মো. আসিফুর রহমান
বৈশাখের প্রথম প্রভাতে আকাশ মেঘে ঢাকা, তবু গরমের তাপে গা পুড়ছে। থমথমে নীরবতায় প্রকৃতি যেন নিশ্চুপ ধ্যানে মগ্ন। গাছের পাতা অচঞ্চল, বাতাসের স্পর্শ নেই। Audemars Piguet Replica ফুলকি, গ্রামের এক কিশোরী, বাড়ির পেছনের আম্রকুঞ্জে বসে পুরনো খাতায় ছবি আঁকছে। তার কলমের ডগায় ফুটে উঠছে বৈশাখের রঙিন স্বপ্ন। মা জরিনা বারান্দায় ধান ভানছেন, হাতের ছন্দে ধানের খোসা উড়ছে, যেন সোনালি স্বপ্নের ঝরাপাতা। দূর থেকে ভেসে আসছে সানাইয়ের সুর, মৃদু, কোমল, বৈশাখের প্রাণে প্রাণ জাগানো।
ফুলকির খাতায় বাংলার বৈশাখ জেগে ওঠে। এক পৃষ্ঠায় ফুটেছে মেলার উৎসব—মাটির হাঁড়ি, রঙিন খেলনা, হাসিমুখের ভিড়। আরেক পৃষ্ঠায় একটি গ্রামীণ পরিবার, সকালের Replica Watches store পান্তা-ইলিশের আয়োজনে মেতে উঠেছে। কাঁচা মরিচের তীব্র ঝাঁঝ, ইলিশের গন্ধ, আর পান্তার সেই ঘরোয়া স্বাদ—ফুলকির কল্পনায় যেন প্রাণ পায়। তার হাতের তুলিতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ফুটে ওঠে, যেন প্রতিটি রেখা বৈশাখের গান গায়।
হঠাৎ ছুটে আসে ছোটন, পাশের বাড়ির বন্ধু। তার চোখে উৎসাহ, মুখে হাসি। “ফুলকি, তুই হালখাতায় যাবি না? আমরা এখন যাচ্ছি!” ফুলকি হাসে, খাতাটা বন্ধ করে। হালখাতা—বৈশাখের আরেক নাম, নতুনের ডাক। দোকানিরা পুরনো বিল মেটায়, নতুন হিসাব শুরু করে। আর replica watches uk সেই উপলক্ষে মিষ্টি, চমচম, নিমকির আয়োজন—বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য। ফুলকির মনেও জাগে নতুন ভাবনা, যেন বৈশাখের হাওয়া তার হৃদয়ে ফিসফিস করে।
বৈশাখ মানে শুরু, নতুন ফসলের গন্ধ, মনের নতুন স্বপ্ন। ধানের শীষে সোনালি রোদ ঝিকমিক করে, আর গ্রামের পথে পথে ছড়ায় উৎসবের আমেজ। বিকেলে জেগে ওঠে বৈশাখী মেলা। কোনো প্রাচীন বটগাছের ছায়ায়, বা স্কুলের মাঠে, মেলার রঙিন আয়োজন। মাটির কারুকাজে ভরা দোকান, গরু-ঘোড়ার খেলনা, রঙিন হাঁড়ি—শিশুদের হাসিতে মুখরিত হয় চারপাশ। ফুলকি মেলায় ঘুরে, তার ছোট্ট হাতে মাটির খেলনা তুলে নেয়। মিষ্টির দোকান থেকে খই, মিষ্টি আর নানা পদের গন্ধ ভেসে আসে। বৈশাখী মেলা যেন এক টুকরো স্বপ্ন, যেখানে গ্রামের প্রাণ একাকার হয়।
সন্ধ্যার আগে দক্ষিণ থেকে হঠাৎ ধেয়ে আসে দমকা হাওয়া। ধুলোয় মেশা গন্ধ, আম্রকুঞ্জের পাতায় ঝিরঝির শব্দ। ফুলকির খাতা উড়তে থাকে, তার হাতে ধরা খেলনাটি যেন হাওয়ার তালে নাচে। বৈশাখী বাতাস এসেছে, প্রকৃতির নতুন গান নিয়ে। এই বাতাসে মিশে আছে মাটির সোঁদা গন্ধ, ফসলের স্বপ্ন, আর মানুষের হাসি। ফুলকি দাঁড়িয়ে দেখে, দূরে মেঘ কালো হয়ে আসছে। বৃষ্টি আসবে হয়তো, বৈশাখের প্রথম বৃষ্টি, যা ধুয়ে দেবে সব পুরনো ক্লান্তি।
জরিনা ডাকেন, “ফুলকি, ঘরে আয়, হাওয়া দিচ্ছে!” ফুলকি হাসে, তার খাতা বুকে জড়িয়ে ঘরে ফেরে। বাইরে বাতাস গান গায়, বৈশাখের গান। সেই গানে মিশে আছে গ্রামের সরলতা, মানুষের ভালোবাসা, আর প্রকৃতির চিরনতুন ছন্দ। ফুলকির মনে জাগে এক অচিন স্বপ্ন—যেন বৈশাখী বাতাস তার কানে কিছু বলে যায়। হয়তো নতুন কোনো ছবি আঁকবে সে, যেখানে থাকবে মেলার রঙ, মাটির গন্ধ, আর এই দমকা হাওয়ার গল্প।
বৈশাখের এই দিনটি শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা নয়, এ যেন প্রাণের উৎসব। গ্রামের মানুষের হৃদয়ে বৈশাখ আসে নতুন আশা নিয়ে, ফসলের সোনালি রঙ নিয়ে, আর সেই চিরচেনা সানাইয়ের সুরে। ফুলকির খাতায় যে ছবি ফুটে উঠছে, তা শুধু রঙের খেলা নয়—তা গ্রামবাংলার প্রাণের গল্প। বৈশাখী মেলার হাসি, হালখাতার মিষ্টি, আর দমকা হাওয়ার স্পর্শ—সব মিলে এক অপূর্ব সুর।
আকাশে মেঘ গর্জে ওঠে। বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা পড়ে আম্রকুঞ্জে। ফুলকি জানালার কাছে দাঁড়ায়, তার চোখে স্বপ্নের ঝিলিক। বৈশাখী বাতাস বয়ে চলে, তার সঙ্গে নিয়ে আসে নতুনের বার্তা। গ্রামের পথে পথে ছড়িয়ে পড়ে সেই বাতাস, মাটির সঙ্গে মিশে যায় মানুষের হৃদয়। আর ফুলকির খাতায় জন্ম নেয় আরেকটি ছবি—বৃষ্টি, হাওয়া, আর বৈশাখের অমলিন হাসি।