নার্গিস আক্তার
শিয়াল মামা খুবই চালাক চতুর এবং কুকুর
মামা খুবই নিরীহ প্রাণী। কুকুর কাজী সাহেবের বাড়ির রান্না ঘরের বারান্দায় রাত্রি যাপন করে এবং বাড়ি পাহারা দেয়। দিনের বেলা বাড়ির বর্জিত খাবার খায় এবং গ্রাম ভরে ঘুরে বেড়ায়। প্রতিঘরের দুয়ারে গলা উঁচু করে খাবারের জন্য হা করে থাকে। যা পায় তাই খায়। রাতে মালিকের বাড়ি পাহারা দেয়। শিয়াল মামা রাত হলে কাজী সাহেবের বাড়ি আসে। কাজী সাহেব হাঁস মুরগি লালন পালন করে থাকে। এই লোভে শিয়াল প্রতি রাতে কাজী সাহেবের বাড়ির উঠানে মুরগির খোপের কাছে এসে গলা উঁচু করে কিছুক্ষণ থাকে। শিয়ালকে দেখে কুকুর মামা ঘেউ ঘেউ করে অমনি ভয়ে শিয়াল মামা চলে যায়। এই ভাবে কিছুদিন কেটে যায়। শিয়াল মামা বুদ্ধি আটে কিভাবে কুকুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায়। কুকুর মারা শিয়ালকে দেখলে প্রতি রাতে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। একদিন শিয়াল বনের মধ্যে একটা পাখি স্বীকার করে আর মনে মনে ভাবে আজ আর আমি পাখিটা খাব না,কুকুরের জন্য নিয়ে যাব এবং ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। প্রতিদিন তো আমি বনের অনেক পাখি শিকার করি। সত্যি শিয়াল না খেয়ে পাখি মুখে করে কুকুরের সামনে নিয়ে দিল। কুকুর খেতে শুরু করল। করমর করে চিবিয়ে খেলো আর শিয়ালকে জিজ্ঞাসা করল মামা শিয়াল তুমি খাবা না।
আজ যে আমাকে দিলে। শিয়াল হেসে বলল,
আমি প্রতিদিন কত পাখি খাই। তুমি যদি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব কর তাহলে তোমাকে আর না খেয়ে মালিকের বাড়ি পাহারা দিতে হত না। কুকুর শিয়ালকে জিজ্ঞাসা করল, বন্ধুত্ব আবার কি জিনিস বুঝিয়ে বলো? শিয়াল বলল, বন্ধুত্ব হল একে অপরের পাশে থাকা আমি যা খাব তুমি তা খাবে। তুমি শুধু ভালো বন্ধু হয়ে আমার সাথে থাকবে। কুকুর বলল, তুমি তো বেশ ভালো বলেছ। আমি না খেয়ে মালিকের বাড়ি পাহারা দেই আর তুমি প্রতিদিন পেট ভরে খাবার খাও। তাহলে ঠিক আছে আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি। শিয়াল মামা অতি চালাক মিটিমিটি করে হাসে আর বলে তুমি তো বোকা না খেয়ে প্রতিদিন মালিকের বাড়ি পাহারা দেও। কুকুর শিয়ালকে বলে তুমি ঠিক বলেছ !আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু আমি তোমার বন্ধু! শুনে শিয়াল হাসতে হাসতে বলে তাহলে আজ যাই বন্ধু আমার ক্ষুধা পেয়েছে খাব। শিয়াল বনে চলে যায়। কুকুর পেটে ক্ষুধা নিয়ে মানিকের বাড়ি পাহারা দেয় ঘুম না পড়ে। আর মনে মনে বলে শিয়াল অনেক ভালো বন্ধু ওকে কারো বাড়ি পাহারা দিতে হয় না। আজ থেকে আমি বাড়ি পাহারা দিব না। ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিব রাত! পরের দিন হঠাৎ শিয়াল এসে দেখতে পেল কুকুর ঘুমাচ্ছে। তাই কয়েকবার বন্ধু বন্ধু করে ডাক দিল। কুকুর ডাকে সারা দিয়ে বলল, বন্ধু আমার জন্য খাবার এনেছ। শিয়াল খুব চালাক না বন্ধু আজ আমি না খেয়ে আছি। বলে চলে গেল। পরের দিন রাতে শিয়াল এলো কুকুরকে দেখল ঘুমাচ্ছে। আবার বন্ধু বন্ধু করে ডাক দিল। কুকুর ডাকে সাড়া দিয়ে বলল তুমি না এলে আমি ঘুমিয়ে যেতাম। এই সুযোগে শিয়াল বুদ্ধি আটে আজ রাতে চল আমার সঙ্গে থাকবি! আজ না। কুকুর শিয়ালকে বলল, বন্ধু আজ না হয় তুমি আমার কাছে থাকো। শিয়াল রাজি হয়ে গেল আর বলল না খেয়ে কেন মালিকের বাড়ি পাহারা দেও? মালিক কি তোমাকে খাবার দেয়? তুমি মালিকের ফেলে দিয়া হাড়গোড়, কাটা, পঁচা ভাত খাও। আবার সময় সময় সেটাও পাওনা। সারারাত দু’জন ঘুমিয়ে থাকলো। মালিক উঠার আগে শিয়াল বনে চলে গেল। কুকুর তখনো ঘুমাচ্ছে। খুব ভোরে কুকুর গ্রামে খাবারের জন্য বাহির হল। আজ রাতে শিয়ার এলো কুকুর ভীষণ খুশি বন্ধুকে পেয়ে। জমিয়ে দু’জন আড্ডা দিবে তারপর ঘুমিয়ে পড়বে। এইভাবে বেশ কয়েকদিন রাতে শিয়াল মামা ঘুমোতে আসে। শিয়াল অতি চালাক মনে মনে হাসে।আমার আর চিন্তা নেই প্রতিদিন মালিকের এক একটা মুরগি নিয়ে খাবে। হঠাৎ এক রাতে শিয়াল কুকুরকে বলে আমি কয়েকদিন আসবো না বন্ধু। কুকুর বলে কেন বন্ধু? শিয়াল বুদ্ধি করে বলে আমার দুটো বাচ্চা আছে, বাচ্চা দুটো খুবই অসুস্থ বন্ধু। তাই কয়েকদিন আসবো না। বোকা কুকুর বিশ্বাস করে এবং বলে বাচ্চারা সুস্থ হওয়ার পর এসো। ঠিক আছে বন্ধু !কিন্তু চালাক শিয়াল প্রতিদিন রাতে আসে এক একটা মুরগি নিয়ে খায়। ওদিকে মালিক টের পাচ্ছে না। পাঁচ সাত দিন পর শিয়াল আসে এবং মুরগি নিয়ে আসে বন্ধুর জন্য। তুই খা আজ বুঝি কিছু খাওয়া হয়নি। কুকুর শিয়ালকে বলে সত্যি তুই আমার ভালো বন্ধু। তখন শিয়াল বলে, আমি যা যা বলব তুই শুনবি ঠিক আছে। তখন বোকা কুকুর মামা বলে ওঠে আমি রাতভর ঘুমিয়ে থাকি।! এই সুযোগে শিয়াল খুশিতে আটখানা। সত্যি সত্যি কুকুর বন্ধু শিয়ালের কথায় ঘুমিয়ে থাকে। শিয়াল মালিকের সমস্ত হাঁস মুরগি খেয়ে ফেলে। শিয়াল আর কুকুরের কাছে আসে না। কুকুর ভাবতে থাকে শিয়াল আসে না কেন? বনে গিয়ে খবর নেয় কিন্তু দিনের বেলা কুকুর বনে গিয়ে বন্ধু শিয়াল কে পায় না, ফিরে আসে। কুকুর সাধারণত রাতে বাড়ির আশেপাশে থাকে। কুকুর গৃহপালিত জীব।আর শিয়াল চালাক প্রাণী ওরা বনে বসবাস করে। দিনে পালিয়ে বেড়ায় এবং রাতে চুরি করতে বের হয়। হঠাৎ একদিন বাড়ির মালিক আশ্চর্য হয় খোফ খুলা এবং একটাও হাঁস মুরগি নেই। মালিক ভাবতে থাকে চোরে সব হাস মুরগি নিয়ে পালিয়ে গেছে। চালাক শিয়াল মামা মুরগি চোর কিন্তু দোষ হয় চোরের। বোকা মালিক ও কুকুর শিয়ালের বুদ্ধির কাছে হার মেনেছে।
