নুপুর

0
81

মোহাম্মদ ছোলেমান ভূঁইয়া 

শরনখোলার সুন্দর বন এলাকার গা ঘেঁষা এক নিভৃত গ্রাম। যার নাম বাঘ বিধবা গ্রাম। এই গ্রামের অধিকাংশ মহিলার স্বামী সুন্দর বনের বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়। এই গ্রামের সকল পুরুষ মানুষ সুন্দর বন থেকে মধু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যারা মৌয়াল নামে পরিচিত। এই গ্রামের সৌরেন মৌয়াল খুবই গরীব। তার দুটি মেয়ে, বড় মেয়ের নাম মিতু সৌরেন আর ছোট মেয়ের নাম নিতু সৌরেন। গোল পাতায় ছাওয়া ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে কোনো রকমে বসবাস করে ওরা। সৌরেন মৌয়াল তার বড় মেয়ে মিতু সৌরেনকে বিয়ে দিয়েছে একই গ্রামের ছেলে দিলীপ মৌয়াল এর সাথে। বিয়ের দুই বছর না যেতেই বিধবা হয় মিতু সৌরেন। তার স্বামী দিলীপ মৌয়াল সুন্দর বনে মধু আহরণ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়। এখন মিতু সৌরেন দেড় বছরের একটি মেয়ে নিয়ে বাপের ঘরেই থাকে। ছোট মেয়ে নিতু সৌরেন এখন প্রায় ষোল বৎসরে পা দিয়েছে।তার নুপুর পড়ার বড্ড শখ। নিতু সৌরেন তার বাবা সৌরেন মৌয়াল এর কাছে এক জোড়া নুপুরের বায়না ধরে বলে, ” বাবা,আমাকে এক জোড়া নুপুর কিনে দাও। আমার নুপুর পরার বড্ড শখ। এবার দুর্গা পুজোয় কিনে দিবে কিন্তু।”

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে


সৌরেন মৌয়াল ছোট মেয়ের এই বায়না শুনে ভাবনায় পড়ে যায়। কি দিয়ে নুপুর কিনে দিবে মেয়েকে। মৌয়াল পেশায় থেকে সংসার চালাতেই হিমশিম খায় সৌরেন মৌয়াল। তার উপর আবার বিধবা হয়ে বড় মেয়ে এসে জুটেছে সংসারে। বনের আসে পাশে তেমন একটা মৌচাক পাওয়া যায় না। বনের গভীরে গেলে বেশি মৌচাক পাওয়া যায়, কিন্তু প্রাণের ঝুঁকি বেশি। সৌরেন মৌয়াল মেয়ের বায়না পূরণ করার আশায় সুন্দর বনের গভীরে চলে যায় মধু আহরণ করার জন্য। হঠাৎ বাঘ এসে তাকে আক্রমণ করে। সাথে থাকা সবাই ফিরে আসলেও সৌরেন মৌয়ালকে বাঘ কামড়ে ধরে টেনে হিছড়ে নিয়ে যায়। একথা শুনে নিতু সৌরেন কান্নায় ভেঙে পড়ে। বার বার মূর্ছা যেতে থাকে নিতু সৌরেন। হুশ ফিরে পেয়ে বলতে থাকে নিতু সৌরেন, “বাবা,তুমি কোথায় চলে গেলে,তুমি ফিরে এসো বাবা। আমার নুপুর লাগবে না,আমি আর নুপুর চাইবো না বাবা।”
মিতু সৌরেন তার বাবার এই পরিনতির কথা শুনে শোকে পথর হয়ে যায়। দেড় বছরের ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে গোলপাতায় ছাওয়া কুঁড়ে ঘরের খুটি ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, ঠাটা পড়া মানুষের ন্যয়।

Previous articleঅবিক্রীত বিকৃতি
Next articleমোবাইল বিস্কুট 
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here