কবিতার প্রতিধ্বনি – কবিতার এক পাতা
প্রতিধ্বনির সাপ্তাহিক আয়োজন
১৬/০৫/২০২৫ ||শুক্রবার
লেখা পাঠাতে নিচে ক্লিক করুন-
লিখেছেন যারা-
- তীর্থঙ্কর সুমিত
- আইনুন নাঈমা
- রাকিবুল ইসলাম রাহান
- শেখ আলমগীর হোসেন বাদশা
- আজিজ হোসেন
- মো. রবিন ইসলাম
- রাফিয়া জান্নাত
- মৌ চট্টোপাধ্যায়
- মোহাম্মদ শফিক
- এ কে এম মোস্তফা
ই-পেপার পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন অথবা এই পাতা থেকেই পড়ুন
মাস্তুলের অধিকার
তীর্থঙ্কর সুমিত
নিজের মতো করে যেমন খুশি
বাড়িয়ে নাও নিজেকে
শেষবেলার সূর্যে একাকী
স্নান সারবো অমৃত লোকের সন্ধানে
বহু প্রাচীন বট গাছ আর বন্দরহীন জাহাজ
অপেক্ষা করবে তোমার জন্য
আমার ছুটির ঘন্টায় লেখা থাকবে
মাস্তুলের অধিকার…
যদি হারিয়ে যাই
আইনুন নাঈমা
যদি হারিয়ে যাই –
খোঁজবে প্রিয় ?
তোমার চার দেয়াল-যেথায় ছায়া পরতো
খুনসুটি কিংবা অভিমানের ;
তোমার দখিনা জানালা –
জোড়া তারা হয়ে জ্যোৎস্না মেখেছি কত রাত।
হাত বাড়িয়ে ছুয়েছিলুম শ্রাবন মেঘের জল।
তুমি ফিরবে বলে –
অপেক্ষায় উপেক্ষিত বিবর্ণ প্রহর।
বেলির গাজরা হাতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে তুমি !
তোমার চার দেয়াল ,
তোমার দখিনা জানালা ,
তোমার পূবালী দোরের চৌকাঠ
ভাবে কি আমার অভাব ?
আমি নেই বলে গুমরে উঠে কি আমিহীন
তোমার শুন্য উঠোন ?
আমার বিহনে
জোনাকির আলোয় ঝলসে যাবে কি ?
অঙ্গার হবে কি চাঁদের আলোয় ?
যদি হারিয়ে যাই –
খোঁজবে প্রিয় ?
নাকি নতুন রঙে ঢেকে দেবে চার দেয়াল ?
ছারপোঁকা নিধনের নামে –
এলুমিনিয়াম ফসফেডের কড়া ঘ্রাণে
ডুবিয়ে দেবে আমার শেষ ঘ্ৰাণ?
যখন ধ্বনিত হবে চার দিক –
একটি শোকসংবাদ ………..
তখন ঝাপসা হবে কি -তোমার চশমার মোটা কাঁচ ?
তোমার শহরের প্রতিটি অলিগলি
কাঁদবে কি আমার শোকে ?
যদি হারিয়ে যাই –
খোঁজবে প্রিয় ?
বলো-খোঁজবে ?
ফিলিস্তিনের কান্না
রাকিবুল ইসলাম রাহান
সারা বিশ্ব চুপ করে,
বসে থাকে চেয়ে —
জালিম যত যন্ত্রণা দেয়,
বলে না কেউ কইয়ে।
শিশুর মুখে ছিল হাসি,
রঙিন ছিল ধারা —
আজ পথে বারুদের
ছড়ায় শুধু ঝরা।
মায়ের কোল শূন্য করে,
নিয়ে যায় যে প্রাণ —
তাদের বুকে কবে যেন
আসবে আলোর জান!
হে পরওয়ারদিগার তুমি,
স্নেহে ভরা মন —
রক্ষা কর মজলুমদের,
করো দয়া দান।
তোমার রহম ছড়িয়ে দাও,
ফিরুক শান্ত দিন —
ফিলিস্তিনে ফুটুক আবার
রঙিন ফুলের বাগান।
বৃক্ষের সালতামামি
শেখ আলমগীর হোসেন বাদশা
চৈত্র তাপদাহে বৈশাখী আলাপন
জনমনে অস্বস্থির নাভিশ্বাস।
ঝিকিমিকি রোদের রূপালী পরশে
বিশাখার দেয়া জল
ঝিমিয়ে পড়া সবুজ পাতাদের
হাসিতে ঝরায় মুক্তা।
বাতাস আর মাটির আর্দ্র নির্যাসে
বৃক্ষ জগত পায় রহমতের রিজিক l
তৃণরাজের বিচ্ছুরিত বাতাসে
ফলবান বৃক্ষের শীতল ছায়ায়
মানুষ আর প্রাণীকূল পায়
বেচে থাকার প্রয়াস।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ব্যকুলিত খরায় বহুবর্ষী রসালের শীতল ছায়ায়
মিলে যায় নিরাপদ আশ্রয় l
জীবনের অনুকূলে সুপরিসর আসবাব
দৈনন্দিন চাহিদার রঙ্গিন প্রয়োজনে
অপরিসীম শোভায় নক্সা খচিত
আরেক প্রশান্তি।
ঝরাপাতা, ফুল-ফল বাকল
গড়ে তোলে মৃত্তিকার উর্বরা তেজ।
অসুস্থতা নিরাময়ে ভেসজ
ফলের নির্জাসে সুঠাম দেহি সুস্থতায়
পঞ্চ যৌগের ভিত।
প্রাণীকুল বাচার ঘূর্ণ্যমান চক্রে
চিরাচরিত নিয়মের আবর্তে
প্রশ্বাসে নির্গত কার্বনডাইঅক্সাইড গ্রহনের
অবিচল ধারায় প্রতিনিয়ত বৃক্ষ।
বৃষ্টিপাতে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি,
জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রাণান্ত অবিরাম।
খাদ্য জালানি গৃহনির্মাণেও
অবদান অপরিসীম।
বৃক্ষ নিধনের বেদনায়
আগামী প্রজম্মের তেজস্ক্রিয় বসবাস
সৃষ্টি করবে অমানবিক অন্য কোন যুগ।
বৃক্ষ নিধন নয়, রোপণের মাধুর্যতায়
আমরাই পারি গড়তে
আগামীর অক্সিজেন পরিবেষ্টিত
সুনির্মল পৃথিবী।
আকাশের ক্যানভাসে
আজিজ হোসেন
দীর্ঘ সময় ফেলে আসা বাঁকটাই
বারংবার ফিরতে চাই।
ফিরতে চাই ছোটাছুটিতে ক্ষয়ে যাওয়া
অতীত টাই কিন্তু হয় না “না ” ঝুলে থাকায়,
অথচ আসা-যাওয়ার ক্ষীনতম শব্দ
হৃদপিন্ডের বহমান টিকটিক স্রোতে
মিলেমিশে একাকার ,
তবুও খুঁজি হেতা হোথায়।
ক্ষণিক আক্রোশ জন্মে ,
ভেঙ্গে চুরে খান খান করি অতীত,
সৃষ্টি করি অন্য কিছু কিন্তু —-
কঠিন বাস্তবতাকে ধরে রাখতে
রং তুলিতে আকাশের ক্যানভাসে
তোমার ছবি আঁকি, বারংবার
আঁকি আর মুছি, মুছি আর আঁকি।।
বিদ্রোহের বিষ্ণু—নজরুল
মো. রবিন ইসলাম
শত সহস্র ধ্বংসের শঙ্খ বাজে যবে,
তব সুরপথে জাগে অনন্ত আঘাত—
তুমি, অনল-আত্মা, ছিন্ন গীতবিতান,
বিষাদ-চেতনায় গেঁথে দাও প্রলয়-স্মৃতির আখ্যান।
তব চরণচিহ্নে অগ্নির অলিন্দ,
আঁধারের ভিতরে আলোর অভিসন্ধি—
তুমি কি ক্ষয় না সৃজন? ধ্বংস না জন্ম?
তুমি কি বাণী না বজ্র? গানে গানে বজ্রের সম্মোহন?
কালবৈশাখীর কণ্ঠে যেই গর্জন বাজে—
তা তো তব কণ্ঠস্বর, বিদ্রোহের মন্ত্র,
যেখানে শব্দের শরীরে ঘূর্ণি-জ্বালা জাগে
আর প্রেমে-প্রলাপে উঠে রুদ্রের প্রান্ত।
অগ্নিবীণা হাতে যিনি শ্বাপদ সংকটে বাজান—
তাঁহার নাম নজরুল; শব্দে যিনি বিপ্লব রচনা করেন,
গীত যাঁর বিষে-অমৃতের মিলন—
সে তো স্রোতের উল্টো সাঁতারু, দিগন্তভেদী মেঘবালক।
তাঁর চোখে জ্বলজ্বলে এক ধ্রুপদী চেতনা,
যেখানে ইসলাম, হিন্দু, মানবতা—all in one—
ভাষা তাঁর রক্তের অনুবাদ, ছন্দে ক্ষোভের করতাল;
তাঁর কবিতা নয়, যেন কোনও মহাযুদ্ধের মহাকাব্য!
যতবার ঘুমায় জাতি, কূপমণ্ডূকের নিদ্রায়—
ততবার ফিরে আসে তিনি, কলমে ঝঙ্কার তুলে
তাঁর বাণী—অগ্নিগর্ভ, তাঁর হাসি—দূর্গম,
আর তাঁর নীরবতাও এক বিষাদের বিপ্লব।
ক্যামেলিয়া
রাফিয়া জান্নাত
লিখিনি উড়ো চিঠি!
তাই বলে কি,
পড়বে না আর
কবিতার পঙক্তি?
কভু আসি নি বলে
ফাগুনের মৃদু রোদে
ভুলে যাবে কি রং
সঙ্গহীন এ জীবন ।
আমি রোজকার নিয়মেই
করি যার অপেক্ষা।
সে কি তুমি নও?
অশান্ত মন, করে হৃদয় হরণ
রও তুমিও একেলা।
যদি হই উদাস কবি
একাকিত্ব খুঁজি।
তুমি দাঁড়িয়ে থেকো
শেষ জংশনে..
ক্যামেলিয়া হাতে এক সন্ধ্যা।
সবুজ স্বাক্ষর
মৌ চট্টোপাধ্যায়
তুমি আদর দিলে–
নিতে পারি এক বুক সামুদ্রিক ঝড়
আকালের দিনেও
খুঁজে পেতে পারি কোনো বিষন্ন সরোবর।
যুদ্ধের দিনে সৈনিক হতে পারি
হতে পারি বোমারু বিমান,
রক্তে লুটায় শরীর ধারায়
হয়ে যেতে পারি কোন এক মরু তুফান।
সে এক যুদ্ধ খেলায়
আদরের লাল সংকেত গায়ে
বলেছিলে ফিরে যাবে ওই মধ্যবর্তী দেশে–
আমি ফেরার পথে সবুজ নিশান দিয়েছি গেঁথে।
তাই তৃতীয় পক্ষ বলে দিয়েছে
এ অভিযান দেশের মাথায় দ্বেষ ভরে দেয়,
আদরের গায়ে কলঙ্ক—
প্রেমের ভাষায় রক্তধারা
আর দুচোখে মৃত্যু আতঙ্ক।
তবু তুমি আদর দিলে
নিতে পারি এক বুক সামুদ্রিক ঝড়,
যুদ্ধের লাল সংকেত মাঝেও
রেখে যেতে পারি সবুজ স্বাক্ষর।
রাজনীতির আয়না
মোহাম্মদ শফিক
রাজনীতির চক্রবাকে বক্র হাসে
পথ চলে তার ছন্দ হ্রাসে।
পা চাটে তার স্লোগান
নেতা নীতির জয়গান ।
পথ জনতার আমজনতা
মিডিয়া পাড়ার মৌনতা।
সব সয়ে যায় ফিকিরে
কাগজ কলমের জিকিরে।
খোলা চিঠি
এ কে এম মোস্তফা
মিতা, তুমি কেমন আছো জানতে ইচ্ছে করে
খোলা চিঠি দিলাম তোমায় অনেক দিনের পরে।
এতদিনে হয়তো তুমি গেছো আমায় ভুলে
তোমায় আমি স্মরণ করি স্মৃতির দুয়ার খুলে।
পাবনা ছিলো তোমার বাড়ি, আমি পিরোজপুরে
মনে হতো আমরা দু’জন যোজন যোজন দূরে।
সবার হাতে মোবাইল ফোন দেখি যেমন হালে
চিঠি ছাড়া কোন কিছু ছিলো কি সেই কালে?
তুমি আমায় চিঠি দিতে কত যতন করে
তোমার পরশ পেতাম যেন চিঠিগুলো পড়ে।
কোন চিঠির জবাব দিতে একটু দেরি হলে
বুকে কত কষ্ট নিয়ে ভাসতে চোখের জলে।
তুমি ছিলে শান্ত মেয়ে, কি যে অভিমানী
তোমার মনে জমে থাকা সব ব্যথা-ই জানি।
“পত্রমিতা” তুমি আমার আপন ছিলে কত
কেন তবে হারিয়ে গেলে মরীচিকার মত?
মিতা, তুমি আমার কথা এখনও কি ভাবো?
এ জীবনে কোনদিন কি তোমার দেখা পাবো?