান্য হলেও গুরুত্ব দিতো।তাছাড়া ক্ষতিটা হয়েছে তাদের পানি যাওয়ার মাধ্যমেই।এখানে অবশ্যই তাদের দায় আছে।সীমা এবার জুবেলের কাছে এসে বললো,ভাই ড্রেজারের পানি যাইয়া আমাগো পায়খানার নীচে অনেক বড় গর্ত হইয়া গেছে।পাকা ভাইঙা পড়বো।
জুবেল পেছনে এক নজর তাকিয়ে দেখলো।দেখা যাচ্ছে।টয়লেটের গোড়ায় অনেক বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।পাকা যে এখনও হেলে পড়ে নাই বা ভেঙে পড়ে নাই সেটাই বড় সৌভাগ্য।
সীমা সামনের বালু দেখিয়ে বললো,ভাই আমি এহেন থাইকা বালি নিয়া গর্তের মধ্যে দেই।
জুবেল মানা করলো না।সে বললো,দ্যান।
তারপর কোদাল আর প্লাস্টিকের বোল এনে সেখান থেকে বালু তুলে দিতে লাগলো সীমা।একাই বালু কোদাল দিয়ে তুলে বোল ভরে।একাই কাখে তুলে নেয় সেই বালু ভর্তি বোল।নিতে কষ্ট হয় বালুভর্তি সেই বোল।সীমার সিজার হয়েছে দুইবার।সিজার হলে ভারি কিছু নিয়ে যাওয়া মানা।এটা ডাক্টারের নিষেধ।সীমা সেই নিষেধ উপেক্ষা করে বালু নেয়।নিতে হবে তাকে।কারণ,এখনই বালু দিয়ে গর্তটা ভরাট না করলে,মেরামত না করলে যেকোনো সময় এই টয়লেট ভেঙে পড়তে পারে।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

মাথার ওপর তীব্র রোদ।শরীর দ্রুতই ঘেমে যায়।আগুনের তাপের মতো গরমের তীব্রতায় শরীর জামার ভেতরে সেদ্ধ হয়।দশ বারো বোল এনে সীমা একটু জিরোয়।বাড়ি এসে একটা আম খায়।গাছে আম পাক ধরেছে।সেই আম দুই চারটা করে পড়ে প্রতিদিন।সেই আমই একটা কুড়িয়ে এনে মুখে দেয়।তারপর টিউবওয়েলে গিয়ে হাত মুখ ধোয়।এখানে বালু নিতে তার অস্বস্তি লাগছে।অচেনা কাজের লোকদের সামনে বালু আনতে হচ্ছে।যদি টয়লেটের এই অবস্থা না হতো তবে সে তাদের সামনে যেতো না।আবার বালু আনতে গিয়ে দেখলো জুবেল আর তার বাপ বাড়ি চলে গেছে।এখন আরো লজ্জা করতে লাগলো।শেষে দুই তিন বোল এনে বালু আনা বাদ দিলো।
আলম বাজারে ব্যবসা করে।সে বাড়ি এলো দুপুরের পর।আলম বাড়ি এসে টয়লেটের এই অবস্থা দেখে রাগারাগি করতে লাগলো।এমন কাম মানুষে করে?নিজের সুবিধার জন্য অন্য জনের অসুবিধা করা যায়?মানুষের কেমন বিবেক।এইসব বলতে লাগলো।সীমা এসে বললো,চুপ করেন।আমি বালি আইনা দিছি।বালি আরো লাগলে আরো দিবো।আমি বালি চাইছি পরেই বালি দিবার চাইছে।মানা করে নাই।
আলম তবু বাড়িতে এইসব কথা বলতে লাগলো।
শেষে বিষয়টি নিয়ে জুবেলদের সাথে ঝগড়া লাগলো।জুবেল তেমন কিছু না বললেও জুবেলের বাপ হাকি বাজখাঁই গলায় বললো,হ,আমি পানি ছাড়ছি ভালো করছি।তুই যা পারোস করিস।তুই আমার বালডা ছিড়া দিস।তাদের বাড়ির সবাই বেড়িয়ে এসেছে।বউ,ছেলের বউ,ভাতিজা বউ আর নাতি নাতনি মিলিয়ে এক দল।তারা এসে ভিটার পাড়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া দেখছে।আলমের কেউ নেই এখানে; তারা স্বামী স্ত্রী ছাড়া।আলম এখন চুপ করে আছে।তার মুখে কোনো কথা নেই।যা কিছু বলার শুধু হাকিই বলছে।হাকি কুদিফান্দি করে অনেক কিছু বললো।কবে আলম কী,কী অন্যায় কাজ করেছিলো সেই সব কথা তুলে তাকে শাসাতে লাগলো।তার সেই বাচনভঙ্গি দেখে বোঝা যায় অনেক দিনের ক্ষোভ জমে আছে আলমের ওপর।সেই ক্ষোভ আজ প্রকাশ করছে।
এদিকে আলমের মুখে কোনো কথাই জোগায় না।সে কি বলবে সেই কথার পথ খুঁজে পাচ্ছে না।তার মতো উল্টাপাল্টা কথা সে বলতে পারে না।তাই সে অপরাধীর মতো চুপ করে থাকে।

Previous articleপ্রিয় বন্ধু 
Next articleস্টেশনের সেই মেয়েটি
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here