আবদুল্লাহ নুর আহম্মদ
গ্রীষ্মকাল মানেই যেন আগুন ঝরানো রোদ, হাপিত্যেশ করা বাতাস আর অস্থির দুপুরের ক্লান্তি। এই ঋতুর প্রখরতা যখন চরমে পৌঁছে, তখন আমার মনের আয়নায় ভেসে ওঠে বাল্যকালের কিছু অমূল্য স্মৃতি—যেগুলো আজো বুকের গহীনে এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি এনে দেয়।
আমি তখন খুব ছোট। এক দুপুরে ভীষণ রোদ পড়ছিল। চারদিক ধূসর আর নির্জন, যেন প্রকৃতি নিজেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। ঠিক তখনই কোনো এক কারণে আব্বু আমাকে হঠাৎ দৌঁড়ানো দিলেন। হয়তো কোনো অভিমান থেকে, নয়তো শাসনের ছলে। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। নিঃশ্বাসে আগুন, শরীর ঘেমে একেবারে ভিজে গেছে। অবশেষে এক গলির পাশে বসে পড়লাম—একদম চুপ করে। শিশুমনে তখন অভিমান, ক্লান্তি আর কষ্ট মিলেমিশে এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু সেই মুহূর্তেই আব্বুর চোখে আমি দেখেছিলাম এক অজানা কোমলতা, এক অন্তর্গত স্নেহের আলোকছায়া। তিনি কিছু না বলে আমার পাশে বসে পড়লেন। হাতে ছিল এক গ্লাস ঠান্ডা পানি—তাঁর নিজের হাতে এনে দেয়া। সেই পানি শুধু আমার তৃষ্ণা মেটায়নি, মনের গভীর ক্লান্তিও যেন ধুয়ে মুছে দিয়েছিল। তখনকার মতো শান্তি, এমন অনুভূতি আর কোনোদিন পাইনি।
আজ আব্বু আর নেই। অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু যখনই গ্রীষ্মের দাবদাহে পথ হাঁটতে হাঁটতে ঘাম ঝরে, শরীর ভার হয়ে ওঠে—সেই দিনের সেই দৃশ্য আবার মনে পড়ে। মনে পড়ে আব্বুর চোখের স্নেহময় দৃষ্টি, ঠান্ডা পানির সেই গ্লাস, আর তার অন্তর্নিহিত ভালোবাসা। স্মৃতির পাতায় যেন সেই মুহূর্ত স্থির হয়ে গেছে—চিরকালের জন্য।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোণে জল জমে যায়, টেরও পাই না। গ্রীষ্মের তাপ যেমন আজও সহ্য হয়, তেমনি সেই স্মৃতিও আজও বুকের গহীনে সতেজ—অথচ অপূর্ণ এক প্রশান্তির মতো।