জেড এইচ ফাহাদ
মূসা তখন ঘুমচ্ছিল হঠাৎ বাহিরের চিৎকার-চেঁচামেচিতে তার ঘুম ভেঙে যায়। সে শুনতে পায় ‘চোর! চোর ’ করে করে চিৎকার করছে গ্রামবাসী। সে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। তার ফজরের আযানে ঘুম ভাঙে, ঘুম থেকে উঠে ফজরের সালাত আদায় করতে মসজিদে যায় এবং সালাত আদায় করে। কোরআন তিলাওয়াত করে হাঁটতে বের হয়ে। তার সাথে দেখা হয়ে কিশোর, ইব্রাহিম, ইসমাইল ও আব্দুল্লাহর। তারা একসাথে হাঁটছিল। তখন হঠাৎ কিশোর বলে উঠে, “ কিরে কাল রাতের ছুরির খবর শুনেছিস? ”
“ হ্যা, শুনেছি। কাদের ঘরে ছুরি হয়েছে রে? ” জিজ্ঞেস করলো মূসার।
“ আর কাদের? রামিমদের ঘরে। ” কিশোর বললো।
“কি বলিস? চোর কয়জন ছিল? ” বললো আব্দুল্লাহ।
“সাতজন। ” কিশোর বললো।
“ এই সাতজন চোরের বড়ো ছুরির শখ বেড়েছে। এদের মজা দেখাতে হবে। এই গ্রামে পনেরো বার ছুরি করেছে। এবার এদের খেলা শেষ করতে হবে। ” বললো ইব্রাহিম।
“ কি করা যায়? ” বললো ইসমাইল।
“কি আর করবি? আজ বিকেলে মাঠে থাকিস তোদের তখন বলবো কি করবো? বিদায়! ” এই বলে মূসা বাড়ি চলে আসে, এসে পড়তে বসে। তারপর নাস্তা করে স্কুলে চলে যায়। সে ভাবে কি করবে সে? বুদ্ধি একটা বের করে। সে একটা ফাঁদ করার কথা ভাবে। স্কুলের পরে সে জঙ্গলে যায়, আবার চলে আসে। তবে সে কিছু একটা খুঁজে পায়। জঙ্গলে ফাঁদ একটা তৈরি করে সে। আসরের আযান শুনে মসজিদে গিয়ে আসরের সালাত আদায় করে। মাঠে যায় সে দেখে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। সে তাদের সামনে গেলে কিশোর বলে উঠে, “ মূসা, কিছু ভেবেছিস।”
“ হ্যা, যা ভেবেছি তার কাজে লাগাতে পারে। ” বললো মূসার।
“ কি ভেবেছিস?” বললো আব্দুল্লাহ।
“ এটা আগে বলে চোর গুলো ছুরি করে জঙ্গলের ভিতরে যায় কিনা?” জিজ্ঞেস করলো মূসা।
“ হ্যা!” বললো কিশোর।
“ তাহলে শুন রাতে আমরা না ঘুমিয়ে বাড়ীর ছাদ থেকে নজর রাখবো। সবাই মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখাবো। প্রস্তুত হয়ে নে। ” বললো মূসা।
“ তাহলে তো কথাই নেই। আমি তো সবসময় প্রস্তুত।” কিশোর বললো।
কিছুক্ষণ পরে মাগরিবের আযান শুনা যায়। তারা মাগরিবের সালাত আদায় করে বাসায় চলে আসে। মূসা পুরো তৈরি হয়। রাতে মূসা না ঘুমিয়ে ছাদ থেকে পুরো গ্রামে নজর দেয়। কিশোর, আব্দুল্লাহ, ইব্রাহিম ও ইসমাইল তারাও না ঘুমিয়ে পুরো গ্রামের উপর নজর দেয়।
“ কিশোর, কিছু দেখলি। ” বললো মূসা।
“ নারে আজ মনে হয়ে আসবে না।” বললো কিশোর।
“ দাঁড়া না! দেখি আসে কিনা, না আসলেও থাকতে হবে।” বললো মূসার।
“ আরে, আমার ঘুম পাচ্ছে। চোর আসলে ডেকে দিস। ” বললো আব্দুল্লাহ।
“ হ্যা, তোর তো শুধু ঘুম পায়। আমার যে খিদে পেট চলে যাচ্ছে। আমি আপেলটা খেয়ে নি। আহা! কি স্বাদ! ” বললো ইসমাইল।
রাত ঠিক তখন ১২টা। চোর! চোর! চেঁচামেচি শুনতে পাওয়া যায়। “ আমি চোর দেখেছি ১২নং রোডের দিকে গাড়ি করে যাচ্ছে। সবাই চল। ” এই বলে মূসা ছাদ থেকে নেমে তার সাইকেল নিয়ে বের হয়। ১১নং রাস্তায় এসে তার কিশোর ও ইব্রাহিমের সাথে দেখা হয়। ১২নং রাস্তায় আব্দুল্লাহ ও ইসমাইলের সাথে একসাথ হয়ে যায় তিনজন। তারা পাঁচজন চোরের দলের থেকে সামানো পিছনে। যখন চোরেরা ১৮নং রাস্তায় আসে তখন মূসার নির্দেশে আব্দুল্লাহ ও ইব্রাহিম ডানদিকে যায়। আরও কিশোর ও ইসমাইল বামদিকে যায়। মূসা চোরের গাড়ির পিছু নেয়। যখন চোরের গাড়ি জঙ্গলে আসে তখন মূসার তাদের পিছনে থাকে। সে কিছুদূর যাবার পর ডানে চলে যায়।তার সাথে কিশোর, ইব্রাহিম,ইসমাইল ও আব্দুল্লাহর সাথে দেখা হয়ে। মূসা বলে, “ আমার সাথে চলে। ” এই বলে সে একটা পোড়া বাড়ির সামনে গিয়ে সাইকেলগুলো সর্তকতা অবলম্বন করে রাখে। তারা আস্তে আস্তে ভিতরে যায়। তারা একটা সিঁড়ি দিয়ে নামে। সেখানে সাতজন চোর বসেছিল চেয়ারে। তখন মূসা তার হাতের রিমট টিপে দেয় সাথে সাথে উপর থেকে একটা জাল এসে চোরদের গায়ের উপর পড়ে। চোরের সেখানে আটকা পড়ে যায়। তারপর কিশোর ও ইসমাইল গিয়ে তাদের বেঁধে পেলে। তখন আব্দুল্লাহ বললো, “ মূস, তুমি এসব কিভাবে করলি? ” “ আমি সকালে স্কুল থেকে জঙ্গলে আসি। এই বাড়িটার ভিতরে ঢুকে দেখি এরা সবাই কথা বলছে। তাই আমি লুকে থাকি। তারা বেরিয়ে গেলে আমি গিয়ে টেবিলের উপর এমনভাবে জালটা লাগিয়ে যাতে কেউ না দেখে। ” বললো মূসা।
তারপর পুলিশ এসে চোরদের ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের পুরষ্কার দেয়। মূলত তারা হলো কিশোর গোয়েন্দা।
