অন্তরীক্ষে অপেক্ষা

0
160

আরিফা আতিক মিম

তিনজন মানুষ একটা লাইটহাউস থেকে উধাও হয়ে গেল, আর কেউ তা জানল না?”

গ্রিশা ইয়েগার ফিসফিস করে বললেন, চোখে ছিল শীতল উত্তেজনা।
তাঁর চোখের সামনে সমুদ্র থমকে গেছে। বৃষ্টির বিন্দুগুলো যেন বাতাসে ঝুলে আছে, আর লাইটহাউসের মাথায় চেপে বসেছে শতাব্দীপ্রাচীন এক রহস্য।
এ জায়গার নাম — ফ্ল্যানান আইলস, যার আসল নাম আইলান মোর।

১৮৯৯ সালের ডিসেম্বরে এখান থেকেই নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনজন লাইটহাউস কর্মী — থমাস মার্শাল, জেমস ডুক্যাট, আর ডোনাল্ড ম্যাকআর্থার।
আজও কেউ জানে না কী ঘটেছিল।

কিন্তু গ্রিশা জানেন, এগুলো নিছক দুর্ঘটনা নয়।

গবেষণাগারে বসে থাকা গ্রিশা তাঁর পুরনো শর্টওয়েভ রেডিওটিকে টানা ৪২ দিন ধরে চালু রেখেছিলেন। ঠিক ৪২ দিন পর, রাত ৩:১৪ মিনিটে রেডিওর পর্দায় ফুটে উঠল:

Incoming Transmission: Sector NGC 1277
Signal Pattern: Non-Earth Origin — Probability 99.982%
Decode Layer Alpha-3:
ϡΞ-ᚾ7ΔΔØ:/x14-♁5φ//ΘΔΘΔΘΔ-11Ʒτ0:ψψψ∞∞::≈
Awaiting Response…

তারপর নিস্তব্ধতা।
“এটা কোনও টেরেস্ট্রিয়াল সিগন্যাল নয়,” তিনি ফিসফিস করে বললেন।

এটি এসেছে বাইরের মহাবিশ্ব থেকে, হয়তো এমন এক মাত্রা থেকে, যেখানে আমাদের যুক্তি পৌঁছায় না।

গ্রিশা ইয়েগারের ছোট মেয়ে মিসা ইয়েগার, ১২ বছর বয়সী। তার স্বপ্নে মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব চিহ্ন আসে — ψψψ, Ʒ, Θ।

এবং বড় ছেলে এরউইন ইয়েগার, ১৬। যুক্তিবাদী, সাহসী। আশেপাশের সবাই গ্রিশার কথায় খুব একটা গুরুত্ব দিত না কিন্তু এরউইন সবসময় বিশ্বাস করত, তার বাবার গবেষণার পেছনে আছে গভীর বিজ্ঞান। যার রহস্য সে একদিন উদঘাটন করবেই।

তাদের এই ছোট পরিবার এখন ফ্ল্যানান আইলস-এ থাকে। এই লাইটহাউসের বেসমেন্ট এ ছিল গ্রিশার ল্যাব। যেখানে গ্রিশা বিভিন্ন পরীক্ষা করতেন । দূর আকাশে সংকেত পাঠাতেন । এই আশায় যে কোনোদিন হয়তো রহস্য উন্মোচন করবেন।
কিন্তু গ্রিশা জানতেন — এটা রহস্যের শুরু মাত্র।


গ্রিশার বন্ধু এরেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের একটি পরিত্যক্ত দ্বীপে গবেষণা করছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ওখানে আছে চতুর্থ মাত্রায় প্রবেশের গেটওয়ে।

হঠাৎ করেই তাঁর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
গ্রিশার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ।
হারিয়ে গেলেন কোন অজানায়।

গ্রিশা সিদ্ধান্ত নেন—তিনি যাবেন সেই দ্বীপে।

তবে নল’আর্ক নামক এক দ্বীপে পৌঁছানোর ঠিক আগমুহূর্তে নৌকাটি ঘুরপাক খেতে থাকে, আকাশ অদ্ভুতভাবে কালো হয়ে আসে। তখনই ঘটে মহাজাগতিক ঘটনা — বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের গভীরে একটি Dimensional Rift খুলে যায়। বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রঙিন হয়ে ওঠে।
একটি বিকট শব্দের সাথে সাথে গ্রিশা হারিয়ে যান।
গ্রিশা পৌঁছে যান এক অন্য মাত্রার জগতে।
সেখান থেকে ক্রমাগত সংকেত পাঠাতেন থাকেন ।
যেগুলোর কোনটিই এসে পৌঁছায় না ।
তবে একটি সংকেত পৌঁছায় যেটিই ছিল শেষ সংকেত।

তাঁর শেষ পাঠানো সংকেত ছিল:
Ω∇₄•ξ⧫∑≣ ⚡ ↯Φ♾ : ζχλᛟ⚠


মিসা একদিন হঠাৎ স্বপ্নে দেখে সেই চিহ্নগুলো — Ξ এবং Ʒ আকাশে ঘুরছে। সে সেই স্বপ্নের মানে খুঁজতে থাকে । এরউইনকে জানালে তারা দুজন মিলে গ্রিশার ল্যাবে খুঁজতে থাকে।
খুঁজতে খুঁজতে তারা আবিষ্কার করে, গ্রিশা রেখে গেছেন একটি প্রাচীন সাইফার বই।
সেখানে লেখা ছিল:

“Dimensional wall গুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সময় কম।”

তারা বুঝতে পারে, প্রতিটি সংকেত আসলে একেকটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির প্রতিনিধি।
সাইফার অনুযায়ী তারা সেগুলো ডিকোড করার চেষ্টা করে এবং সফল ও হয় ।
ডিকোড করে বের করা শব্দগুলোর অর্থ কিছুটা এরকম :

ψψψ: প্রতিধ্বনি বা লুপিং রেজোন্যান্স

ΔΔØ: মাত্রার বাধা পার হবার শক্তি দরকার

Ω: চূড়ান্ত সীমা

∇₄: চতুর্থ মাত্রার অভ্যন্তরে স্থানান্তর

⚡, ⚠: তীব্র বিপদের সংকেত

গ্রিশার পাঠানো শেষ সংকেত ডিকোড করে বুঝা যায় যে গ্রিশা সাহায্য চাইছে। সে আটকে আছে এক অজানা জগতে।


গ্রিশার অন্তর্ধানের এক বছর পর, হঠাৎ একরাতে ফ্ল্যানান আইলস-এর আকাশে দেখা দেয় Quantum Aurora — এক অদ্ভুত কসমিক বৃষ্টি শুরু হয় ফ্ল্যানান আইলস-এর উপর। রেডিও তরঙ্গ উচ্চমাত্রায় বিকৃত হতে থাকে।

আকাশে দেখা যায় উল্কা নয়, বরং ধূসর রঙের স্ট্রিমলাইন আলো, যেগুলো সমুদ্র স্পর্শ করতেই হঠাৎ মিলিয়ে যায়। সেই সাথে জিওম্যাগনেটিক ফিল্ড ভেঙে পড়ে — ল্যাবের সমস্ত যন্ত্রচক্র ঘুরপাক খেতে থাকে।

মিসা হঠাৎ হারিয়ে যায় এক ড্রিমসিকোয়েন্সে, যেখানে সে নিজেকেই দেখে… এক ভবিষ্যতের রূপে। তার হাতে আছে এক নষ্ট স্যুট, পিছনে পুড়ে যাওয়া একটা NGC 1277 গ্যালাক্সির ঝলক। সে নিজেকেই বলতে শোনে:

“এখন আসো না। ভুল করেছিলাম আমি… এখনও সময় আসেনি।”

এরউইন মিসাকে আবার জাগিয়ে তোলে ।

গ্রিশার গোপন নথিতে তারা পায়—
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হলো পৃথিবীর এমন এক স্থান, যেখানে স্থান-কাল ও মহাকর্ষ একসাথে বিকৃত হয়।

সেই জায়গাতেই অসংখ্য জাহাজ, বিমান আর মানুষ গায়েব হয়েছে। কিন্তু গ্রিশা বিশ্বাস করতেন, এটি কেবল দুর্ঘটনা নয় — বরং একটা নির্দিষ্ট প্রযুক্তির ফাঁদ। বারমুডার নিচে লুকিয়ে থাকা স্পেস-টাইম ফোল্ডিং এক্সেস পয়েন্ট দিয়ে অন্য মাত্রায় যোগাযোগ সম্ভব। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আসলে একটি space-time folding point, যেখান থেকে dimensional travel সম্ভব।

তার গবেষণায় মিলে এমন এক সংকেত, যেটা NGC 1277 নামক একটি গ্যালাক্সি থেকে আসা, যেটা তারার জন্ম থামিয়ে দিয়েছে বহু বছর আগে। আর এই সংকেতের সাথে ছিল এমন কিছু এলিমেন্ট, যেগুলো কেবল নিউট্রন স্টার বা ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি তৈরি হয়।

এবং NGC 1277 থেকে আসা সংকেত — সেটাই প্রমাণ।


মিসা ও এরউইন রেডিওতে আবার নতুন সংকেত পায়, এবার অদ্ভুতভাবে মানবিক কণ্ঠস্বরের ছায়া তাতে মিশে যায়। কণ্ঠটা যেন বাবার, কিন্তু…

“তোমরা খুব দেরি করে ফেলেছো… গেট বন্ধ হওয়ার পথে… ϡ-ϡ-ϡ…”

মিসার চোখে জল, কিন্তু তার মুখে দৃঢ়তা। সে তাকিয়ে বলে:

“আমি জানি, বাবা জীবিত… আর আমারই ভবিষ্যৎ আমাকে থামাতে চাইছে। তাহলে কিছু একটা ঘটবেই।”

এরউইন পোর্টাল এক্টিভেট করার প্রস্তুতি নিতে নিতে বলে:
এইবার হয়তো আমাদেরই হারিয়ে যেতে হবে — উত্তর খুঁজতে।”
মাটির নিচে ফ্ল্যানান আইলসের কম্পন বাড়ছে। সময় থেমে যায়। রেডিও আবার বেজে উঠে —

“ψψψ∞∞::≈”
অন্তরীক্ষে কেউ অপেক্ষা করছে …

Previous articleভ্রমণ রোমাঞ্চ
Next articleআনন্দ যাত্রার অশুভ পরিণতি
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here