নির্বাক বাবা-মেয়ের গল্প 

0
92

নুজহাত তাবাসসুম ইপ্সিতা

গল্পটা মূলত আমার নিজের। তখন আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। প্রত্যেক পরীক্ষাতেই আমার মা আমাকে আনা- নেওয়া করতেন।আমরা রোজ রিক্সায় আসা যাওয়া করতাম। আমি মানুষটা চুপচাপ। চুপচাপ বললে যদিও ভুল হবে।কারণ ঘরে আমি যথেষ্ট দুষ্ট। একবার কথা বলা শুরু করলে সহজে থামতে চাই না। বিশেষ করে ঘরের বাইরে আমি চুপচাপ, মুখ বন্ধ করে থাকি।কারণ আমি লাজুক প্রকৃতির।তবে আমার বান্ধবীদের দেখলে আমি একেবারেই বদলে যাই। এই স্বভাবটা যদিও ইদানীং হয়েছে। আগে আমার তেমন বন্ধু-বান্ধবও ছিল না।তাই কথা বলা আর হাসাহাসি করা তো দূরের কথা। আমি বরাবরই আমার মা,বোন এবং আমার ছোটো ভাইয়ের সাথে অনেক সাবলীল এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলি।সুতরাং রিক্সা দিয়ে আসা যাওয়া করার সময়ও আমি আমার মায়ের সাথে ভালোই গল্প করতে করতে সময় কাটাতাম। পরীক্ষা কেমন হয়েছে? কিভাবে কি লিখেছি? প্রশ্ন সহজ হয়েছে কিনা? এসব থেকে শুরু করে নানানরকম কথাবার্তা বলতেই থাকতাম। আসল কথা হলো আমি অনেকটা আমার বাবার মতোই হয়েছি।যদিও সেই বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই।তবে আমার ধারণা আমার বাবাও হয়তো ছোটোবেলায় আমার মতোই ছিলেন। আমি আমার বাবাকে অনেক ভয় পাই। তাঁকে দেখলেই আমার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হয় না। তিনিও আমার মতোই চুপচাপ থাকেন। বলা যায় আমার থেকেও বেশি। কখনো কোনো ব্যপারে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখান না।তাঁকে কখনো বিস্মিত হতেও দেখিনি।
যেহেতু আমার মা-বাবা চাকরিজীবি।তাই বেশি দিন আর আমার মা কর্মস্থল থেকে ছুটি নেননি। তাই শেষের দিকে ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলোতে মা আমার সাথে বাবাকে পাঠালেন। যথারীতি আমি এবং বাবা রিক্সায়ই আসা যাওয়া করতাম।পরীক্ষা শেষে বাবা আমায় শুধু বলতেন, “পরীক্ষা কেমন হয়েছে? ” এতটুকুই।তবে সেই দিন গুলি ছিল একেবারেই ভিন্ন। কারো মুখে কোনো কথা নেই। যেন দুজনেই বাকশক্তিহীণ দুটোমানুষ।আমি জানি বাবা যতই নির্বাক হয়ে থাকুক।তিনি যতই রেগে থাকুক না কেন। কিন্তু তাঁর মধ্যেও ভালোবাসা ও আবেগ রয়েছে।মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল আমি বাবাকে ফোনে জানিয়েছিলাম।যখন তিনি শুনলেন আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি তখন বাবার চোখ থেকে আনন্দের অশ্রু ঝরছিল। আমি কোনোদিনও কল্পনাও করিনি যে পাথরের মতো শক্ত বাবা নামক এই মানুষটার চোখেও যে কখনো জল আসতে পারে। তবে আমার বাবা কথা কম বললেও তিনি একজন ধৈর্য্যবান এবং ন্যায়পরায়ণ মানুষ।তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বাবা।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

Previous articleগ্রীষ্ম ও গ্লাসটা
Next articleকবিতার এক পাতা || ০৬/০৬/২০২৫
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here