দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য

0
74

ফারজানা ফাউজিয়া মুগ্ধতা

গোধূলি লগ্ন। সূর্যটা দিনের ক্লান্তি শেষে ধীরে ধীরে দিগন্তের আড়ালে মিলিয়ে যাচ্ছে। হালকা বাতাস বইছে শহরের ব্যস্ত রাস্তায়। চারদিকে এক ধরণের হাহাকার আর প্রশান্তি, যেন দিনের শেষে সবাই একটু দম নিচ্ছে।

ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলো নৌশাবা। তার কাঁধে একটা পুরনো স্কুল ব্যাগ, চোখে চশমা, পরনে সাদামাটা সালোয়ার-কামিজ। সদ্য কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরছে।

হঠাৎ চোখে পড়লো একটা ভ্যানে নানান রঙের কিছু পার্স ব্যাগ সাজিয়ে রাখা। কালো রঙের একটি সুন্দর পার্স ব্যাগ নৌশাবার পছন্দ হলো। নৌশাবা ভাবলো, “কিনেই নেই ব্যাগটা। মন্দ হয় না !”

নৌশাবা ভ্যানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, “ব্যাগটার দাম কত?”

ভ্যানের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে একজন বিক্রেতা ছেলে। তার নাম রাহিল, বয়স আনুমানিক ১৫-১৬ হবে। রাহিল নৌশাবার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো, “১৫০ টাকা।”

নৌশাবা: “৮০ টাকা দেই?”

রাহিল: “ফিক্সড দাম।”

নৌশাবা কিছুটা অবাক হলো। ফুটপাতের দোকানে কখনো ফিক্সড দাম দেখে নি নৌশাবা। দরদাম করেই কেনাকাটা করে সবাই।

বোকা নৌশাবা নিজের অবাক হওয়াটা লুকিয়ে রাখলো না। বরং মুখের উপর বলেই বসলো, “ফুটপাতের দোকানে তো আর ফিক্সড দাম হয় না। একটু কম রাখো।” [নম্র স্বরে]

রাহিল: “১০ টাকা কম দিয়েন।”

নৌশাবা: “১২০ টাকা দেই?”

রাহিল আর কথা বাড়ালো না, ব্যাগটা প্যাক করে নৌশাবার হাতে দিলো। নৌশাবা ১২০ টাকা দিলো। কিন্তু রাহিল নিলো না।”

রাহিল: “আপা, ১৫০ টাকা দেন।”

নৌশাবা: “তুমি তো ১২০ টাকায় দিতে রাজি হয়েছিলে।”

রাহিল: “ব্যাগও নিয়ে যান, টাকাও নিয়ে যান”

নৌশাবার মেজাজটা একটু খারাপ হলো।

নৌশাবা বললো: “একটা থাপ্পড় দিবো! ১২০ টাকায় রাজি হয়ে এখন আবার বেশি দাম চাও?”

রাহিল বললো, “না, ১৫০ টাকাই দেওয়া লাগবে।”

নৌশাবা: “১৫০ টাকা দিয়ে এই ব্যাগ নিবো না। রাখো, তোমার ব্যাগ।”

রাহিল: “না, ব্যাগ নেওয়াই লাগবে।”

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

নৌশাবা ১২০ টাকা ছেলেটার ভ্যানের উপর ফেলে দিয়ে বললো, “নিলে নে, না নিলে না নে।”

কিন্তু রাহিল ছেলেটা নাছোড়বান্দা, সে নৌশাবাকে ১৫০ টাকা দিয়েই ব্যাগ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। নৌশাবা রাস্তার ওপাশে থাকা পুলিশকে ডেকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো।

পুলিশ রাহিলকে ধমক দিয়ে বললো, “দোষ তো তোরই, চাইবি এক দাম, পরে আবার বাটপারি করবি?”

নৌশাবা রাহিলকে আবার বললো, “ব্যাগ রাখো।”

কিন্তু রাহিলটা ব্যাগটা রাখলো না, শেষ পর্যন্ত ১২০ টাকা নিলো। আর বললো, “সামান্য ৩০ টাকার জন্য পুলিশ ডাকেন আপনারা?”

নৌশাবা কথা না বাড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলো। তার মনজুড়ে একটাই ভাবনা।

নৌশাবার ভাবনা: “ছেলেটার কাছেও ৩০ টাকা সামান্য। আর আমি দুইদিন কোচিং এ হেঁটে যাতায়াত করলে ৩০ টাকার মালিক হই। এই টাকাটা আমার কাছে আমার কষ্টের উপার্জিত টাকা। যা কখনোই সামান্য বা তুচ্ছ নয়।”

[পাঠকদের প্রতি জিজ্ঞাসা: “ দোষটা কার? নৌশাবার নাকি বিক্রেতা ছেলেটার?”]

                       সমাপ্ত
Previous articleহারানো ঈদের খোঁজে
Next articleঅবিক্রীত বিকৃতি
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here