কবিতার প্রতিধ্বনি – কবিতার এক পাতা
প্রতিধ্বনির সাপ্তাহিক আয়োজন
০২/০৫/২০২৫ ||শুক্রবার
লেখা পাঠাতে নিচে ক্লিক করুন-
লিখেছেন যারা-
- জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
- আইনুন নাঈমা
- মোহাম্মদ ফয়সাল
- মোঃ আব্দুল রহমান
- মহা রফিক শেখ
- ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জ্জী
- আবু হেনা মোস্তফা কামাল
- নাহিদা আক্তার
- এম আলমগীর হোসেন
- রওশন মতিন
- সাজ্জাদ হাসান
- শেখ আলমগীর হোসেন বাদশা
- সুমিতা চৌধুরী
- উৎপলেন্দু পাল
- এস এম সাজেদুর রহমান (অশ্রু)
- তীর্থঙ্কর সুমিত
- নুজহাত তাবাসসুম ইপ্সিতা
- মুহিবুল হাসান রাফি
- রানা জামান
- রঞ্জন চক্রবর্ত্তী
- রশিদ আহমেদ তালুকদার
- শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
ই-পেপার পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন অথবা এই পাতা থেকেই পড়ুন
বুলেটভরা দিনলিপি
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
আমার ডায়েরির পাতায়
রোজ লেখা হয় মৃতদের নাম
যাদের জীবন থেমে গেছে অঙ্ক কষার আগেই।
একটা ছবির নিচে
লিখি—”সে হাসতে জানতো”,
আরেকটায়—”তাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম ফেরত আসতে”।
আমার শহরে সকাল নামে বুলেটের তালে
বিকেল—একটি সম্ভাব্য বিদায়।
রাতে শিশুরা জেগে থাকে
কারণ ঘুম মানে এখন বিস্ফোরণ।
একজন বোন ভাইয়ের রক্ত মুছে বলে,
“শহীদ”।
শব্দটা কেবল গর্ব নয়,
একটি জাতির প্রতিদিনের আত্মত্যাগের সংজ্ঞা।
শুন্য পিঞ্জর
আইনুন নাঈমা
হাওয়ায় ভাসে আমার উড়ু চুল
উড়নার দু প্রান্ত যেনো দুটি ডানা….
মীন দৃষ্টিতে ক্ষীণ হয়ে আসে বিশাল আকাশ।
হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে শুনি ,তোমার সিঁড়ি মাড়িয়ে চলার মৃদু কাঁপন।
উড়ে যাও পাখি ,ফুঁড়ে যাও যন্ত্রণার যতো মেঘ
পড়ে রয় -পাঁজর ভাঙা শুন্য পিঞ্জর।
তুমি জানলে না পাখি
পিঞ্জরের প্রতিটি শিকল ,,ছিল আমারই প্রতিটি অস্থি
আস্থার ব্যাকবোন ভেঙে আজ আমি সরীসৃপ।
হামাগুড়ি দিয়ে আর কত দূর চলা যায় ?
বলা যায় মনের কাতরতা ?
পাল্টাতে পারিনা যে রং
চঞ্চুর কতকটা আঁচড় রয়ে গেছে ত্বকে
গা জোরে এখনো পালকের ঘ্রাণ।
আমি কার ?কে আমার হলোনা আর জানা
কেবা আপন ? কে বা পর ? কাকে বলি ‘মানা ‘।
নির্জর বালুচরে ,কানামাছির মিছে খেলায় ,
বেঁধে ছিলুম তাসের এক ঘর।
কাজল ধুয়ে যাবে বলে
কাঁদতে পারিনি কত রাত ,
আনতে পারিনি বাহিরে -বুকের ভিতর বইয়ে চলা টর্নেডো
বায়ুর সাগরে ডুবেও বায়ুর অভাবে
চুপসে আসে আমার ফুসফুস
চোখ তলিয়ে যায় গভীর ঘুমে
ঠোঁটের পেলবতা হারিয়ে নীল হয়ে আসে …..
নিঃশ্বাসের অভাবে নই
বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুতে।
মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে
মোহাম্মদ ফয়সাল
মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে চুপিচুপি,
জীবনের গল্প বলে যায় রূপকথার মতো।
হাসির আড়ালে ছিল যে কান্না,
সবই তুলে দেয় সে নীরব স্মৃতিপটে।
প্রতিদিন যে সূর্য ওঠে,
একদিন আর ওঠে না তার আলো।
চেনা মুখ, প্রিয় চোখ,
মুছে যায় ধীরে—নীরব কালো।
মৃত্যু কি শেষ? না শুরু নতুন?
নাকি জীবনেরই এক রূপান্তর?
হয়তো সে-ই সত্য, যাকে ভয় পাই,
যার কাছে নিঃশব্দে হার মানে উপসংহার।
কিন্তু বন্ধু, মৃত্যু তো ভয় নয়,
সে এক বিশ্রাম, ক্লান্ত জীবনের ছায়া।
শেষ নয়, এক অজানা পথচলা,
যেখানে হয়তো অপেক্ষা করে আরেক দুনিয়া।
কলম
মোঃ আব্দুল রহমান
অনেক কিছুই লিখতে চায় কলম
কিন্তু আইন নেই তার
যদি লকাপে বন্দি হতে হয়? যদি সহমত না পায়?
তবুও সে লিখবেই
তার শিরদাঁড়া ব্যাঁকা নয়
মাথা নত করেনি কখনো, যদিও হুমকি অগণিত
চোখে চোখ রেখে,
দাঁতে দাঁত চেপে, উঁচু শিরে কথা কয়
কেবল সত্যের বাণী বুলাই, শুধু ন্যায়ের বিচার শোনায়
এ কলম ভাঙবে না কভু
হয়তো মচকালেও নিজেকে সারিয়ে তুলবে
মিথ্যার বিরুদ্ধেই লড়ে যাবে আজীবন
এ কলম অক্ষত – অবিকৃত এবং অ-বিক্রিত!
না বলা কথা
মহা রফিক শেখ
কখনো দেখতে ইচ্ছে হলে
আমায় ডেকো,
আমারও ইচ্ছে হয়-
তোমাকে দেখার।
অন্তত একবারও…
কখনো কিছু বলতে চাইলে
আমায় বোলো,
আমারও ইচ্ছে হয়-
কিছু বলার।
যে কথা হয়নি বলা…
কখনো কিছু শোনাতে চাইলে
আমায় শুনিও।
আমারও ইচ্ছে হয়-
কিছু শোনার।
যা আগেই শোনা উচিত ছিল….
আশার ভেলায় ভাসা
ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জ্জী
আকাশে উড়ছে ঘুড়ি,
চল–লাটাই হাতে ধরি,
নতুন পথের বাঁকে,
কেন স্তব্ধ দিগন্তের সারি?
সময়ের স্রোত যায় বয়ে,
যায় দিন যায় গড়ি,
পুরোনো দিনের স্মৃতি,
হৃদয়েতে ভরি।
আলো ঝলমলে দিন,
আঁধার রাতের শেষে,
এই নতুন আশা জাগে,
মনে প্রাণে আবেগে হরষে।
বটবৃক্ষের ছায়ার ভিতর
আবু হেনা মোস্তফা কামাল
যে জীবন বটবৃক্ষের ছায়ায় মিশে যায়
সেই জীবনের মূল্য আর কতটুকুইবা হয়?
যতবার তোমায় দেখি, বিস্ময়ের আকাশ ততটাই
বিস্তৃত হয় যেমন করে বেড়ে চলেছে মহাবিশ্বের
মহা বিস্ফোরণটি! এক জীবনে যত কিছু দেখেছি
আর বুঝেছি বটবৃক্ষের স্নিগ্ধ ছায়ার মতো কিছু দেখিনি।
কী এক আবেশে মোহাবদ্ধ করে রাখে – কী শীত কী গ্রীষ্ম
কিংবা শরৎ হেমন্ত বর্ষা অথবা বসন্তে।
যার কিছু নাই তার হারানোর কিইবা আছে বলো?
জাগতিক সব কিছু তোমরা দখলে রাখতে পারো
কিন্তু মৃত্যুর মতন এতো সুন্দর সত্যকে কি আটকানো যায়?
প্রাণভ্রমরা যেমন কোনো রুপকথার কৌটায়
আটকিয়ে রাখা যায় না, ঠিক তেমনটাই মৃত্যুকেও যায় না।
কাগজের দলিলে যতই জীবন্মৃতের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি
করা হোক না কেন, জীবন থাকে আপন আপন হাতে!
অনিবার্য মৃত্যুকে কেউই আটকাতে পারে না ঠিকই
কিন্তু নিয়ন্ত্রিত মৃত্যুর দিন ক্ষন মুহুর্ত ব্যক্তি মানুষই
ঠিক করার অধিকার রাখে – ঘুম ও জাগরণের মতোই!
জীবন মৃত্যুর মাঝে যে অস্তিত্বের অবস্থান তার দেবারও
কিছুই থাকে না! অস্তিত্বের সংকটে সে যে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে
সেখানে অভিশাপের বর্ণমালা ধনাত্নক গল্পছবি আঁকে।
কাছের মানুষগুলো ভালো থাকুক, ভালো থাকুক তাদের
ইচ্ছেগুলো, চিন্তাগুলো পরিপূর্ণতা পাক, হোক স্বপ্নের বিস্তরণ – এমন কামনায় ভরা থাকে সেই অভিশাপ!
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে থাকা পথিকও বটবৃক্ষের স্নিগ্ধ
ছায়ায় জিরিয়ে নেয় অভিশপ্ত জীবনের ক্লান্তি ছাড়াতে।
আমার যে জীবন মিশে গেছে বটবৃক্ষের বিক্ষিপ্ত ছায়ায়
তার বিস্ময় কিন্তু তোমাকে দেখার চেয়ে বিশালতা পায়নি!
সেই জীবনের মুল্য আর কতটুকু হতে পারে?
মৃত্যুর চেয়েও মুল্যবান সত্য আদৌ কি কিছু হতে পারে?
আমি বরং বটের তলে ছায়ার ভিতর মিশে থাকবো!
ফুল, তুমি হাসো কেন?
নাহিদা আক্তার
ফুল, তুমি হাসো কেন,
আমাকে দেখে?
ডাকো কেন বারে বারে,
চোখেতে রেখে?
আমি কি তোমাতে রয়,
অচেনা হয়ে?
তুমি কি বোঝো আমার
নীরবের কয়?
তুমি যে সুবাস ছুঁয়ে,
বলো না কিছু।
আমার মন পড়ে রয়
তোমার পিছু।
হয়তো ছিলেম কভু,
তোমারই এক।
তাই তো এখনো ডাকো,
ভুলেও না থেক।
শহীদ মিনার
এম আলমগীর হোসেন
যাদের রক্তপিছল পথ ধরে, উড়ছে বিজয় কেতন,
বিশ্বজুড়ে শ্রদ্ধা ভরে জাতি করছে তাদের স্মরণ।
ভাষার তরে লহু ঝরে – নেই বিশ্বে নজীর,
বাংলা মায়ের শহীদ ছেলের গরবে উঁচু শির।
মায়ের ভাষা বক্ষে নিয়ে সাক্ষী শহীদ মিনার,
সামনে চলার দেয় প্রেরণা, যোগায় শক্তি অপার।
যার কারণে এই ভুবনে মুক্ত মায়ের বুলি,
তাদের অবদানের কথা কেমন করে ভুলি।
যার কারণে পেলাম ফিরে আসল পরিচয়,
জনম জনম সে কথা থাক কর্মে-চেতনায়।
সবার অন্তর জড়িয়ে থাক মাতৃভাষার আঁচলে,
প্রাণের টানে জাগুক ভাষা বিশ্বে ঘুমন্ত অঞ্চলে।
যার তরে দিয়েছিল আমার ভাইয়েরা প্রাণ,
হয়না যেন কভু মায়ের ভাষার অপমান।
জুলুম নিপীড়ন রুখিতে মিনার দেখায় পথ,
মাথা উঁচু করতে শেখায়, শেখায় প্রতিবাদ।
দেশপ্রেমের সেই খাঁটি মন্ত্রে সবল হলে দম,
থাকবেনা বিদেশী বুলির আমদানী হরদম।
ঘরে ঘরে এসেছে আজ ফাগুনের জোয়ার,
বিশ্বে শোনায় বাংলার গান প্রিয় শহীদ মিনার।
কোথায় লুকাবে
রওশন মতিন
রঙিলা মনে রংধনু ধেয়ে আসে, রঙিলা নাগর-
সুখের ভিতরে বিষ ঢেলে নাম জপি প্রেম
যৌবন জোয়ারে ভাসে রঙিলা খায়েস।
কামিনী মোহন অশ্রুতে বিষ ঝরে মায়াতে,
পত্র -পল্লবে আতাতায়ীর ক্রুরা হাসি-
বিষাক্ত ছায়া ,ডানা ঝাপটায় মায়াবীনি প্রেম,
সম্মোহনে শত্রুতা লাগাতার
অন্তরে অন্তরে কাঁটা তার-বেড়া বৈরিতা,
কোথায় লুকাবে তুমি, কোন ছলনা মায়ার আঁচলে।
প্রেম নয় নিছক পাশবিকতা,মানুষ যৌনতার দাস, ক্ষনিক চড়ুই প্রেম বিলাস কামুকতা
চোরাইপথে উড়াউড়ি ফুরুত-ফারুত।
প্রেম সেত ডাকিনী -যোগিনী,বিষকন্যা-কামিনী –
মোহিনী,সম্মোহনের বিষ ফণা তুলে নাচে ফণিণী,
কোথায় লুকাবে তুমি,মায়াবিনী বিষ-ফণা, বিষ- কাটালী ঝোপের আড়ালে ।
জন্মের সাধ
সাজ্জাদ হাসান
আমাদের এই দেশ ভাই
সকল দেশের কত সেরা,
ফুল ফল পাখি কলতানে
সবুজ এ শ্যামলে ঘেরা।
জন্ম লয়ে এই মাটি সাধ
যত তৃপ্তি জন্মভূমি,
মাটি এত গুন সুধা রস
রক্তে উসুল মাতৃভূমি।
কত আলো ছায়া পরিপাটি
নদ নদীর মাতার রেশ,
কত যে আপন বিসর্জন
গ্রাম বাংলা পরিবেশ।
দোয়েল কোয়েল মাটি গান
লাল সবুজে ফোঁটা শাপলা,
ছয়টি ষড়ঋতু বাহারে
বারোমাসে অবলা চপলা।
মশা’রা ব্যাকরণ বোঝে না
শেখ আলমগীর হোসেন বাদশা
চারিদিক হন্ হন্ পন্ পন্
মশকের মশকারিতে দুর্বিষহ জনজীবন।
ঘরে বাইরে, অফিস-আদালত, স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, দোকান বা ফুটপাত –
সবখানেই উৎপাত।
মশক নিধন ঔষধ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেটুয়া মশকের পকেট ভারিতে তলাশূন্য খাজাঞ্চিখানা ।
সিন্ডিকেট মুনাফা নিয়তির হাত ধরে পাড়ি দেয় গায়েবী মহাদেশ।
সাহেব মশারাও ক্ষুধার্ত সাহেবি কায়দায়।
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া অব্দি চষে বেড়ায় মানব রক্ত পিপাসু লোলুপ দৃষ্টি।
ঔষধ ছিটানো কামানের বিকট গর্জনে
ধোঁয়ায় কেরোসিন পুড়া গন্ধ।
মেডিসিনে বিষ নেই!
সুবিধাবাদী বিবেকহীন মশা’রা কখনও ব্যাকরণ বোঝে না।
বিদায় কালের বার্তায়
সুমিতা চৌধুরী
চৈত্র আজ নিচ্ছে বিদায় বিধূর সাজে,
চড়ক, নীল, সংক্রান্তির কোনো জৌলুস-ই ছোঁয়নি তাকে!
কেউ জানায়নি হাসিমুখে বিদায় সম্ভাষণ,
শুধু একরাশ কলুষতার কালি-ই তার আজ বিদায়বেলার সঙ্গী!
তপন ঢালেনি যদিও খর তাপের অগ্নি এবার,
তবুও তার দেহজোড়া দহনের দাগ!
শোণিতে ভেজা বসন লেপ্টে আছে বুকের ‘পরে,
দেহের মতোই ক্ষতবিক্ষত মনে রাশি রাশি কান্না দফন করেছে সে।
ক্লান্ত অবসন্ন পায়ে পেরোচ্ছে বর্তমানকে, মিশে যাচ্ছে অতীতের দায়রায়।
কাকুতিতে বলে যাচ্ছে, “রেখো না আমার এবারের কোনো চিহ্নই,
কালবৈশাখীর ঝড়ে উড়িয়ে দিও সবটুকু।
ইতিহাস তুমি লিখো না আর এই কলঙ্কিত অধ্যায়।”
শেষ বিদায়ে বারেক ফিরে বলছে সে বৈশাখকে,
“বাহ্যিক আড়ম্বর নাই বা থাকুক, মনের সাজে সাজিস তুই,
তপনকে বলিস, খরতায় নয়, উজ্জ্বলতায় সাথ দিতে।
বরং কিছু বৃষ্টিকে করিস সঙ্গী, সকল কলুষতা ধুতে,
লিখিস ভালোবাসার আলপনায় সকল মনে এক নতুন আগামীর গান।
এবার আর ফিরে তাকাস না আমার যাওয়ার পথে, পিছুপানে,
দৃপ্ত পদে রাখিস পা শুধুই সুমুখপানে, আগামীর নির্মাণে।
যেখানে যাকিছু শুভেচ্ছা, শুভকামনা জড়ো করে ঝুলি ভরে নিস মাধুকরীতে,
তা দিয়েই গড়ে নিস এক ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ।
জীর্ণ পাতার মতোই যাকিছু মনের কালিমা সবটুকু ঝরিয়ে, কবর দিস আজন্মের মতো।
হৃদ্যতার প্রলেপে ভরিস সবটুকু দহনের ক্ষত।
উপহার স্বরূপ দিস সবাইকে মান-হুঁশ, বিবেক, আর ঋজুতা জীবনের পরিসরে, যাপনের আঙিনায়।
এভাবেই ভালো থাকিস, আগলে রাখিস নতুন বছরটাকে ভালো রাখার আন্তরিকতায়।।”
বৃত্তের স্পর্শক সংক্রান্ত উপপাদ্য
উৎপলেন্দু পাল
বৃত্তের ভেতর গুটিয়ে গেছে জীবন
স্পর্শক বরাবর ছুটে চলা মনপাখিকে
টেনে ধরে খাঁচাবন্দী করতে চায়
ব্যাসার্ধ বরাবর ওত পেতে থাকা মেধা
পরিধি বরাবর জীবনশৈলী থেকে
চুঁইয়ে চুঁইয়ে প্রতিপল জমা হয় অবসাদ
বৃত্তের কেন্দ্রের চারপাশ বরাবর ক্ষেত্রফলে
বৃত্তের স্পর্শক ও স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধ
পরস্পর লম্বভাবে যুযুধান প্রতিপক্ষ
তবুও জীবনের মুক্তিবেগ নির্ণীত হয়
বৃত্তের স্পর্শক সংক্রান্ত উপপাদ্যে।
শয়তান মুক্ত করো আত্মাকে
এস এম সাজেদুর রহমান (অশ্রু)
শয়তানের ফাঁদে পড়ি বারেবারে হায়,
ভুলের নেশায় ডুবে যায় অন্তরায়।
পাপের সুরে বাঁশি বাজে অন্তরে,
নেকের পথ যেন হারায় আঁধারে।
রাগে জ্বলে ওঠে মন, শান্তি নাই,
দোষ ধরে পরের, নিজেরে চিনে না তাই।
লোভে মোহে ঘেরা স্বপ্নের ভেলা,
ডুবে যায় মাঝপথে সময়ের খেলা।
হিংসা জাগে যখন দেখি সুখ কারো,
খুশির বদলে জ্বলে অভিশাপ তারো।
মুখে হাসি, মনে ভরা কুটিলতা,
আত্মা কাঁদে, বোঝে না সে সত্যতা।
আল্লাহর নামে করো শুরু প্রতিদিন,
তওবার ধারা বইবে হৃদয়ছায়াবিন।
নামাজে রাখো মন, কলমা জপো,
ভালোবাসা দিয়ে শত্রুকে জড়াও অপো।
কোরআনের আলো নাও হৃদয় জুড়ে,
গুনাহগারে থেকো না আর পুঁড়ে।
ক্ষমা চাও রাতে, কাঁদো চুপিচুপি,
ফেরেশতা হাসে, জান্নাত বায় ছুপি।
হালাল পথে চলো, চাও না বেশী,
সন্তুষ্ট জীবন দেয় শান্তির দেশি।
দান করো লুকায়ে, খোদার তরে,
মানবতা বাঁচে ভালোবাসার ঘরে।
ত্যাগ করো অহংকার, ঈর্ষা, পাপ,
সৎ পথে চলো, জুড়াবে দুঃখ-জ্বাপ।
শয়তান ভুলাতে চাইবে বারবার,
আত্মা জাগাও, থাকো খোদার পার।
একটা অনুভূতি
তীর্থঙ্কর সুমিত
একটা অনুভূতির আদলে কিছুটা সময়
পুরোনো ইতিহাস লেখে বইয়ের পাতা জুড়ে
সময়ের নৌকা হলদি নদীর ঘাটে অপেক্ষা করে
যত দূরন্ত উচ্ছ্বাস ক্রমশঃ ফিকে হতে হতে
কখন যেন মিলিয়ে যায় পরিমিতির সূত্রে
তুমি আসবে বলে এখনও বৃত্তটা বিন্দু হয়নি
নবম শ্রেণীর ঘরে এখনও ব্ল্যাকবোর্ডে
কেউ হলদি নদীর অপেক্ষা আঁকেনি
তুমি আসবে বলে…
ইচ্ছে
নুজহাত তাবাসসুম ইপ্সিতা
ইচ্ছেরা সব মরে গেছে আজ
দারিদ্র্যের তাড়নায়।
কষ্টে ভরা এই রূপ আর চাই না দেখতে
ভেঙে যাওয়া সেই পুরাতন আয়নায়!
কেউ লিখতে চায় জীবনের গল্প।
কেউবা গড়তে চায় দালান অল্প -স্বল্প।
কারো ইচ্ছে গড়বে গয়নাগাটি ভরি ভরি
কেউ কিনবে বাড়ি -গাড়ি।
কেউবা আঁকে তুলির টানে নিজের ছবি।
কেউবা লিখে কবিতায় জীবনের গল্প সব-ই।
আমার ইচ্ছেরা মরে গেছে সব ই আজ।
কেননা,চোখের মাঝে আছে
একটা কান্না জমা পুকুর।
বুকের মধ্যে আছে
এক রাশ অভিমানী দুপুর।
আমায় খুঁজে পাবে
মুহিবুল হাসান রাফি
কী যে পৃথিবী,
কেমন যে মানব,
কোলাহলের ভিড়ে,
আমায় খুঁজে পাবে।
আলাপরিচতায়,
মুগ্ধতার আড়ালে,
কথার ভাঁজে বা ফাঁকে,
আমায় খুঁজে পাবে।
জড়ো জনতার সম্মুখে,
ধ্বনি তে ভেসে আসবে সুর,
তখনই আমায় খুঁজে পাবে।
উপেক্ষিত প্রহর,
যখন সূর্য্যি মামা হেসে ওঠবে,
গ্রাম-বাংলার বিলে-ঝিলে,
তখনই আমায় খুঁজে পাবে।
কৃষকরা যখন ব্যস্ত,
জমি চাষে,
ঠিক তখনই গরুর মইয়ে,
আমায় খুঁজে পাবে।
রাখালরা যখন বেরিয়ে পড়ে,
খুব ভোরে,
কোনো এক গাছের তলা থেকে শিহরিত বাঁশির সুরে,
আমায় খুঁজে পাবে।
খুব ভোরবেলার,
কিচিরমিচির পাখির শব্দে,
কোনো এক পাখির দলে,
আমায় খুঁজে পাবে।
যখনই দেখবে স্বেচ্ছাসেবকের দল,
নানা উদ্যমে,বিভিন্ন কাজে,
নতুন উদ্যোগে ব্যস্ত,
ঠিক তাঁদের মাঝে, এই আমাকে,
আমায় খুঁজে পাবে।
যখন দেখবে মায়ানগরে,
সবাই বই নিয়ে পড়তে ব্যস্ত,
তখন নিখুঁত ও সূক্ষ্ণ পাঠক হিসেবে,
আমায় খুঁজে পাবে।
কারো ডায়েরির চিঠি হয়ে,
বা কারো রূপকথার গল্প হয়ে,
কিংবা কারে জীবনের উপন্যাস হয়ে,
অথবা কারো মনের ভাবনার কবিতা হয়ে,
লেখনীর কালিতে,
আমায় খুঁজে পাবে।
এমনও দেখবে,
কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে,
চায়ের চুমুকে আড্ডার আসরে,
অথবা সূর্যাস্তের পাশে,
রক্তিম আভায়,
আমায় খুঁজে পাবে।
প্রখর রোদে,অস্বস্তিবোধে,
হালকা মেঘের আনাগোনায়,
টিপটিপ রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে,
শো শো বাতাসে,
আমায় খুঁজে পাবে।
একাকীত্ব নির্জন জায়গায়,
বাগান বিলাসিতায়,
আমায় খুঁজে পাবে।
সাগরের ঢেউয়ে,
বন-জঙ্গল উপভোগে,
ভ্রমণবিলাসিতায়,
আমায় খুঁজে পাবে।
কারো চোখের জল হয়ে,
বালিশ ভেজা কাটানো রাতে,
মন খারাপের সঙ্গী হিসেবে,
আমায় খুঁজে পাবে।
তথ্য সংগ্রহেে,তথ্য অনুসন্ধানে,
তাঁদের দলে নগণ্য প্রতিবেদক হিসেবে,
আমায় খুঁজে পাবে।
আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাবে,
প্রকৃতির পালাবদলে,
আনাচে-কানাচে,
সবিশেষ স্মৃতির মন্থরে।
চোখের ঝলক আলোড়নে,
দেখা যায় যতদূর,
তাঁর থেকেও দূর-দূরান্তের বহুদূর।
সর্বশেষ আমায় খুঁজে পাবে,
পুকুরপাড় কিংবা ঝোপের ঝাঁড়,
পাহাড়ের কিনারায় অথবা পরিত্যক্ত চূড়ায়,
হয় ড্রেনে নতুবা ডাস্টবিনে,
না হয় মসজিদের পাশে,
সাদা কাপড়ে মোড়ানো,
অন্ধকার গোরস্থানে।
❝বাস্তবে আমার অস্তিত্ব খুঁজতে এসো না,
বিফলে তোমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে❞
পদকে পা দেন
রানা জামান
পদক পাবে যেমন চাও
মূলের সাথে পাবে ফাও
আছে কাঁধের ব্যাগ,
উত্তরীয়’র সাথে পাবে
নামের একটা ট্যাগ।
গদ্যে দেবো। পদ্যে চাই?
ভাইটি আমার সমস্যা নাই!
করে দেবো দান,
পুস্তক একটি প্রকাশ করে
খেতে থাকুন পান।
পদ্যের সংখ্যা অনেক কম?
ফেলুন ভাইয়া স্বস্তির দম
আমি করবো পেশ,
কবিতার বই পেয়ে সবাই
বলবে: আহা বেশ!
প্রত্যেক বছর পেতে চান?
আরাম করে চিকেন খান!
গল্পের জন্য পাস,
ঐ পদকটা তৈয়ার করবো
আপনার জন্য খাস।
সাহিত্যের সব শাখার ঝোল
মুঠোয় ঢুকে বলবে বোল
একের পরে এক,
নগদ আমি নিয়ে থাকি
নেই না কোনো চেক!
এই কথাটার মানে কী?
গোবর মগজ খানে কি?
শর্ত জানুন এই,
টাকা ঢালুন পদক কাড়ুন
কোনো চিন্তা নেই!
উৎসকথা
রঞ্জন চক্রবর্ত্তী
একটা কবিতা লিখব বলে
পাহাড়ের থেকে ক্রমশ দূরে সরে গিয়ে
বন্ধুত্ব করেছি নদীর সঙ্গে,
একটা লাইন লিখব বলে
চলে গেছি উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত,
কবিতাকে একটি বার স্পর্শ করার আশায়
হেঁটেছি অরণ্যে-প্রান্তরে উদ্দেশ্যবিহীন,
সেই থেকে হারিয়ে গেছে পথ।
কবিতা যা বলে তার ভেতরেও থাকে
এমন অনেক কথা যা না বলা থেকে যায়
ঠিক যেরকম স্রোতের সঙ্গে সময়ের বিরোধ
চলে গেছে অমীমাংসার দিকে,
শেষমেশ স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে
জানতে চেয়েছি – ‘নদী তুমি এসেছ কোথা থেকে?’
যদি দাও ভালোবাসা
রশিদ আহমেদ তালুকদার
যদি ভালোবাসা দাও
চুম্বনে ভরাবো অধর
তনুর অনাবৃত পিজরাপোলে গড়বো
আমাদের মন্দাকিনী বাসর ।
যদি ভালোবাসা দাও
আঙুলে আঁকবো পৃথিবী
নখে নখে খেলবে চাঁদের দ্যোতি
বৃষ্টির লালায় সিক্ত হবে দুরাশার অনুর্বর মগজ।
চোখের তারায় তারায়
শব্দ পরী হবে নীলাকাশ
আমার পিঞ্জর তানপুরায়
গান গাইবে তোমার বসন।
মরতে হয় মানুষের মতো মরো
শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
পরীক্ষায় ফেল বা ব্যর্থ প্রেম নয়
দামী মোবাইল অথবা বাইকের আবদারে নয়,
মরতে যদি হয় মরো —
ঝাঁঝালো মিছিলের অগ্নি ঝরা শ্লোগানে
নির্যাতিতের নির্যাতনের সম্মূখে প্রতিরোধে
শোষিতের শোষণের বিরুদ্ধে রুদ্ররোষে
অন্নহীনের অন্ন যোগাবার তাগিদে অন্নদাতা হয়ে।
মিছিলে, শ্লোগানে, কালো রাজপথ রঞ্জিত করে
ক’জন পারে বল বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে অবিচল।
কীট- পতঙ্গ অথবা জানোয়ারের মৃত্যু কে চায়?
মরতে হলে মানুষের মত মরো
মৃত্যুকে হাসতে হাসতে বরণ করো
জীবনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে
মরে গিয়ে অমরত্ব লাভ করো হে যৌবন!