চারদিকে জলবেষ্টিত ভূখন্ডকে দ্বীপ বলা হয়।সমুদ্রের মাঝখানে একখন্ড জমি সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে।পৃথিবীতে সংখ্যা দ্বীপ আছে।কোনো দ্বীপ একটা পুরো দেশ আবার কোনো দ্বীপ অন্য কোনো দেশের অংশ।মানুষের পর্যটনের জায়গা দ্বীপ।বেশিরভাগ দ্বীপেই মানুষের বসবাস আছে।কিছু দ্বীপ পরিত্যক্ত।বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের সামরিক অস্ত্র পরিক্ষায় বেছে নেয় এসব দ্বীপকে।কেননা ঘনবসতি থেকে দূরে এসব স্থানে ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র পরিক্ষা অনেকটাই নিরাপদ।এমনই একটা দ্বীপ ছিলো জাপানের ওকুনোশিমা। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে রাসায়নিক অস্ত্র পরিক্ষায় ব্যবহৃত হতো এই দ্বীপ।১৯২৯ সালে এক গ্যাস কারখানা তৈরি হয় এখানে। বিষাক্ত সব রাসায়নিক গ্যাস তৈরি হতো কারখানায়।যা যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতো জাপানের সামরিক বাহিনী।চীন-জাপান যুদ্ধে এসব গ্যাস ব্যবহার করা হতো।এমনকি বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হতো।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কারখানাটিও বন্ধ হয়ে যায়।সব রাসায়নিক পুড়িয়ে ফেলা হয় তখন।এমনকি দ্বীপটি জাপানের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার চেস্টাও হয়েছিল।সাধারণ মানুষের আনাগোনাও নিষিদ্ধ ছিলো এই দ্বীপে।কারণ বিষাক্ত সব গ্যাস বাতাসে ভেসে বেড়াতো।
তারপর অনেক দিন পর দ্বীপটি মানুষের বসবাসের উপযোগী কিনা তা পরিক্ষা করতে সেখানে কিছু খরগোশ ছেড়ে দেয়া হয়।যদিও অনেকের মতে ১৯৭১ সালে কিছু শিক্ষার্থী ওকুনোশিমায় বেড়াতে এসছিলো।তারা আটটি খরগোশ ছেড়ে দেয় সেখানে।তারপর খরগোশের সংখ্যা শুধু বাড়তে থাকে।একসময় সেটি খরগোশের দ্বীপ হয়ে উঠে।চারদিকে শুধু খরগোশ আর খরগোশ।জনমানবহীন দ্বীপে শুধু তুলতুলে খরগোশের রাজত্ব।সেখানে খরগোশ শিকার নিষিদ্ধ।বর্তমানে প্রায় ১০০০ এর মতো খরগোশ রয়েছে ওকুনোশিমা দ্বীপে।খরগোশগুলো খুবই বন্ধুসুলভ।মানুষ দেখলেই দৌড়ে আসে।খরগোশের এই দ্বীপ এখন পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।মানুষ খরগোশ দেখতে আসে।খরগোশকে খাওয়াতে ভালোবাসে।দ্বীপে খরগোশের জন্য আলাদা খাবারও পাওয়া যায়।পর্যটকরা প্যাকেটে করে খরগোশের জন্য খাবার নিয়ে যায়।গাজর,বাধাঁকপি ইত্যাদি নিয়ে যায়।খরগোশগুলোও প্যাকেট দেখলে দৌড়া ছুটে যায় পর্যটকদের দিকে।সব বয়সের মানুষ খরগোশের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসে।তাছাড়া দ্বীপটিতে পর্যটকরা হাইকিং,বাইক চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদিও উপভোগ করে।তবে সেখানে কুকুর এবং বিড়াল নিষিদ্ধ।জাপান সরকার ওকুনোশিমা দ্বীপে ককুর-বিড়াল নিষিদ্ধ করেছে।পর্যটকরা কুকুর বিড়াল নিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না।কেননা কুকুর বিড়াল থাকলে খরগোশে বৃদ্ধি ব্যহত হবে।তবে পর্যটকরা অন্যান্য পোষা প্রাণি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবেন।
ওকুনোশিমা দ্বীপ হিরোশিমা প্রিফেকচারের তাকেহারা শহর থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ।দ্বীপটির আয়তন ৪.৩ বর্গকিলোমিটার। খরগোশের দ্বীপ নামে পরিচিত এই দ্বীপকে জাপানী ভাষায় বলা হয় উসাগি শিমা।যার অর্থ খরগোশের দ্বীপ।হিরোশিমা থেকে ফেরিতে করে যাওয়া যায় ওকুনোশিমাতে।মাত্র ১৫ মিনিটে পর্যটকরা সেখানে পৌঁছাতে পারবেন। দ্বীপটিতে খরগোশের পাশাপাশি পর্যটকদের উপভোগের জন্য রয়েছে সূর্যাস্থ দেখার দূদার্ন্ত জায়গা।ক্যাম্পিংয়ের জন্য ক্যাম্পগ্রাউন্ড ও রয়েছে।জাপানের সবচেয়ে উঁচু বিদুৎয়ের পাইলন রয়েছে দেখা যায় দ্বীপ থেকে।দ্বীপটিতে একটি হোটেলও আছে।যেখানে রাত কাটানো যাবে।
জাপানের বন্যপ্রাণী অধিদপ্তর এই দ্বীপের খরগোশদের সুরক্ষায় কাজ করছে।খরগোশগুলোর খাবার এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে তারা।দ্বীপে খরগোশদের খাওয়ানোর জন্য খাবারও পাওয়া যায় তাদানৌমি বন্দরে।খরগোশ ভেজা চামড়া বা নষ্ট সবজি খায় না।তাদের পেটে আলু হজম হয় না।আবার তাদেরকে মানুষের বিভিন্ন খাবার স্ন্যাক্স দেওয়া যাবে না।তাই তাদের জন্য নির্দিষ্ট খাবার নিতে হবে।আবার দ্বীপে সাইকেল চালানোর ব্যবস্থাও আছে।কিন্তু সাইকেল চালাতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।কেউ যদি তার পোষা খরগোশকে এখানে এনে ছেড়ে দেয় তবে তা সুখকর হবে না।কারণ বন্য খরগোশদের সাথে পোষা খরগোশ মিশতে পারবে না।তাদের দ্বারা আক্রমণের শিকারও হতে পারে।তবে দ্বীপের খরগোশগুলো মানুষের সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ।খাবার দেখলে কিংবা পর্যটক দেখলেই তারা দৌড়ে আসে।পর্যটকরাও সানন্দে খরগোশদের সাথে সময় কাটায়।
১৯৮৮ সালে জাপান সরকার ওকুনোশিমায় বিষ গ্যাস জাদুঘর প্রতিষ্টা করে।উদ্দেশ্য ছিল বিষাক্ত গ্যাস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।অতীতের জাপানের ইতিহাস এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানানো।রাসায়নিক প্ল্যান্টের ধ্বংসাবশেষ বিল্ডিং আজও বিদ্যমান।বলা হয় রাসায়নিক কারখানায় খরগোশদের উপরও গ্যাস পরিক্ষা করা হতো।কিন্তু সেসব খরগোশের সাথে বর্তমান খরগোশের সম্পর্ক নেই।এখানে পুরোনো দুর্গ গুলো এখনো বিদ্যমান।একটা সময় গ্যাস কারখানা প্রতিষ্টার আগে এই দ্বীপে চাষাবাদ হতো।মানুষের পদচারণা থাকতো।অনেক পরিবার বসবাস করতো।মাছ ধরে,চাষাবাদ করে জীবনযাপন করতো।কিন্তু সেই মানববসতিতে একসময় মানব ধ্বংসের কারখানা চালু হয়।তারপর সবশেষে তা ধ্বংস হয়ে পরিণত হয়েছে বর্তমান খরগোশ দ্বীপ ওকুনোশিমা।