কবিতার প্রতিধ্বনি – কবিতার এক পাতা
প্রতিধ্বনির সাপ্তাহিক আয়োজন
০৬/০৬/২০২৫ ||শুক্রবার
লেখা পাঠাতে নিচে ক্লিক করুন-
লিখেছেন যারা-
- মোহাম্মদ ফয়সাল
- পবিত্রকুমার ভক্তা
- মোঃ আব্দুল রহমান
- আল-আমিন বিদ্রোহী
- রাকিবুল ইসলাম রাহান
- আইনুন নাঈমা
- আফজাল হোসেন
- সোলায়মান বাদশা
- রানা জামান
- জেড এইচ ফাহাদ
ই-পেপার পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন অথবা এই পাতা থেকেই পড়ুন
খৈয়াছড়ার আহ্বান
মোহাম্মদ ফয়সাল
সবুজে ঘেরা পাহাড়ি পথে,
পাহাড় ডাকে সুরের নোটে।
খৈয়াছড়ার জলধারা,
বয়ে চলে দিনের তাড়া।
নয়টি ধাপের গভীর রেশ,
পাথর ভাঙে বৃষ্টির দেশ।
ঝিরি পথে স্রোতের খেলা,
জলছোঁয়া ধোঁয়ায় মিশে মেলা।
বাঁশের সাঁকো, কাঁকর পথ,
পাহাড় ডাকে, থামে না রথ।
মেঘ ছুঁয়ে যায় ঝর্ণার ধারা,
স্বপ্ন বোনা স্রোতের পারা।
অজানা সেই গভীর ডাকে,
প্রকৃতি যেন কাছে রাখে।
খৈয়াছড়ার নির্মল হাওয়া,
মনে জাগায় শান্তির ছাওয়া।
তুমি আমি হাত ধরে,
হেঁটে যাই সবুজ ঘেরাটোপে।
খৈয়াছড়ার সেই মনভোলা,
মনে থাকে অনন্ত কোলা।
শুকতারার পথে
পবিত্রকুমার ভক্তা
অমল আলোতে শান্তিনিকেতনের প্রদীপ্ত পুরুষ
পথ জুড়ে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন।
অনুর্বর শূন্যতা জুড়ে ফুটেছে, মৃত্যুর ঘ্রাণ সময়ে
এক মুহূর্তে বিপর্যয়ের কলঙ্কে সন্দেহ
বিশ্বসন্ধানী আমি নির্মম সত্য বুঝতে হেঁটে চলেছি
কালো মেঘে ঢাকা স্বপ্ন ডুব সাঁতার খেলে চলে
অপেক্ষার তরঙ্গ যেন ভেঙে দেয় অস্তিত্ব,
সন্ধ্যার মাঝে আশ্চর্য অভিজ্ঞান দুলতে থাকে
গ্রহণ লেগে সংসার ঝনঝন করে।
প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর মৃদু সুরে লুটায়
স্নিগ্ধতার মধ্যে পুনর্জন্মের প্রদীপ সলতে পাকায়
চিরন্তন সভাতলে কালের আশায়
যন্ত্রণা শেষে মন্দ্রিত কণ্ঠস্বর সত্যের গান গাইবে।
পাথর বৃষ্টি
মোঃ আব্দুল রহমান
বৃষ্টি নয় ঝরছে ছোট বড়ো পাথর
কোনোটার মাথা নেই,
কোনোটার বুক চিরে রক্ত ঝরছে
প্রকৃতির খেলা মাঠে মাঠে,
কৃষকের দল ছোটে
নষ্ট সকল ফসল
চক্ষু চরকগাছ! সব শেষ, চারিদিকে হা – হা কার
একবার নামুক পাথর বৃষ্টি মানবের বুকে
যদিও তৃষ্ণা মেটে কিছুটা,
রক্তক্ষরণ আর নয়,
নামুক এবার মৃত্যুর প্লাবন দিকে দিকে
প্রকৃতির খাম – খেয়ালি পনায়
যেন জ্যান্ত লাশের স্তূপ!
অবিনশ্বর আমি
আল-আমিন বিদ্রোহী
আমাকে করিয়া খুন যদি হতে চাস বীর!
কাপুরুষ তুই মুনাফিক,আমি চির রণবীর।
অনিয়ম নয় নিয়ম আমি বিভ্রান্ত যাই ভুলে,
নিয়ম নয় তোরা অনিয়ম ছড়াস পথে।
বিদ্রোহী আমি, আমি চির রণবীর
অন্যায় বিনাশে মোর যায় যাবে শির।
অগ্নিসানে পুড়ি আমি অন্যায় করি দূর।
আমি শুধাই সাম্যের সুরে একতার হোক দেখা,
পথ উল্টিয়ে তোরা আঁকিস অন্যায়ের রূপরেখা।
সৎপথে লড়তে মোর নেই কোন সংশয়,নেই কোন ভয়
অসৎ কে বিনাশ করিবো আমি সত্যের হবে জয়।
অত্যাচারী তুই হরণ করিস মজলুমের অধিকার।
ধিক্কার তোকে কুলষিত, তুই অনাচার।
নির্বাক আমি জেগেছি আজ ঝরেছে বজ্রকন্ঠ।
বিদ্রোহী কভু ভয় করে না তোর মিথ্যা কন্ঠ।
আছে কি অদম্য সাহস করিতে খুন?
পারিবি কি লড়তে, তক্ত মরুকাময় অগ্নিদিরির পাথর?
যদি থাকে হিম্মত তবে কেন লুকাশ কচুবনে?
পশ্চাতে নয়, সম্মুখে এসে যুদ্ধ ঘোষণা দে।
অন্যায় নীরমূলে আজই, হাসিতে হাসিতে পরিবো ফাঁসি।
দেখুক তবে লক্ষ বিশ্ববাসী।
করিয়া খুন মারিতে পারবি কি?
অবিনশ্বর আমি থাকিবো শত অন্তরে।
আমি কি মানুষ
রাকিবুল ইসলাম রাহান
হাসি মুখে ছুরি চালায়,
ভেতরে ভেতরে ফাটল ধরা সমাজ—
চলন্ত ট্রেনের জানালায় দেখি
সুবোধ মানুষটা এখন চুপচাপ হিংস্র।
ফেসবুক পোস্টে কবিতা হয়,
বাস্তবে পড়ে থাকে শবের মতো মুখ।
খবরে আসে মৃত বিবেক,
কিন্তু ট্রেন থামে না—শহর বেছে নেয় অন্ধকার।
শিশুর চিৎকার বেচে দেয় মিডিয়া,
সাহায্যের বদলে উঠে যায় ভিউ।
সেই পুরোনো গল্প—
বনের মধ্যে মানুষ খুঁজতে গিয়ে
শহরেই হারিয়ে ফেলি নিজেকে।
মানুষ এখনো অমানুষ—
বুকের ভেতরে ঘড়ি টিকটিক করে,
কিন্তু সময় চলে যায় বেমালুম নিষ্ঠুরতায়।
তবু আমি লিখে যাই,
মনের ভেতর একটুখানি আলো জমে থাক,
যদি কেউ পড়ে, থামে,
জানালার পাশে বসে বলে—
“এই কবিতায় তো আমি আছি,
তাহলে আমি কি মানুষ?”
চাওয়া পাওয়া
আইনুন নাঈমা
তুমি চাইতে ঝকঝকে স্বচ্ছ নীলাকাশ। সাত রঙের আবির।
একটি লাল গোলাপ। এক চিলতে উঠোন।
যেথায় পূবালী হাওয়ায় ঝরে পড়বে শিউলি ,পলাশ, কৃষ্ণচূড়া।
তোমার হয়তো জানা ছিলোনা –
আকাশের রং সর্বদা নীল হয়না ;
সাত রঙের আবির ভাসে বৃষ্টির শেষে।
মালা হয়না কখনো একটি ফুলে ;
গোলাপ আঁকড়ে ধরে বুকে জড়াতে নেই;
কাটায় রক্ত মেখে কলঙ্ক বয়তে হয় গোলাপের।
তুমি বুঝতে চাইতেনা পূবালী পবন ও
ঊনুনের আগুন ছুতে পারে।
চোখের আগুনে পুড়তে পুড়তে নিঃস্ব হতে পারে গোটা সমুদ্র।
আর আমি ?
হা হা হা। আমার তেমন কিছুই চাওয়ার ছিলোনা।
শুধু রমণী কাবেরীর বাহু ডোরে একটু ওম ;
আর চিরবসন্তময় একটি ফুলের বাগান।
সুদূর সাইবেরিয়া হতে উড়তে উড়তে এসে দেখি
তোমার রাজ্যে শীতের তীব্র হাহাকার।
চৈত্রের খাঁ খাঁ রুদ্দুরে পুড়ে ছাই
আমার চির বসন্তের বাগান !
আমি কোথায় যাবো ?কোথায় পালাবো ?
খসে খসে ঝরে গেছে বিবর্ণ পালকও।
মৃত্যু যাচতে গিয়ে শিয়রে জাগি মুমূর্ষু রুগীর
একাক্ষী আজরাইল -আমায় দেখেও দেখে না।
রাগ ও ক্ষমা প্রসঙ্গে
আফজাল হোসেন
নোংরা কথার জবাব যদি
নোংরা ভাষায় দাও,
তুমিও তবে নোংরা মানুষ,
ভাল মানুষ নও!
মুখের কথায়,মন বোঝা যায়
লোকটা তুমি কেমন?
কথার জন্যে বিবাদ বাড়ে
কথাতেই হয় প্রশমন।
মনের ক্ষোভে, কেউ তোমারে
দিতে পারে গালি,
তাই বলে তুমি, ধরবে চেপে
তাহার কন্ঠ নালি!
ক্ষমা করে কেউ হয়না ছোটো,
বরং সে মহান হয়,
হিংসা-বিদ্বেষ পুষলে মনে
মহান সে কভু নয়।
ইচ্ছে করলে নিতে পার,
তুমিও প্রতিশোধ,
তা যদি না নাও,তবে
তুমি মহান লোক।
কারো রাগে,রাগ দেখালে
বাড়বেই বিদ্বেষ,
অন্যের রাগে শান্ত থাকলে
তুমিই হাসবে সর্বশেষ।
দুটি আয়না
সোলায়মান বাদশা
পৃথিবীর সমুচ্চ পর্বতে আমি এক রহস্য,
মিশরের পিরামিডে বুনেছি রহস্যজাল।
জমা করা জড়তীর্থ পরিভ্রমণে হয়ে যাই দগদগে ক্ষত;
সভ্যতার পথে পথে খুঁজে পাইনা তোমায়!
তুমি তো, অন্ধ নিরুত্তর প্রতিমা হতে পারো না!
তোমাকে পাওয়ার তাড়নায় চষে ফেলি জমিন নভস্থল।
নিরুপায় হয়ে শামুকের মতো গুটিয়ে যাই ভেতরে;
দিনের পাঁজর বেয়ে ঝরে পড়ে রাতের মৌনতা…
শূন্য হতে হতে, হঠাৎ দেখা দিলে তুমি দীপ্ত আয়না—
দাঁড়িয়ে আছ বোধিবৃক্ষ হাতে নিয়ে!
বৃক্ষের ছায়া পেয়ে ততক্ষণে আমিও স্বচ্ছ আয়না…
শত জনমের তৃষ্ণা নিয়ে—কে কার দিকে অপলক চেয়ে রয়?
নীরবতা সন্ন্যাস নেয় পায়ে পায়ে—
চলতে থাকি, লালনের আখড়ায়।
পুরনো ঘি
রানা জামান
কালের কামড়ে পাতা উল্টে গেলে ইতিহাস
তালাবদ্ধ হয়ে গেলে অভিজ্ঞতা অবরুদ্ধ
সামনের ঠক্ঠকি মোকাবিলায় পেছনের
পাতা মাঝেমধ্যে উল্টে দেখা ভালো
যে সৈনিক ইতিহাস জেনে যুদ্ধে থাকে
বিজয়ের সম্ভাবনা শতকরা নিরানব্বই ভাগ
বারেবারে যে পেছনে তাকায় সে ভীতুর ডিম
যে পাতা উল্টায় সে তাকায় না পেছনে
কেবল নতুন পাতার শিক্ষায় ঘটে না সংযোগ
পুরনো ঘি-এর কদর জহুরি জানে আদ্যপান্ত।
ঈদ এসেছে
জেড এইচ ফাহাদ
ঈদ এসেছে, ঈদ এসেছে
খুশির বন্যা নিয়ে,
ঈদের সালাত পড়বো
ঈদগাহে গিয়ে।
ঈদ এসেছে,ঈদ এসেছে,
মুসলমানের আনন্দের দুয়ার খুলে।
বছর ঘুরে ঈদ আসে দুইবার,
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার।
এক মাস রোজার শেষে
আসে ঈদুল ফিতর,
পশু জবাইয়ের আনন্দ নিয়ে
আসে ঈদুল আজহার।