পুষ্পিতা ভট্টাচার্য
ক্লাস লেকচার দেওয়ার সূত্র ধরে ইমতিয়াজের সাথে পরিচয়।কেউ কি করে নিমিষেই বন্ধু বনে যেতে পারে ওকে না দেখলে কখনো বুঝতাম না।ওর হাসি-খুশি,প্রাণবন্ত স্বভাবটা সবাইকে যেন মুহূর্তে আপন করে নেয়।তাই ওর সাথে বন্ধুত্ব হতে আমারও খুব একটা সময় লাগেনি।পড়াশোনার ফাঁকে ভার্সিটির নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ানোটা একটা অলিখিত রুটিন ছিল আমাদের।
তেমনই একদিন ক্লাস সাসপেন্ড হওয়ায় ঠিক করলাম ফরেস্ট্রিতে যাব ঘুরতে।যদিও ইমতিয়াজের জ্বর থাকায় ও আসতে পারিনি আর ক্লাসের বাকিরা যে যার মতো ততক্ষণে বেড়িয়ে গেছে।তাই অগত্যা আমি একাই পা বাড়ালাম ফরেস্ট্রির পথে।
কিন্তু বিপদ যে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছিল তখনো বুঝতে পারিনি।
চারদিকে নাম না-জানা ফুলের গাছ আর পাখির ডাক শুনে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ভার্সিটি সীমানার বাইরে চলে এসেছি খেয়ালই করিনি।হঠাৎ আশেপাশের দু-চারজন লোকের দিকে চোখ পড়তে কেমন যেন অস্বস্তি শুরু হলো।রাস্তাটাও বেশ সুনসান। তাই তৎক্ষনাৎ ফেরার পথ ধরলাম।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধল মোড়ের মাথায় এসে।কোন রাস্তা দিয়ে যে এসেছিলাম উত্তেজনার বশে সেটা কিছুতেই মাথায় আসছিল না।জায়গাটার কিছুই আমি চিনি না আর কোন গাড়িও পাচ্ছিলাম না।প্রচন্ড ভয়ে কান্না পাচ্ছিল খুব।কি করব বুঝতে না পেরে কল দিলাম ইমতিয়াজকে।
তারপর কোথা থেকে যেন ঝড়ের বেগে ও হাজির!১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও উদভ্রান্তের মতো ছুটে এসে আমার হাত দুটো শক্ত করে বলল,”ভয় পাস না।আমি আছি তো।” কথাটা শুনে আমার সমস্ত ভয় যেন মুহূর্তেই উবে গেল। ওর চোখেমুখে ব্যগ্রতা,আমাকে আগলে রাখা সবকিছুর মধ্যে কেমন যেন অন্যরকম মায়া দেখতে পেলাম;যেন মনে হলো ওকে আমি অনেক দিন ধরেই চিনি।
সেদিন আমার দিকে বাড়িয়ে দেওয়া ইমতিয়াজের হাত দুটো আর কখনো ছাড়িনি।কারণ যে ধরে রাখতে জানে, তাকে কি আর ছাড়তে পারা যায়?
