শাহজাদী আক্তার
[রেনু আর হেনা প্রতিবেশি]
রেনু :ভাবী একটা খবর আছে। জানো- কাউন্সিলিং সেন্টার নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছে আমাদের লীলা ভাবী।
হেনা: কাউন্সিলিং সেন্টার? কিন্তু কেন? কিসের ? আর কীভাবে? উনিতো সাইকোলজিস্ট নন, যতটুকু জানি লীলা ভাবীর সাবজেক্ট ছিল ইংরেজি সাহিত্য।
রেনু :সাহিত্যের ছাত্রী তো, তাতে অসুবিধা নেই বরং সুবিধাই হবে। আর উনার পক্ষে সবই সম্ভব। দেখনা, ভাবী-কথা বলার সময় কেমন রসিয়ে রসিয়ে কথা বলেন। চেহারা ও কেমন গোলু গোলু।
হেনা: আমাকে আর অস্থির করোনা ভাবী!এবার বল কাদের জন্য সেন্টার বানিয়েছেন।
রেনু: বলছি, বলছি। আমি ছেলেকে স্কুলে দিয়ে লীলা ভাবীর বাসার পাশ দিয়ে হেঁটে আসতেই চোখে পড়ল বড় একটা সাইনবোর্ড আর তো জানিনা। লেখা আছে “কাউন্সিলিংসেন্টার”
হেনা: চলো, আজ বিকেলেই লীলা ভাবীর বাসায় গিয়ে সব আগ্রহ আর রহস্যের নিষ্পত্তি করে আসি।
রেনু: তাই হবে।
[ বিকেলে রেনু আর হেনা সত্যিই সশরীরে লীলা ভাবীর সামনে হাজির হলেন]
লীলা: আরে ভাবী তোমরা! কি সৌভাগ্য আমার এসো, এসো, বসো।
হেনা: ব্যস্ত হবে না ভাবী, এ দিকেই যাচ্ছিলাম তাই-ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই..
লীলা: তা বেশ করেছো, আমি তো ব্যস্ত হয়ে পড়েছি সেন্টারের কাজ নিয়ে।তোমাদের সাথেও কিছু কথা বলার ছিল, ভালোই হয়েছে চলে এসেছ।
রেনু: কিসের সেন্টার ভাবী? কাউন্সিলিং করাবেই বা কে?
লীলা: কেন আমি! পঁচিশ বছর ধরে দেখে-শুনে-বুঝে যা যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই নিয়েই কাজ করব। আমিই বুয়াবিশেষজ্ঞ অর্থাৎ, house-maid expert.
দেখছ না। অফিসটার সেটিং করছি। এই সেন্টারের কাজ হবে তিনটি নাম্বার ওয়ান:
Servent supply
নাম্বার টু: ওদের ট্রেনিং
নাম্বার থ্রী: ওদের কাউন্সিলিং
হেনা: তোমার আইডিয়া চমৎকার ভাবী! সব ঠিকমত হয় তো বেশ ভালোই হবে।
লীলা: সবাই যা করে তা না করে Diffrent type কিছু চিন্তা করছিলাম।
রেনু: অনেকে অনেক কিছু বলবে, হাসি-তামসা ও করবে।
লীলা: পাছে কিছু বলবেই তা আমি গাঁ করিনা।
হেনা:ভাবী ভাইয়া তোমাকে সব ব্যাপারে সাহায্য করবে তো?
লীলা: কেন ভাইযার সাহায্য লাগবে? আমার কি হাত-পা নাই, ওজ্ঞান-বুদ্ধি নাই?
আচ্ছা এবার বুয়া প্রজাতি নিয়ে দুজন একটা করে অভিজ্ঞতা শেয়ার কর।
রেনু: সুখের অভিজ্ঞতা নাই আছে যা যন্ত্রণার।
[বলতে বলতে হাসিমাখা মুখ মলিন হয়ে গেল।]
সারা জীবনের সঞ্চয়ে যে গহনা গুলো বানিয়েছিলাম তা পুরো টোপলা নিয়ে হাওয়া, গেল তো গেল। এই গহনার জন্য আমার সংসারটাই ভাঙতে যাচ্ছিল।
হেনা: ভালো বুয়া পাওয়া সেতো ভাগ্যের ব্যাপার।সে ভাগ্য নিয়ে আমার জন্ম হয়নি গো ভাবী। একটার চেয়ে একটা খারাপ মিলে। আমার শাশুড়ীর কাছে মিথ্যা বলে ঘরে অশান্তি, লাগিয়ে রাখত আমার বুয়াটাও।
লীলা: তোমাদের মতো অনেকেই এমন নানা সমস্যা নিয়ে আছে। সমস্যা দূর করার জন্যই আমার এই House maid counseling Centre.
রেনু: ভাবী তা কি সম্ভব? আমরা কি মনের মতো বুয়াপাব?
লীলা: পাবে পাবে অবশ্যই। তবে এর জন্য একটা Fee দিতে হবে। তোমরা আমরা প্রতিবেশি। অন্য ক্লায়েন্টের চেয়ে কিছু তো Discount পাবেই। প্ল্যানমত এগুচ্ছি ইনশাল্লাহ সব হবে।
[রেনু ও হেনা একসাথে বলে কি করতে হবে? কিভাবে তোমাকে সাহায্য করব? সব করতে আমরা প্রস্তুত।]
লীলা: তোমরা শুধু প্রচারের কাজে সাহায্য করবা -লিফলেট বিলি করবা, পাড়ার সব ভাবীদের কাছে।
যারা এখান থেকে বুয়া নেবে একটা ফর্ম ফিলাপ করবে আর যেসব বুয়া কাজ নিবে তারাও। পাড়ার ৫০ টার মত বাসা। সবার সাথে এই প্ল্যানটা শেয়ার করবা। আর Facebook তো আছেই। আমি বুস্টিং ও করব।
রেনু: তোমার উপর ভরসা আছে আমার। তুমি যদি চাও সব করতে পারবে।
হেনা: লীলা ভাবী, ভালোই হবে। আচ্ছা আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিও। আমার হাত-খরচটা হতো আর কি!
লীলা: তা হবে! আর স্বামীর দাসি-গিরি করে জীবন দফা-রফা করতে হবেনা। আপাতত দু’জন কর্মী লাগবে।
রেনু: আমার লক্ষ্মী ভাবী, আমাকে তোমার Assistant বানাও না! তাহলে আমার টাকলা/চান্দু গাজী জামাইয়ের কাছ থেকে আর ভিক্ষে করতে হবেনা। জানোনা। হতচ্ছাড়া বাঁদড় ব্যাটা। খালি মুখে আদর-সোহাগ দেখাবে।যেই দুটো পয়সা লাগবে তখনই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে। আর বক্তৃতা শুনাতে ও ছাড়বেনা।
লীলা: আরে এত শত বলতে হবেনা রে। আমারটাও কি কম। হাড় কৃপটে একটা, তাইতো এবার দেখিয়ে ছাড়ব সেবা আর ব্যবসা একসাথে।
[লীলা ভাবীর কথা শুনে রেনু আর হেনার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠল]
