জীবনের ওপারে

0
290

আশরাফুর রহমান 

-“রিতু! পাগলী মেয়ে, ‘পাগল, পাগল’ বলতে বলতে তুমি আরও বেশি পাগল হয়ে গিয়েছো। আমরা কোথায় যাচ্ছি, রিতু?”

-“আর একটু ধৈর্য ধরো আমার আদি, আরও একটু।”

রিতু কখনো আদির সাথে এভাবে কথা বলেনি। বদমেজাজী রিতুর আদিকে এভাবে চোখ বেধে হাত টেনে নিয়ে যাওয়া অবিশাস্য। আদিরও বিশ্বাস হচ্ছে না। কি করতে চাচ্ছে রিতু? ভয়ে ভয়ে আদি বলল,

-“আমার রিতু আমি খুব বেশিই ভয় পেতে শুরু করেছি। রিতু তুমি আমাকে কুরবানির ভেড়ার মতো কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”

কথাগুলো বলেই কৌতুহলী আদি তার চোখে লাগানো সাদা কাপড়ের বাধনটি খুলতে চায়ল।কিন্তু রিতু তার চোখ খুলতে দিল না। হাত দিয়ে আদির হাত ধরে বলল,

-” কেন এতটা অধৈর্য তুমি আদি? চলো হাটো? তাছাড়া তুমি বলো না যে…. ‘ আমার রিতু, আমি তোমার সাথে তোমার ইচ্ছামতো সব জায়গায় যেতে পারি।”

হাটতে হাটতে তারা একটা খোলা জায়গায় এলো। বিশাল বড় একটা মাঠের মতো। দূরে বিশাল কয়েকটা পাহাড় দেখা যায়। মাঠটি ছোট ছোট হলুদ ফুল দিয়ে আবৃত। মাঠের ঠিক মাঝ বরাবর একটি বিশাল বট গাছ। গাছটি যেনো পুরো পৃথিবীকে ছায়া দিচ্ছে। এর শিকড় ভালবাসার রশি দিয়ে তৈরি আর মায়াবী শাখাগুলো ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশ জুড়ে। আদির চোখ এখনো বাধা। সে বুঝতে পারছে না কিছুই। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল,

-“আমি তোমার সাথে সব জায়গায় যেতে পারি আমার রিতু। যথেষ্ট এটাই যে আমরা একসাথে যাই। এটাই যথেষ্ট তুমি পাশে থাকো। বিচ্ছেদ আর অকুলতা দিয়ে যেন আমরা পরিক্ষিত না হয়।”

আবারো রিতু আদির হাত ধরে বলল,

-” মানুষ দুনিয়াতে পরিক্ষার জন্য আসে আদি। আল্লাহ মানুষকে তাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করেন।”

-“তুমি কি বলার চেষ্টা করছো পাগলী মেয়ে?”

এবার আর অপেক্ষা করতে পারল না আদি। হুট করে চোখের বাধনটি খুলে নিল সে। তাদের চলার গতিও একটু ধীর হয়ে গেছে। তারা বটগাছটার নিচে চলে এসেছে। অবাক হয়ে চারপাশটা দেখছে আদি। এটি অজানা একটি জায়গা৷ তবুও খুব বেশি পরিচিত লাগছে আদির। স্নিগ্ধ বাতাসের পরশ এসে লাগছে তার। এরকম একটু বাতাস অন্তর প্রশান্ত করার জন্য যথেষ্ট। সে অনেক বেশি অন্যরকম অনুভব করছে। বাতাসটা রিতুর চুল এলোমেলো করে দিয়ে গেলো। রিতুকে এত সুন্দর কখনো লাগেনি আদির। রিতুর মুখে যেনো পুর্নিমার চাঁদ প্রতিফলিত হচ্ছে। সেই প্রতিফলিত আলো যখন আদির চোখে লাগছে, বার বার প্রেমে পরছে সে। তার হৃদয়কে চুর্ণ করে দিচ্ছে রিতুর ধারালো চোখজোড়া। আজ যেনো আদি অন্যরকম রিতুকে দেখছে। আরও একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে চারপাশটা দেখে নিয়ে আদি বলল,

-”রিতু জায়গাটা কোথায়?”

-” এই জায়গাটা আমাদের সত্যিকারের মাতৃভুমি। এই জায়গাটি আমার আর তোমার মিলিত হওয়ার জায়গা।”

কথাগুলোর বলার সময় রিতু আদির বুকে হাত দিয়েছে। ঠিক সেই জায়গাটা যেটাকে একটু আগে সে ভালোবাসার তরবারি দিয়ে বিদীর্ণ করেছিল। আদি প্রতিক্ষণে নতুন করে অবাক হচ্ছে। যে কখনো ভাবতেও পারেনি রিতু তার বুকে হাত দিয়ে এভাবে কথা বলবে।

-” আমরা ইতিমধ্যে মিলিত হয়েছি রিতু, আমারা বিবাহ করেছি। আমাদের সন্তান আছে।”

আদি আবারো মাঠের সেই হলুদ ফুলগুলো দেখতে দেখতে বলল,

-” রিতু জায়গাটা কোথায়?”

-“এই জায়গাটি হলো আমার চলে যাওয়ার জায়গা। আমি এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করব।”

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

আদি ভয় পাচ্ছে। সে তার বুকে রাখা রিতুর হাত ধরলো। সে কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে হয়তো বিচ্ছেদের ঘন্টা বাজতে চলেছে। আদি বুক থেকে রিতুর হাত সরিয়ে চলে যেতে চাইছে আর হাত ধরে টানছে। সে বলছে,

-“হতে পারে না এটা। হতে পারে না রিতু, চলো যাই।”

আদি অনেক বেশি আতংকিত হয়ে গেছে। যুদ্ধের ময়দানে হাজারো শত্রু যেই আদিকে ভয় পায় আজ সে ভীত, অনেক বেশি আতংকিত। কান্না পাচ্ছে আদির। সে আরও শক্ত করে রিতুর হাত টানছে। সে বার বার বলছে,

-” আমরা একসাথে যাবো রিতু।”

রিতু তার নিজ জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে। আদি বুঝতে পারছে রিতু যাবে না। তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। রিতুর দুই হাত ধরে সে হাটু গেড়ে বসে পড়ল।

-” আমি তোমাকে এত সহজে যেতে দেব না। এটা হতে পারে না।”

রিতুর দুই চোখ দিয়েও অশ্রু বেয়ে নামছে। রিতু ধীরে ধীরে হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছে।

-” আমি চলে যাব আদি। তুমিও আসবে, তবে এখন না।
মিলিত হবো আমরা।”

হাত ছাড়িয়ে রিতু চলে যাচ্ছে। হলুদ সবুজ প্রান্তরে দৌড়ে চলে যাচ্ছে সে। বটতলায় আগের মতোই হাটু গেড়ে বসে আদি দেখছে। তার উঠার শক্তি নেই। সে চিৎকার করে বলছে,

-” রিতু যেও না….. যেও না।”

তার চিৎকারের আওয়াজ বাড়ছে। কিন্তু না… রিতু শুনতে পারছে না, সে দৌড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই যেন রিতু বাতাসের সাথে মিশে গেলো। এই বিস্তর প্রান্তরে আজ আদি একা; ভিতর থেকে ভেঙে পড়া টুকরো টকরো পাথর।

Previous articleনিঃশব্দ চিৎকার
Next articleজুলাইয়ের স্মৃতিমাখা দিনগুলো
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here