ষড়যন্ত্র 

0
102

গাজী আবু হানিফ

এক বনে সিংহ বাঘ মহিষ শৃগাল শকুন ভাল্লুক হরিণ বনগরু আর অন্যান্য নিরীহ প্রাণীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।সিংহ ও বাঘের মাঝে চুক্তি হলো কেউ প্রতিদিন একটির বেশি পশু শিকার করতে পারবে না। কারণ,এতে এক সময় খাদ্য সংকট দেখা দেবে।তৃণভোজী পশুরা হয়ে যাবে নির্মূল।বনে অশান্তি দেখা দেবে।সবাই সংকটে পড়বে।এ আইন কিছুতেই অমান্য করা যাবে না।করলে সিংহ তার বিচার করবে।

সকল পশুরাই বনের নিয়মকানুন মেনে চলতে লাগল।এতে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে চলল বনের রাজ্য। সবাই একটি করে পশু স্বীকার করে দিন কাটাতে লাগল।কিন্তু বাঘ বিষয়টিকে কিছুতেই মানতে পারছিলো না।তারা বনের মাঝে তাদের প্রভাবও খাটাতে পারে না।কিন্তু কি করবে উপায়ও বের করতে পার ছিলো না।তাদের একটি শিকারে উদরপূর্তি পুরোপুরি হয় না। তাই দেখা দিল ক্ষোভ ও বিদ্বেষ।

কয়েকটি শিয়াল দৌড়ে ছুট ছিলো। বাঘেরা তাদেরকে দেখে ডাক দিলো।নরম সুরে বলল,তোমাদের কোনো ক্ষতি করবো না,শুনে যাও।কিন্তু ওরা বিশ্বাস করতে পার ছিলো না। বাঘেরা অনুরোধের স্বরে ডেকে দাঁড়া করালো।তাদের সমস্যার কথা বল্লো।শিয়ালরা সব শোনে বল্ল,মামাগণ,আপনারা মহিষের সাথে কথা বলেন,মহিষ খানা বন্ধ করে দেন।অন্য জীবকে খান।এতে আপনাদের উদ্দেশ্য হাছিল হবে।

আসলে বুদ্ধিটা মন্দ না।যেই কথা সেই কাজ।বাঘেরা আস্তে আস্তে হেঁটে মহিষের পাশ দিয়ে যায়, কিন্তু মহিষকে দৌড়ান দেয় না,কামড়ায় না।মহিষের সরদার কে বল্ল,আমরা এখন থেকে মহিষ খাবো না।সিংহকেও খেতে দেবো না।অন্য প্রাণী খাবো।তোমরা সিংহের কথা শুনতে পারবে না। মহিষরা হেসে উঠলো।ঠিক বলছেনতো,হ্যা।ঠিক। তবে সিংহকে এ বন থেকে তাড়াবো তোমরা আমাদের সাথে থাকবে।শিয়ালও আমাদের সাথে থাকবে।
মহিষরা সব শোনে রাজী হয়ে গেলো।
সবাই যার যার পথে চলে গেলো।ইতিমধ্যে বাঘেরা মহিষ বাদ দিয়ে একাধিক শিকার করলো।তারপর ঘুম থেকে ক্ষুধার্ত সিংহদল এলো শিকার করতে।বাঘেরা সে দৃশ্য দেখলো।বাঘেরা মহিষের দলের আগে আগে হাঁটতে লাগলো। সিংহরা বিষয়টি বুঝতে পারেনি।মহিষের উপর আক্রমণ করতেই ওরা সিংহের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে গেল।বল্ল,বনে কারোই মহিষ খানা চলবে না।অন্য কিছু খাও।সিংহ বিষয়টি বুঝে উঠতে পার ছিলো না।
তারপর বাঘ আর মহিষের আক্রমণে তারা ধরাশায়ী। বল্ল: তোমরা আজ থেকে এ বনে থাকতে পারবে না।চলে যাবে ওই বনে।
সিংহ তো অবাক,হায়! হায়! এ কি হলো? ও বনেতেও সিংহ আছে।
বাঘদেরকে বহু চেষ্টা করে বুঝাতে চাইলো।কিন্তু তারা কিছুতেই সিংহের কথা শুন ছিলো না।
শিয়াল শকুন ভাল্লুককেও বাঘেরা বিষয়টি বলে।তারাও রাজী হয়ে গেলো।

ফলে,বনে তুমুল হুলস্থুল বেঁধে গেলো।সিংহ শিকার করতে চাইলে সব পশুরা তাদেরকে আক্রমণ করে। এক সময় এ আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। হট্টগোল বাঁধতেই থাকলো।এতে সিংহরা একা হয়ে পড়লো।তাদের দলে কেউ নেই। বাঘ হায়েনাদের সাথেও তাদের স্বার্থের কথা শেয়ার করলো।তাদের দলে আসতে বল্ল।তারা যেন সিংহের দলে না যায়।হায়েনাদেরকে বিশেষ সুযোগসুবিধা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়।এতে করে সকলে এক হয়ে যায়।

বলা হয়,তারা কাল সবাই মিলে সিংহকে এ বন থেকে তাড়াবে।এ যুদ্ধে যোগ দিতে হবে।সবাই একমত হয়ে গেলো।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

সকল পশুদের কাছে শিয়াল সংবাদ পৌঁছে দিলো।হামলা সকাল বেলায়।হঠাৎ ঝটিকা আক্রমণ হবে।সিংহরা তখন ঘুমোবে।তাদেরকে ঘিরে ফেলা হবে চারদিক থেকে।

কিন্তু সিংহ এ রহস্য উদঘাটন ও সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ হয়।

পরদিন ভোর বেলায় বাঘ মহিষ শিয়াল ভাল্লুক আর হায়েনারা এক সাথে সিংহদের আস্তানা ঘিরে ফেলে।আর ঘুমের মধ্যে অর্তকীত হামলা করে।সিংহরা এ কঠিন হামলার সামনে টিকতে পারেনি।তারা বাধ্য হয়ে বন ত্যাগ করলো।

এখন বাঘ হলো বনের রাজা।বাঘের নেতৃত্বে চলে পুরো পশু সমাজ।বাঘেরা মহিষদেরকে বাদ দিয়ে ইচ্ছেমতো শিকার ধরে খায়।হায়না শিয়ালরাও।এতে করে ছয়মাসের মধ্যেই সকল পশুদের সংখ্যা কমে গেল।দেখা দিলো খাদ্য সংকট। তখন বাঘ মহিষদেরকে বল্ল,বনে এখন আমাদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তোমরা ব্যতীত আর আমাদের খাবারের কিছু নেই।
শিয়াল হায়েনাদেরও একই অবস্থা।
তাই একটি রফা করতে এসেছি। এখন থেকে আমরা একটি, হায়েনারা একটি, শিয়াল ভাল্লুকেরা একটি করে মহিষ শিকার করে খাবে।তোমরা আর বাঁধা দিতে পারবে না।বোকা মহিষদের এখন বোধোদয় হলো। হায়রে আমরা কি করলাম।বাঘের কথা শোনে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলাম। আগে একটি মহিষ হারাতাম,এখন তিনটিকে হারাবো।আবার কোনো কোনো দিন মারাও পড়তাম না।
হায়! হায়! এ কি করলাম?

বাঘেরা,হায়নারা,শিয়ালরা এ কথা বলেই উপস্থিত তিনটি মহিষ শিকার করে ফেল্ল।আর বাকীরা দৌড়াতে লাগলো।সিংহরা এ খবর শুনতে পায়। শোনে বলে,ঠিক আছে,ওরা সবাই মিলে আমাদেরকে তাড়িয়েছে।

এভাবে বেশ উৎপাত শুরু হয়ে গেল।
কয়েক মাসেই মহিষের দল ছোট হয়ে গেল।দেখা গেল আর কিছুদিন এরূপ চলতে থাকলে মহিষেরা নির্মূল হয়ে যাবে। তারা দিশাহারা হয়ে সিংহদের কাছে দৌড়াতে শুরু করলো।তখনো সিংহরা আর তাদেরকে বিশ্বাস করতে পার ছিলো না। সামনে পেয়ে ওরাও শিকার করতে শুরু করলো।এক সময় মহিষেরাও হয়ে গেল একেবারে কমসংখ্যক। হারালো বিরাট দলকে।

(শিক্ষা:ষড়যন্ত্র এমনই। সামান্য স্বার্থের জন্য অস্তিত্ব বিলীন করতে নেই।)

Previous articleশূন্যতার ঋতু
Next articleনিশিকান্ত 
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here