সোহেল রানা
রঞ্জু, যা। চা দুটো রাস্তার ডান পাশের ৩ নম্বর দোকানে দিয়া আয়। দান ভাই, আহুনি দিয়াইতে আছি, রঞ্জু বললো। দোকানদার রঞ্জুর হাতে দিয়া বললো – শক্ত কইরা ধইরা নিয়া যাইছ কিন্তু পইড়া কাপ ভাঙলে জরিমানা দিতে অইবো তোর।ঠিক আছে ভাই, উত্তর দিয়ে হনহনিয়ে হেটে গেলো। ১ মিনিটের মধ্যে হাজির। দোকানদার জিজ্ঞেস করলো এ তুই কি চা সহ কাপ ড্রেনে ফালাইয়া দিয়াইছো? না ভাই, কি যে কন। মুই কি বলদ। এত সুন্দর কাপ কেউ ড্রেনে হালায়। নিখুঁত বরিশালের সরল ভাষা খুব অবাক হয়ে শুনে দোকানদার। ওর কথা খুব ভালো লাগে দোকানদারের। তাইতো ওর মুখের ভাষা শুনার জন্য চা বানাইতে বানাইতে আবার প্রশ্ন করলো তাইলে এত তাড়াতাড়ি চা দিয়া ফেরত আসলি কেমনে? উত্তরে বললো, মুই পারি ভাই। মোর পায় রকেটের মেশিন লাগাইন্না। শুনে সবাই হেসে হেসে খুন।এতক্ষনে চা বানানো শেষ করে রঞ্জুর হাতে চা কাপ ও একটা মোবাইল বিস্কুট ধরিয়ে দিয়ে বললো খা এইবার। আর জিজ্ঞেস করলো তুই রকেট চিনিস কেমনে? চায়ে বিস্কুট বিজিয়ে মুখে দিতে দিতে রঞ্জু বললো, ভাই আমহেরে ধন্যবাদ চা – বিস্কুটের জন্য । দোকানদার আবার হাসলো এবং বললো কই বললি নাতো তুই রকেট চিনিস কেমনে?- ভাই, একদিন কোলায় নাড়ার উপরে বইয়া মোরা উন্দুরের মাটিদ্ধা বান্ড বাড়ী খেলছিলাম। হঠাৎ দেহি ছোট্ট একটা কলমের মাথার মতো ম্যাগের উফরিদ্ধা উইড়া যায় পিছদা খালি দোয়া ছাড়ে, সাদা দোয়া। মোগো স্কুলের মাস্টার এর পোলায় কয় ঐডা রকেট। সবাইতো অবাক। জিগাইলাম হ্যা আবার কি? ও কইলো মোগো টিভি তে ঐডা দেখছি একদিন আব্বায় কইছে ঐডা রকেট। অ বোলে প্লেনের চাইতেও তাড়াতাড়ি চলে। মুই কইলাম একখালে মোর নাহান। মুই একটু তাড়াতাড়ি আডি তো হেইয়ারলোইগ্গা কইছি আর কি। ওরাও কয়, হয়। তোর পায় মনে হয় রকেটের মেশিন লাগাইন্না। হ্যারপর হইতে কেউ যদি জিগায় তুই এত তাড়াতাড়ি হাটো কেন তাইলেই কই মোর পায় রকেটের মেশিন লাগাইন্না। বলে হি হি করে হেসে দিলো রঞ্জু । দোকানদার বলে ভাই তুই এইবার থাম আর হাসতে পারি না পেট ব্যাথা হইয়া গেছে। রঞ্জুর চা খাওয়া শেষ হতে না হতেই দোকানদার বললো ঐ কাপ দুইটা আন গিয়া এবার। রঞ্জু হনহনিয়ে হেটে গেলো। হটাৎ দেখা সবুজের সাথে সবুজ স্কুলে থেকে ফিরছে কাঁধে ব্যাগ। সবুজরা ও রঞ্জুরা একই বস্তিতে থাকে। রোজ বিকালে দুজনে একসাথে লাটিম খেলে। আজ বিকালেও খেলবে কিনা জিজ্ঞেস করায় সবুজ বললো আমি কাজের ছেলেদের সাথে খেলি না। রঞ্জু আসলে কাজের ছেলে না, ঐ দোকানে মাইনের বিনিময়ে কাজ করে না। ওর বাবা যোগালি দিন মজুর। ওর মা ও বোন গার্মেন্টস কর্মী। মা- বাবা -বোন কাজে যায়, সকাল বেলা সবুজ স্কুলে যায় কার সাথে খেলবে তাই ঐ দোকানে বসে প্রতিদিন টিভি দেখে।একদিন দোকানদার ওর গায় পানি মারে পরে রঞ্জু কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে একটু দেখলে কি হয় ভাই । দোকানদার বললো ফ্রীতে টিভি দেখাবো না যদি চা ডেলিভারি দিতে পারো তবেই টিভি দেখতে পারবি। রঞ্জুও রাজি হয়ে যায়। টিভি দেখার নেশা ওর পুরোনো।
যাইহোক, সবুজের এরকম কথায় রঞ্জু খুব কষ্ট পায়। বিকালে আর সবুজের কাছে যায়নি। সারা বিকাল একটি মাটির টিলার উপরে মন খারাপ করে বসে ছিলো।সন্ধ্যার পর সবাই বাসায় আসলে রঞ্জু বায়না ধরে আমি পড়বো, আমি স্কুলে যাবো। ঠিক পরের দিন রঞ্জুর মা গার্মেন্টস এ না গিয়া রঞ্জুকে সবুজের স্কুলেই ক্লাস টু তে ভর্তি করায়। রঞ্জুর বায়নায় বাধ্য হইয়া।প্রতিদিন সকালে সবুজের সাথে একসাথে স্কুলে যায় আবার বিকালে একসাথে লাটিম খেলে। সে দিনের পর থেকে আর কখনো ঐ দোকানে রঞ্জু টিভি দেখতে যায় নি।
