গাজী আবু হানিফ
এক গ্রামে বাস করে এক শিক্ষক। তার বাড়িতে রয়েছে নানাজাতের ফলগাছ।আম,জাম,কাঁঠাল, কলা,পেয়ারা,জলপাই, বরই,আতা,ঢেউয়া ইত্যাদি।সে আবার জমিতেও ধান ফলায়।একটি গাভী পালন করে। ধানের জমির একভাগে লাগিয়েছে ঘাস।
তার স্ত্রী গৃহিণী। হাঁসমুরগি পোষে।আর শিক্ষক স্কুলে চলে গেলে গাভীটিকে দেখাশুনা করে। বাড়ির আঙিনায় আছে ফুল ও সবজি বাগান।বাগানে আছে লাউ,করলা আর বরবটি, শিম।ঘরের বারান্দার পাশ ঘেঁষে আছে পেঁপে আর বেগুন গাছ।
পাতাবারগুলো বেশ চমৎকার।আধাপাকা ঘর। তার বাড়ির উত্তর পাশ দিয়ে গ্রামের ভেতর একটি আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ ছোটে গেছে। রাস্তার দুই পাশে সবুজ ফসলের মাঠ।
গ্রামের দুই পাশে রয়েছে দু’টি ছোট নদী।পূর্ব পাশে বিজনা আর পশ্চিম পাশে ঘুঙুর। গ্রামটি বেশ বড়।হিন্দু মুসলমান মিলে প্রায় আট হাজার লোকের বাস।
ছড়ায় বলা যায় –
গাঁয়ের নাম কাইমপুর
বিজনা থেকে ঘুঙুর
হাঁটতে হাঁটতে দুপুর
সাথে নিও চিড়া গুড়।
শিক্ষকের নাম হাসান সাহেব। তার এক ছেলে তিন মেয়ে।ওরা কমল,পুষ্প, লায়লা ও শায়লা। ওরা লেখাপড়া করে আর বাড়িতে অবসর সময়ে টিভি দেখে,কম্পিউটার গেমস,দাবা,লুডু,কানামাছি, চড়ুইবাতি ও চি কুত কুত খেলে।মাকে মাঝে মধ্যে রান্নাবান্নার কাজে এবং সন্ধ্যা হলে হাঁসমুরগি ঘরে তুলতে সাহায্য করে।
আষাঢ় শ্রাবণ মাস।গাছে গাছে পেয়ারা পেকেছে। বাড়িতে রয়েছে পাঁচটি পেয়ারা গাছ। আছে নারকেল গাছও।কাঠবিড়ালি মানেই পাকা ফল লোভী একটি প্রাণী।ডাবের পানি আর আম কাঁঠাল,আতা সহ সব ফলই এরা খায়।
পাকা পেয়ারা খেতে সুযোগ পেলেই আসে এ লোভী কাঠবিড়ালি। পেয়ারা গাছের উঁচু ডালে বেশ পেয়ারা পেকেছে। কাঠবিড়ালিও চুপে চুপে এসে গপগপ খাচ্ছিল পেয়ারা।ঘর থেকে বের হয়েই গাছে তাকিয়ে পুষ্প দেখে ফেলে কাঠবিড়ালিটিকে।আর অমনি ছুঁড়ে ঢিল।ঢিল ছুঁড়তেই কাঠবিড়ালি এক লাফে পগারপার।
আমগাছ বেয়ে একেবারে বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে গেছে।কাঠবিড়ালি নামটা বল্লেই কবি নজরুলের খুকী ও কাঠবিড়ালি ছড়াটির কথা মনে পড়বেই।কি ডাঁসা ডাঁসা পেয়ারা রাত ও দিনে তারা চুরি করে খাবেই।পেয়ারা কাঠবিড়ালির প্রিয় ফল।
কিন্তু পাকা পেয়ারার সাধের লোভ কিছুতেই সামলাতে পারে না। বাঁশ ঝাড়ের ঝোপে ও আমগাছের মগডালে চুপটি করে বসে থাকবেই। এটিও চুপ করে বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে আছে। যখন কোন লোকজন থাকে না,তখন আসে পেয়ারা খেতে।এভাবেই কাঠবিড়ালি লুকিয়ে লুকিয়ে চুরি পেয়ারা খায়।
কমল ও পুষ্প নাছোড়বান্দা। লেগেছে কাঠবিড়ালির পিছু।ওটাকে না মেরে ওদের শান্তি নেই। ঢিল খাওয়ার পর থেকে ভারী জেদ বেড়ে গেছে এটির।বেড়ে গেছে পেয়ারা গাছে উৎপাত।পেয়ারাও এসেছে ঝাঁকি দিয়ে। ডাল অব্দি নুয়ে আছে।কাঁচা পেয়ারা থেকে শুরু করে নারকেল গাছেও হামলা শুরু করেছে।
স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে কমল ও পুষ্প রীতিমতো পাহারা দিতে শুরু করেছে বাড়ির ফলগাছ গুলোকে।প্রতিদিন সকালেই গাছের নীচে পড়ে থাকে অনেক পেয়ারা।যা মানতে কষ্ট হয়।এখন দিনের চেয়ে রাতে আসে বেশি। একদিন দুইদিন পাঁচদিন কেটে যায়। তবু ওদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙেনি।ছাড়বে না লোভী কাঠবিড়ালিকে।একদিন কমল ও পুষ্প মিলে স্কুল কামাই করল।থেকে গেল বাড়িতে। জানলা দিয়ে নতুবা উঠানের এককোণে আড়ালে আড়ালে থাকে ওরা।সারাদিন খেয়াল রাখছে পেয়ারা গাছের দিকে। কখন লোভী কাঠবিড়ালি বিড়ালি আসে?বেশ ক’টি পেয়ারাও পেকেছে। রংটা কিছুটা সাদা হলুদ হয়েছে। খেতে ইচ্ছে করছে বেশ।তবুও কটা পেয়ারা পাড়বে না তারা।কাঠবিড়ালিটিকে ধরতেই হবে।
বাবাকে বলে বাজার থেকে আগেই একটি ফাঁদ এনে রেখেছে ওরা।গ্রামে এ রকম ফাঁদকে টাক বলে।কমল পেয়ারা গাছে উঠে ফাঁদ টিকে ভালো করে বেঁধে দিল গাছের সাথে।আর একটি বড় পাকা পেয়ারা রাখল টাকের ভেতর।
এক ঘন্টা চলে যায়, দু’ঘন্টা চলে যায়। আস্তে করে বাঁশঝাড় থেকে বের হল এটি।চোখ মুখ বড় করে তাকাল চারদিকে এবং উঠোনে।দেখে বাড়িটা নিরব। কোনো লোকজন নেই। দু’একটা মুরগী তার বাচ্চা নিয়ে উঠানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই সে
মনের আনন্দে লম্বা লেজটি নাচিয়ে নাচিয়ে আস্তে আস্তে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আসল পেয়ারা গাছে।
ওরা দূর থেকে ভালো করে এতক্ষণ লক্ষ্য করছিল এসব।আর খেয়াল করছে পেয়ারা খাওয়ার কান্ডটা।পাকা পেয়ারার সুঘ্রাণ এটিকে পাগল করে তুল্ল।চোখ ভরা ফূর্তি আর ফূর্তি। লেজটাকে নাচাচ্ছে ফিঙে পাখির মত আর মিটিমিটি চোখে তাকাল।হঠাৎ এটির চোখ পড়ল টাকের ভেতর বড় পেয়ারাটির প্রতি।আহ! কি সুন্দর। হলুদাভ রং তার চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিল। টাকের ভেতর না বাহিরে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। পেটেও দারুণ ক্ষিধে। ওটা খেতে পারলেই তার ক্ষিধে মিটে যাবে।আজ আর খাবার খোঁজতে হবে না। তাই ভীতু কাতরানো চোখে লোভের রং লেগেছে। আস্তে আস্তে টাকের কাছে এল ওটা।আর চারদিকে দেখছে।কমল ও পুষ্প দূর থেকে এসব কান্ড দেখছে আর চুপিচুপি মৃদু হেসে মজা করছে।
পেয়ারার গন্ধে এক সময় ওটা ঢুকে পড়ে টাকের ভেতর। ঢুকতেই পড়ে গেল টাকের দরজাটি।শুরু হল ক্যাচক্যাচ চ্যাচামেচী।আটকা পড়ে গেল। কমল ও পুষ্প দৌড়ে এল।গাছ থেকে নামাল টাকটিকে।আর তা দেখতে জড়ো হল আরও অনেক ছেলেমেয়ে।ওটাকে শাস্তি দিয়ে দিয়ে মেরে ফেলে শিশুর দলেরা।