মৌন রাষ্ট্র
আয়াজ আহমদ বাঙালি
নীরবতার উপর চাপা দেওয়া হয়েছে একটি সংবিধান,
যার প্রতিটি ধারা লেখা রাষ্ট্রীয় পুলিশের বুটে।
নাগরিকরা এখন আর মিছিল করে না—
তারা হাঁটে… ঘুমন্ত গর্ভবতী নারীর মতো,
যাদের ভ্রূণগুলো জন্ম নেয় গোলাবারুদে।
একটি বাচ্চা শেখে জাতীয় সংগীত—
কিন্তু তার জিহ্বায় রক্ত জমে থাকে প্রতিটি উচ্চারণে।
ধ্বংসস্তূপে পতাকা
আয়াজ আহমদ বাঙালি
একটি জাতীয় পতাকা উড়ছে
এক বিধ্বস্ত স্কুলের মাথায়,
যেখানে শেষ ক্লাসটি হয়েছিল
একটি কামানের বিস্ফোরণের আগমুহূর্তে।
কালো ধোঁয়ার মধ্যে একজন শিক্ষক
চোখে ধরে রেখেছেন একটি কবিতা,
যার শিরোনাম— “দেশ মানে শিশুদের হাসি”।
কিন্তু আজ, কেউ আর জিজ্ঞেস করে না—
‘শিশুরা কোথায়?’
কণ্ঠরুদ্ধ পবিত্রতা
আয়াজ আহমদ বাঙালি
মসজিদের মিনার নীরব—
মাইক থেকে আজান শোনা যায় না,
শুধু গুমগুম শব্দ আসে
বোমা ফাটার পরে পাখিদের ছুটে পালাবার।
একজন হাফেজ বুকে চেপে ধরেছে
ছিন্নভিন্ন কোরআনের পাতা—
যার একটিতে লেখা ছিল
“ফাসাদকারীদের ধ্বংস করো না পৃথিবীতে।”
আজ সেই আয়াতও খুঁজে পাওয়া যায় না।
নাগরিক শোকযাত্রা
আয়াজ আহমদ বাঙালি
একটি শহরের প্রতিটি গলিতে
জমে আছে শব্দহীন কান্নার দাগ।
কেউ বাঁচে না এখানে কণ্ঠ দিয়ে—
শুধু চোখে চোখে চলে যায় প্রতিবাদ।
এক বৃদ্ধ কবি হুইলচেয়ারে বসে আছে
নির্বাক জনতার সামনে—
তাঁর ঠোঁটে একটিই বাক্য,
“তোমরা জানো না— আমি কবে শেষ কবিতা লিখেছি!”
প্রহসনের রক্তমঞ্চ
আয়াজ আহমদ বাঙালি
একটি পার্লামেন্টের হলঘরে
বাজে সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনী—
‘প্রতিবাদ করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা’।
এদিকে, কবি সমাজ মঞ্চে উঠে
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে দশ মিনিট,
কারণ তার কণ্ঠ চুরি হয়ে গেছে এক সেনা অফিসারের টেবিল থেকে।
তবু তার দাঁড়িয়ে থাকা—
একটি দীর্ঘ কবিতা, যেটি পড়ে সময়।